Date : 2024-04-20

নারী স্বাস্থ্য সচেতনতায় ‘প্যাডউইম্যান’ কিরণ

পুরুলিয়া: চলচ্চিত্র শুধুই বিনোদনের জন্য নয়। সমাজ সচেতনতা গড়ে তুলতে এটি একটি বিশাল প্রচার মাধ্যম, কথাটা প্রমাণিত সত্য। বলিউডের রূপোলী পর্দায় ‘প্যাডম্যান’ ছবি নির্মাণ করে সারাদেশের প্রান্তিক মহিলাদের ঋতুস্রাব জনিত সচেতনতার বার্তা দিয়েছিলেন অক্ষয় কুমার। তার থেকেও একধাপ এগিয়ে পুরুলিয়ার ছোট্টো গ্রাম গেঙ্গাড়ার মেয়ে কিরণ। নেই কোন রূপোলী পর্দা, নেই ফেম বা প্রচার মাধ্যম, ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সব প্রতিকুলতা জয় করে গ্রামের মহিলাদের কাছে সে এখন বাস্তবের প্যাডউইম্যান ! ঋতুস্রাবের বিষয় মহিলা ও ছাত্রীদের সচেতন করে তুলতে টিফিনের টাকা জমিয়ে তা দিয়ে ন্যাপকিন কিনে বিতরন করল দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী কিরণ বাউরি।

গত ৭ মাস ধরে টিফিনের পয়সা জমিয়ে পুরুলিয়া-২ ব্লকের হুটমুড়া হরিমতি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের এই ছাত্রী কিরণ নিজের ও আসেপাশের গ্রামগুলিতে স্যানেটারি ন্যাপকিন বিতরন করে। পেশায় সামান্য দিন মজুরের মেয়ে সে তাই প্রাচুর্য দেখতে পায়নি কখনো। নিজের গ্রাম গেঙ্গাড়ার মা-বোনেদের সুস্থতার কথা মনে রেখে এই উদ্যোগ নিয়েছে কিরণ। সুস্থ সমাজ গড়ার লক্ষ্যে তার এই সিদ্ধান্তে গর্বিত এলাকাবাসী। তার এই উদ্যোগে অনুপ্রানিত হয়ে এলাকার মেয়েরা ঋতুস্রাবের সময় নিজেদের সুস্থ রাখতে এবং রোগ থেকে সচেতন থাকতে ন্যাপকিন ব্যবহারের আগ্রহী হয়েছে। হুটমুড়া হরিমতি উচ্চ বিদ্যালয়ের এই ছাত্রীর সমাজ সচেতনমূলক চেষ্টায় খুশি হয়েছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা। কিরণের প্রশংসা করে প্রধান শিক্ষিকা চৈতালি মুখার্জী বলেন, ‘প্রত্যন্ত গ্রামের একটি মেয়ে এভাবে নিজের টিফিনের পয়সা জমিয়ে স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনে গ্রামে গ্রামে গিয়ে মহিলা ও ছোট মেয়েদের দিয়ে সচেতন করার বার্তা দিয়ে বেড়ায় এটা সত্যিই অনন্য উদ্যোগ। এই বয়সে সুস্থ সমাজ গড়ার কারিগর হিসেবে নিযুক্ত হয়েছে সে। তার এই উদ্যোগ আমাদের গর্বিত করে তুলছে। আমরাও তাকে দেখে অনেক কিছু শিখতে পারছি।’ স্কুল সূত্রের খবর, স্কুলে কন্যাশ্রী ক্লাব ছাত্রীদের সচেতনতা ও উদ্যোগের বিষয়ে নজর দেওয়া হতো। সেখানেই দেখা গেছে কিরণকে দক্ষতার সাথে সচেতনতামূলক কাজ করতে।

গ্রামে গ্রামে গিয়ে মহিলাদের মধ্যে সচেতনতার বার্তা দিত কিরণ। কুসংস্কার আচ্ছন্ন ও পিছিয়ে পড়া সমাজে সচেতনতা গড়ে তুলতে কিরণ দুঃসাহসের সঙ্গে বলেছে, ‘প্রথমে সহপাঠীদের ন্যাপকিনের ব্যবহার করার পদ্ধতি শেখালেও আর্থিক কারণে স্কুলের ভেণ্ডিং মেশিন থেকে ন্যাপকিন কিনতে পারেনি অনেক ছাত্রী। তাই, টিফিনের টাকা জমিয়ে ওদের ন্যাপকিন কিনে দিতাম। এখন স্কুলের মেয়েদের ছাড়াও গ্রামে গ্রামে পরিচিত মহলে মেয়েদের ন্যাপকিন ব্যবহার পদ্ধতি সম্পর্কে বার্তা দিয়ে এবং কিছু ন্যাপকিন হাতে তুলে দিয়েছি।’ প্রত্যন্ত গ্রাম সমাজে এখনো কুসংস্কারের অন্ধকারে আচ্ছন্ন। অনেকেই ঋতুস্রাবে ন্যাপকিন ব্যবহার নিয়ে ভ্রান্ত ধারণার উপর নির্ভরশীল। তাদের স্বাস্থ্যের কথা মনে রেখে ঋতুস্রাবকে ঘিরে কুসংস্কারের বিরুদ্ধে বার্তা দেয় কিরণ যা গেঙ্গাড়া ও আসেপাশের মানুষকে সুস্থ জীবন দেবে বলে মনে করে কিরণ। নারী স্বাস্থ্য সংরক্ষণে গেঙ্গাড়া গ্রামের কিরণ যেন নতুন আলোর দিশা।