Date : 2024-03-28

বাংলা এই প্রবাদের আড়ালে আছে ভক্ত আর ভগবানের অনন্য কাহিনী

ওয়েব ডেস্ক: বাংলায় একটি প্রবাদ আছে “শবরী প্রতীক্ষা”। কিন্তু অনেকেই জানেন না কে এই শবরী। ফাল্গুন মাসে কৃষ্ণপক্ষের সপ্তমী তিথিতে নিঃশব্দে চলে যায় শবরী জয়ন্তী। যে শবরীর পরিচয়ই অনেকের কাছে অজ্ঞাত তার জন্মদিন আর কে বা খোঁজ নেবে। সাধারনত লোকশ্রুতি মেনে কারোর জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর তার দেখা মিললে তাকে আমরা শবরী প্রতীক্ষা বলি। এই শবরীকে নিয়ে রামায়নে বর্ণিত আছে ভক্ত ও ভগবানের অদ্ভুত কাহিনী। বহু তপস্যা করে ঈশ্বর লাভের কাহিনী আমাদের অনেকেরই জানা। কিন্তু শবরীর কাছে প্রতিদিন রামচন্দ্রের জন্য প্রতিক্ষাই ছিল তপস্যা। সমাজিক ভাবে অস্পৃশ্য ব্যাধের স্ত্রী শবরী মাতঙ্গ মুনির আশ্রমে থাকতেন। মাতঙ্গমুনির মৃত্যুশয্যায় দেখে শঙ্কিত হয়ে পড়েন শবরী। কারণ মুনির মৃত্যুর পরে ওই আশ্রমে সে একা হয়ে যাবে। মাতঙ্গমুনি তার উদ্বেগ কমিয়ে বলেন ক্রেতাযুগে রামচন্দ্রের আগমন পর্যন্ত তাকে অপেক্ষা করতে হবে এই আশ্রমে। মুনির কথা অনুসারে শবরী প্রতিদিন মাতঙ্গমুনির আশ্রম ফুলে সাজিয়ে অপেক্ষা করতেন তার পরম অতিথির জন্য। কিন্তু দিনের শেষ হয়ে যেত তবু রামচন্দ্র আসতেন না মাতঙ্গমুনির আশ্রমে।

সারাদিন প্রতিক্ষার পর নিরাশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়তেন শবরী। কিন্তু অপেক্ষার হাল ছেড়ে দেননি তিনি। পরদিন আবারও নতুন উদ্যম নিয়ে আশ্রম সাজিয়ে অপেক্ষা করতেন শবরী। এভাবে দিন যায় কাল যায়, বয়স বাড়ে শবরীর, তবু অবসান হয় না প্রতিক্ষার। অবশেষে জীবনের শেষ দিন মতঙ্গমুনির আশ্রমে উপস্থিত হন রামচন্দ্র। শবরী তাকে দেখে আনন্দে আপ্লুত হয়ে যান। আশ্রমে রামচন্দ্রকে আপ্যায়নের যথেষ্ট ব্যবস্থা করেন শবরী। কিন্ত ফল হিসাবে জাম খেতে দেন রামচন্দ্রকে। জাম দেওয়ার সময় শবরীর মনে হয় ফলগুলো টক হতে পারে, তাই প্রতিটি ফল শবরী নিজে আগে চেখে তবেই রামচন্দ্রকে খেতে দেন। এদিকে প্রতিটি ফল চেখে দেখার কারণে উচ্ছিষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু ভক্তের এত সেবা দেখে রামচন্দ্র উচ্ছিষ্টই গ্রহন করেন। এরপর মুক্ত হয়ে শবরী দেহত্যাগ করেন। বর্তমানে এই স্থানে দক্ষিণ ভারতের প্রসিদ্ধ শবরীমালা মন্দির অবস্থিত।