ওয়েব ডেস্ক: “আমারই চেতনার রঙে পান্না হল সবুজ , চুনী উঠল রাঙা হয়ে… আমি চোখ মেললুম আকাশে, জ্বলে উঠল আলো পূবে-পশ্চিমে…”
মেয়েরা রোজ লড়ে প্রকাশ্যে বা অন্তরালে। সেই মেয়ের জন্য একটা দিন নয় রোজ হোক নারী দিবস। শুধু মেয়ে বলে সংরক্ষিত কামরা বা লেডিস ফার্স্ট নয়, সমাজ বুঝুক ওদের শুধু মেয়ে নয় মানুষ বলে…
মেয়ে মানেই পটলচেরা চোখ, মেয়ে মানেই মেঘের মতো ঢেউ খেলানো চুল আর ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা মিষ্টি হাসি। তাই তো? বছর বাইশের বৈষ্ণবী পুভানেন্দ্রনও ঠিক তেমনই ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ জানতে পারেন শরীরে বাসা বেঁধেছে স্টেজ-৩ ব্রেস্ট ক্যান্সার। দমে যাননি। লড়াই করে ফিরে এসেছেন, ফের লড়েছেন। আজ বলেন, #kissedbycancer।
ক্যানসারের ঠোঁটে ঠোঁট রেখে মৃত্যু মুখে ব্যারিকেট গড়েছেন অবলীলায়। বিয়ের দিন নিজেকে কেমন দেখাবে, সে নিয়ে নানান রঙিন স্বপ্ন থাকে মেয়েদের। তাঁরও ছিল। কিন্তু অসুখ কেড়েছে সৌন্দর্য ,তাতেও দমেননি তিনি। সেই রূপেই নব বধূ সাজে সেজেছেন তিনি।
সমাজ বলে, এই সময় মেয়েদের একটু সাবধানে থাকতে হয়। এই সময় মানে? গর্ভাবস্থা। ছকভাঙা নারী আলিশিয়া মোন্টানো। গর্ভবতী অবস্হায় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করেন শুধু নয়। যোগ্যতার বলে ছিনিয়ে নেন নিজের জয়। দৃশ্যত সমাজের চোখে তেমন অ্যাটরাকটিভ নন বোধহয়। কিন্তু তিনি জয়ী। আর জয়ের চেয়ে সুন্দর কিছু হয় নাকি?
চাকরি করলে আবার সংসার হয় নাকি? স্বামী, সন্তান, পরিবারের দায়িত্ব নেবে কে? অস্ট্রেলিয়ান সাংসদ লারিশা ওয়াটারস্, সংসদে দাঁড়িয়ে নিজের সন্তানকে স্তন্যপান করাতে দ্বিধা বোধ করেন না। কারণ তিনি মা। এমন লক্ষ লক্ষ মা আছেন, তাঁদের শুধু নারী দিবসে নয় রোজ কুর্ণিশ।
যে মেয়েটা পাঁচটা বাড়ির বাসন মেজে খরচ জোগায় মাস কাবারি চাল আর ছেলের স্কুলের খরচ। সেই মেয়েটাই রাতবিরেতে মাতাল স্বামীর মার খায় মদের টাকা না দিতে চেয়ে। সেই মেয়েটাই রক্ত মুছে, ঘাম মূুছে, ঘেন্না মুছে ফের লড়াই করে। রান্নাঘরে, আতুড়ঘরে একাই সে যুদ্ধ করে।
স্বাধীন ভারতের প্রথম মহিলা অতিরিক্ত সলিসিটার জেনারেল ইন্দিরা জয় সিং। খৃষ্টান মহিলাদের ডিভোর্স দেওয়ার অধিকার, হিন্দু ডিভোর্সি মহিলার সন্তানকে একা মানুষ করা ও মায়ের পরিচয়ে বাঁচার অধিকার, কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে কোটরুম কাঁপিয়েছেন এবং জিতেছেন। তাঁর নামেই আদালত অবমাননার অভিযোগ। তাঁর হয়ে আদালতে সওয়াল করছেন খোদ তাঁর স্বামী বর্ষীয়ান আইনজীবী আনন্দ গ্রোভার।
বিচারপতির সামনে আইনজীবী গ্রোভার বলেন, মাই লর্ড আমি শ্রীমতী জয় সিং এর হয়ে এই মামলা লড়ছি। বিচারক পাল্টা প্রশ্ন করছেন কোন জয় সিং? ইন্দিরা জয় সিং? পাশ থেকে অ্যাটর্নি জেনারেল কে.কে. ভেনুগোপাল মুচকি হেসে বলেন, আরে বলুন না গ্রোভার সাহেব, আপনার স্ত্রী। এই মন্তব্যে গর্জে ওঠেন ইন্দিরা জয় সিং। স্পষ্ট জানিয়ে দেন, “মিস্টার এটর্নি জেনারেল আপনি আমাকে একজন ব্যক্তি হিসেবে দেখুন আর কথাটা প্রত্যাহার করুন”। কারোর মেয়ে, কারোর স্ত্রী বা কারোর মা নয়, নিজের পরিচয়ে নারী আজ স্বয়ং সম্পূর্ণা।