Date : 2024-04-23

হৃদয়ে লেখো নাম ,সে নাম রয়ে যাবে…

ওয়েব ডেস্ক: কথায় বলে ভালোবাসার একটা আলাদা শক্তি থাকে। কিন্তু তা বলে এও কি সম্ভব? বিচ্ছেদের প্রায় ৭২ বছর পর দেখা হতে পারে মনের মানুষের সঙ্গে? তবে নারায়ণন-সারদার গল্প শুনলে আপনি বিশ্বাস করতে বাধ্য। তখন দেশভাগের অত্যাচারের আগুনে উত্তাল ভারতবাসী। ১৯৪৬ সাল,কৃষক আন্দোলনের দাবানলে ছারখার হয়ে যায় নারায়ণন-সারদার দাম্পত্যজীবন।

এত বছর পর ৮৯ তে পা দেওয়া প্রথম স্ত্রী সারদার সঙ্গে দেখা হলো ৯৩-এর নারায়ণনের,এত বছরের ব্যবধানে তখন কারোর মুখেই কোনো কথা নেই। সেই সময় পুলিশ এসে ভেঙে দিয়েছিল তাদের দাম্পত্য জীবন, তাদের সুখের সংসার। আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার অপরাধে নারায়ণন ও তার বাবা থালিয়ান রমন নাম্বিয়ারকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। গ্রেফতারের পর দু’জনকেই জেলে পাঠানো হয়। এই ঘটনার মাত্র এক বছর আগে ১৩ বছরের সারদার সঙ্গে বিয়ে হয় ১৭ বছরের নারায়ণনের। দুজনেরই যৌবনে পাক ধরেছে, চামড়ায় বলিরেখা স্পষ্ট। দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ। তবুও এক পলক দেখেই যেন সব স্মৃতি উস্কে গেল মুহূর্তে। কথা হল। যাওয়ার আগে সারদাকে নারায়ণন বললেন, ‘আজ আমি চলি’।

প্রত্যুত্তরে সারদা অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন মেঝের দিকে। সেখানেই রূপকথার ইতি। ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতে নারায়ণন ছিলেন একজন বিপ্লবী। কেরলের কাভুম্বাইয়ে কৃষক আন্দোলনের অন্যতম সেনানি ছিলেন তিনি। সেই সময় তাদের যুদ্ধ ছিল মূলত সামন্তবাদীদের বিরুদ্ধে। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক পরিকাঠামো-তে দাঁড়িয়ে যে ধরনের প্রতিবাদ আন্দোলনের প্রয়োজন ছিল, সেই তাগিদেই বিপ্লবী হয়ে ওঠেন নারায়ণন। সেই সময়ই মালাবার স্পেশাল পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন তিনি।

এরপর দীর্ঘ ৮ বছর কন্নুরের কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারেই বন্দী ছিলেন তিনি। মুক্তি পান ১৯৫৪ সালে। কারাগার থেকে বেরিয়ে এসে দেখেন তার স্ত্রীর অন্যত্র বিয়ে হয়ে গেছে। পরে তিনিও দ্বিতীয় বিয়ে করেন। নারায়ণন ও সারদার দ্বিতীয় পক্ষের সন্তানরাই মূলত নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে দু’জনের সাক্ষাতের বন্দোবস্ত করেন। এই ডিসেম্বরেই কন্নুর জেলার ভার্গাবন শহরে সারদার বাড়িতে এসে তার সঙ্গে দেখা করেন নারায়ণন। নারায়ণনের ভাইঝি সান্তা এই গোটা গল্পই চিত্রনাট্য হিসেবে তুলে ধরেছেন । হয়তো বিদায় বেলায় দুজনই ভাবছিলেন আর তাঁরা অস্ফুট স্বরে বলছিলেন, “এ দেখাই শেষ দেখা নয় তো…”