ওয়েব ডেস্ক: হোলি মানে রঙিন উৎসবে পাড়ায় পাড়ায় উঠে আসে একটুকরো শান্তিনিকেতন। অন্যদিকে নদিয়া জেলার নবদ্বীপে পালিত হয় শ্রী চৈতন্যর জন্মতিথি। রঙ মাখা ছবির কারুকার্যে ভরে যায় সোশ্যাল মিডিয়া, কিন্তু হোলি বা দোল উৎসবের পূর্ব ইতিহাস কি সেই প্রশ্নের উত্তর অনেকের কাছেই থাকে না।
খুব চেষ্টা করলে কেউ হয়েতো বৃন্দাবনে রাধা কৃষ্ণের হোলি খেলার বৃত্তান্ত উল্লেখ করবেন। রাধা-কৃষ্ণ কি আবির খেলার শ্রোষ্টা? না, হোলি উৎসবের সঙ্গে জরিত পুরাণের বিশেষ কিছু কাহিনী। দৈত্যরাজ হিরণ্যকশিপুর কাহিনী কম বেশি সকলেই জানি। আর সেই অসুর বংশে জন্ম নিয়েই প্রহ্লাদ ছিলেন পরম ধার্মিক। তাঁকে অসংখ্যবার হত্যার চেষ্টা করেও সফল হননি হিরণ্যকশিপু।
পরিস্থিতি বুঝে হিরণ্যকিশপুর বোন হোলিকা প্রহ্লাদকে কোলে নিয়ে আগুনে প্রবেশের সিদ্ধান্ত নেন। হোলিকা এই অগ্নি থেকে ক্ষতি না হওয়ার বর প্রাপ্ত ছিলেন। কিন্তু অন্যায় কাজে শক্তি প্রয়োগ করে হোলিকা। প্রহ্লাদকে নিয়ে সে আগুনে প্রবেশ করলে বিষ্ণুর কৃপায় প্রহ্লাদ অগ্নিকুণ্ড থেকেও অক্ষত অবস্থায় বেরিয়ে আসে। ক্ষমতার অপব্যবহার করায় হোলিকার বর নষ্ট হয়।
বিষ্ণুর অভিশাপে হোলিকা অগ্নিকুন্ডে পুড়ে নিঃশেষ হয়ে যায়। এই হোলিকার থেকেই হোলি শব্দটির উৎপত্তি। ভগবান বিষ্ণু দ্বাপর যুগে শ্রীকৃষ্ণ অবতার নিয়ে বসন্ত পূর্ণিমার দিন কেশি নামক অত্যাচারী অসুরকে বধ করে সমগ্র বৃন্দাবনকে রক্ষা করেন। সেই আনন্দে হোলি উৎসব পালিত হয়েছিল। মধ্যযুগের চিত্রশিল্প ও সঙ্গীতে অন্যতম প্রধান বিষয় রাধা-কৃষ্ণের হোলি উৎসব। রাধা-কৃষ্ণকে কেন্দ্র করে হোলির যে অতি বৈষ্ণবীয় আচার তার পাল্টা প্রশ্ন রয়েছে।
শ্রীকৃষ্ণের জীবন ইতিহাসের সঙ্গে হোলি উৎসব সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলে মনে করেন অনেকেই। ইতিহাস বলে, শ্রীকৃষ্ণ মাত্র ১০ বছর বয়সে বৃন্দাবন ত্যাগ করে মথুরা চলে যান, এরপর কখনও ফিরে যাননি সেখানে। অন্যদিকে বেশকিছু ঐতিহাসিক রাধার অস্তিত্বকেই অস্বীকার করেছেন। শুধুমাত্র গর্গ সংহিতায় রাধার উল্লেখ পাওয়া যায় শ্রীকৃষ্ণের সাধন সঙ্গিনী হিসাবে। এছাড়া নারদ পুরান, ভবিষ্য পুরানে দোলপূর্ণিমার উল্লেখ আছে।
অঞ্চল ভেদে হোলি বা দোল উৎসব পালনের ভিন্ন ব্যাখ্যা আছে। দোল উৎসবের সঙ্গে সংপৃক্ত লোককথার ভিন্নতা থাকতে পারে কিন্তু রীতি নীতি একই থাকে ।বাংলায় যাকে ‘দোলযাত্রা’ বলে পশ্চিম ও মধ্যভারতে সেটাই ‘হোলি’। রঙের উৎসবের আগের দিন ‘হোলিকা দহন’ হয় অত্যন্ত ধুমধাম করে। শুকনো গাছের ডাল, কাঠ ইত্যাদি দাহ্যবস্তু অনেক আগে থেকে সংগ্রহ করে সু-উচ্চ একতা থাম বানিয়ে তাতে অগ্নি সংযোগ করে ‘হোলিকা দহন’ হয়।
বাঙলায় যাকে নেড়াপোড়া বা চাঁচর বলা হয়। এরপর রঙের উৎসবে মেতে ওঠে সকলে । বাংলায় দোলকে ঋতুচক্রের শেষ উৎসব বলা হয়। পাতাঝরার সময়, বৈশাখের প্রতীক্ষা। এই সময় পড়ে থাকা গাছের শুকনো পাতা, তার ডালপালা একত্রিত করে জ্বালিয়ে দেওয়ার মধ্যে এক সামাজিক তাৎপর্য রয়েছে।
পুরনো জঞ্জাল, রুক্ষতা, শুষ্কতা সরিয়ে নতুনের আহ্বান হয় এই হোলি। বাংলায় দোলের আগের দিন ‘চাঁচর’ উদযাপনকে এভাবেই ব্যাখ্যা করা হয়। সর্বশেষে বলা যায় ,সামাজিক ছুঁতমার্গের উর্ধে উঠে বৈষ্ণব ভক্তি আন্দোলনের প্রচারক শ্রী চৈতন্য দেবের জন্ম তিথি দোলপূর্ণিমা। তাই একে জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে মিলন উৎসব বলা চলে।