ওয়েব ডেস্ক: ‘বনমালী তুমি পরজনমে হইও রাধা’। পথটা সোজা ছিল না। একজন রুপান্তরকামীর পথটা হয়তো আরও কন্টকপূর্ণ।
‘আমি মেয়ে হতে চাই’, কথাটা মেনে নিতে পারেনি ছা-পোশা বাঙালি মধ্যবিত্ত পরিবার। মনে মনে খুব কষ্ট পেলেও, নিজের ইচ্ছের স্রোতে ভেসে গিয়েছিলেন তিনি। নিজের ঘর তো বটেই, তার সঙ্গে সমাজও প্রতিটা পদক্ষেপে তার দিকে ছুঁড়ে দিয়েছিল ব্যঁকা দৃষ্টি, কটুক্তি।
কখনও মাথায় পাগড়ি, কখনও আবার শাড়ির আবরণে ঢেকেছিলেন নিজেকে। শেষদিন পর্যন্তও মাথা নোয়াননি লিঙ্গ বৈশম্যের কাছে। শুধুই এগিয়ে গিয়েছিলেন বুক ভরা অভিমান, না পাওয়া স্বিকৃতি আর প্রিয়জনদের প্রত্যাখ্যান নিয়েই।
কেটে গেছে ৬টা বছর। আজ নেই ঋতুপর্ণ ঘোষ। কিন্তু বাংলা চলচ্চিত্রে আজও সেই ঋতুর দমকা বাতাস । ইন্ডাস্ট্রির প্রতিটা মানুষ মনে রেখেছে তাকে। কাজের পাশাপাশি তার সাহসকে। সবার মনে আছে শাড়ি পড়া সেই মেয়ে হয়ে ওঠার ঋতুবেলা।
যে রোজ স্বপ্ন দেখতো নতুন একটা পৃথিবীর। ভালোবাসার পৃথিবীর, নিজের পরিচয় বাঁচার পৃথিবীর। বিজ্ঞাপন সংস্থা থেকে শুরু করে সিনেমার স্ক্রিপ্ট ,নিজের পরিচয় রেখে গেছেন আপন সৃজনশীলতায়। তার ১১ বছরের কর্ম জীবনে এই বাংলা সিনেমাকে দিয়ে গেছেন উনিশে এপ্রিল, দোসর, দহন, বাড়িওয়ালির মতো আরও অনেক উপহার।
‘চিত্রাঙ্গদা’ তে তিনি ফুটিয়ে তুলেছিলেন নিজের জীবন যুদ্ধের চিত্রনাট্য। অনেক লড়াই, অলেক পাওয়া না পাওয়ার মাঝেও জীবনটাকে নিজের মতো বাঁচার চেষ্টা, ভালোবাসার মানুষের হাতটা বুকের মাঝে রেখে শুধু এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দুচোখে।
সত্যিই কি অনেক বড় চাওয়া ? শেষ দিন পর্যন্ত তাঁর দর্শককুল কি মেনে নিতে পেরেছিল একজন রুপান্তরকামী চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বকে ? বোধহয় না। আর সেটা বুঝতে পেরেই কি এই অন্তর্ধান?
বড্ড তাড়াতাড়ি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন ঋতু দা। এবার কি ঋতু দা বাঁচে থাকবেন তাঁরমত? জানতে ইচ্ছে করে। তবে মনে হয় ‘জীবন মরণের সীমানা ছাড়ায়ে’ এখন ঋতু দা ভালোই আছেন। আছেন নিজের দেশে, তৃতীয় লিঙ্গ নয় লাইট ক্যামেরা অ্যকশনের দুনিয়া ঋতু দা হয়ে উঠতে পেরেছেন ‘ফার্স্ট পার্সেন’।