Date : 2024-04-20

জামাই ঠকায় জলভরা, কিভাবে?

ওয়েব ডেস্ক: বাঙালীর বারোমাসে তেরো পার্বন শুধু কথার কথা নয়। রীতিমতো উৎসব করে তোরো পার্বন উজ্জাপন করে বাঙালি। আর সব পার্বনেই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তেলে ঝালে একান্নপদের পাত পড়ে বাঙালির ঘরে। ফুলকো লুচি থেকে কচি পাঠার ঝোল এই সব কিছুর সঙ্গেই দোসর কিন্তু একজনই , হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন, জিভে জল আনা একশো রকম মিষ্টির তালিকা।

উৎসবের দিনে শুধু পাতে আর জিভের তৃপ্তি করেই মিষ্টির কেরামতি শেষ নয়। বাঙালির ইতিহাস ঐতিহ্যের রীতিমতো দ্বারপাল মিষ্টি। কিছুদিন আগেই ওড়িশার সঙ্গে রীতিমতো লড়াই করে বাংলার জন্য আন্তর্জাতিক সম্মান ছিনিয়ে এনেছে রসগোল্লা। আসলে মিষ্টি তৈরির সঙ্গে সঙ্গে রয়েছে এক একটা অদ্ভুত প্রচলিত গল্প কথা যা মিষ্টি ও বাংলা দুইয়ের ইতিহাসকেই সমৃদ্ধ করেছে।

বর্ধমানের নাম বললে চোখের সামনে যেমন মিহিদানা,সীতাভোগ ভেসে ওঠে তেমন হুগলীর চন্দননগরের নাম বললেই জিভে জল আসে জলভরা সন্দেশের কথা ভেবে। চন্দনগরে পৌঁছলে সব মিষ্টির দোকানে জল ভরা পাবেন। কিন্তু চন্দননগরের সূর্য মোদকের হাতেই প্রথম তৈরি হয়েছিল জলভরা সন্দেশ। তাও কিনা জামাই ঠকাতে! কি আজব কাণ্ড ভাবুন।

ভদ্রেশ্বরের তেলেনীপাড়ার বন্দ্যোপাধ্যায় জমিদার বাড়ি থেকে হঠাৎ নির্দেশ আসে এমন মিষ্টি বানাতে জামাই ঠকানো হবে। বাড়ির নতুন জামাইকে প্রথম ষষ্ঠীতে ঠকানোর জন্য ময়রার সঙ্গে রীতিমতো ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হল জমিদারের পরিবারের মেয়ে বউরা।জমিদার বাড়ির মান ও মন রাখতে ষড়যন্ত্র করলেন যে ময়রা তার নাম সূর্যমোদক। জমিদার বাড়ির মেয়েরা বলল, এমন মিষ্টি বানাও যাতে মিষ্টি মুখে দিয়ে একদম হাঁদাগঙ্গারাম হয়ে যায় জামাই।

সময়টা ১৮১৮ সাল। জামাই ষষ্ঠীর দিনে বাড়ির নতুন জামাইরা বাবু হয়ে পাত পেড়ে বসতেই থালায় চলে এলো প্রকান্ড একটা ক্ষীরের তালশাঁস সন্দেশ। জৈষ্ঠ মাসের দুপুর, আম, কাঁঠালের গন্ধে মঁ মঁ করছে জমিদার বাড়ির অন্দরের হেঁসেল। থালা থালা ফল মিষ্টি কেমন সাবড়ে দিচ্ছে জামাইরা।

তারই মধ্যে কড়া পাকের তালশাঁস, আহা! ভেবে কামড় বসাতেই ঘটল বিপত্তি। প্ল্যান সাকসেস, তালশাঁসের ভিতর থেকে গরদের ধুতি, পাঞ্জাবী ভাসিয়ে দিল লুকিয়ে থাকা গোলাপ জল। সে একেবারে মাখামাখি কাণ্ড! সেই থেকেই ভরা জৈষ্ঠে জামাই ঠকাতে তালশাঁসের জন্ম। মিষ্টি তৈরির মূল উপাদান ছানা আর চিনি। মিষ্টির ভেতর গোলাপ জল নাকি আসে কনৌজ থেকে।

প্রথমে তালশাঁসের ছাঁচে সন্দেশ বানিয়ে তাতে আঙুল দিয়ে চোরা কুঠুরি বানিয়ে তাতেই গোলাপজল রেখে দিয়ে মুখ বন্ধ করে দিলেই তৈরি হয় জামাই ঠকানোর মিষ্টি। আপনার পাতে যদি জামাই ষষ্ঠীতে এই মিষ্টি পড়ে, ঘাবড়াবেন না। ঠকাতে নয় ভালোবেসেই দিয়েছেন শাশুড়ি মা, শুধু একটু সামলে খাবেন।