ওয়েব ডেস্ক: স্প্যানিশ ভাষায় “নিনো” মানে বালক বা ছেলে। আর “এল” কথার অর্থ দুষ্টু। অর্থাৎ দুষ্টু বালক, হ্যাঁ, এই আখ্যাই দেওয়া হয়েছে পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরীয় এই বাতাসকে। কিন্তু দুষ্টু বালক সে কি আর এক জায়গায় বসে থাকে! গত দেড় মাসে বর্ষার ছবিটা দক্ষিণবঙ্গে খুবই দুর্বল, তার কারণ এই দুষ্টু বালক। “এল নিনো”-র প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গে দুর্বল হয়েছে মৌসুমী বায়ু, সেই কারণেই বৃষ্টির দেখা নেই। অন্যদিকে হিমালয়ের উপর গভীর নিম্নচাপের কারণে প্রবল বর্ষণে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে উত্তর ভারত জুড়ে।
আবহাওয়া দফতরের বক্তব্য, “এল নিনো” ক্রমশ দুর্বল হতে শুরু করেছে। উল্লেখ্য, প্রশান্ত মহাসাগরীয় সামুদ্রিক তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে “এল নিনো”-র সৃষ্টি হয়। গত ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশে যথেষ্ট গরম ছিল। তার প্রভাবেই অস্বাভাবিক হারে বাড়তে শুরু করে দেয় ওই মহাদেশের পশ্চিম উপকূল লাগোয়া সমুদ্রের জলের তাপমাত্রা। এর ফলে পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় ও ভূমধ্যসাগরীয় জ্বলীয় বাস্প ওই অঞ্চলের দিকে চলে যায়।
ফলে বৃষ্টির ঘাটতি সৃষ্টি হয় পূর্বের দেশগুলিতে। এর ফলে দক্ষিণ-পূর্বের দেশগুলিতে তাপমাত্রা ক্রমশ বাড়তে থাকে এবং বৃষ্টির ব্যাপক ঘাটতির সৃষ্টি হয়। এতদিন এই পরিস্থিতি বহাল থাকায় দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে বৃষ্টির ঘাটতি তৈরি হয়েছে প্রায় ৭০ শতাংশ।
আপাতত হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আলিপুর হাওয়া অফিস। বিদেশি বেশ কিছু আবহাওয়া সংস্থা ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে “এল নিনো”-র প্রভাব ক্রমশ কাটতে শুরু করেছে। ফলে দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে এবার বৃষ্টির পরিমান ক্রমশ বাড়বে। যদিও দক্ষিণবঙ্গের বেশ কিছু অঞ্চলে বৃষ্টির পরিমান কিছুটা হলেই বৃদ্ধি পেয়েছে।
আবহাওয়া দফতরের মত, জুলাই মাসের শেষের দিকে দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির ঘাটতি ক্রমশ কমবে। বৃষ্টির ঘাটতি কমার জন্য ইতিমধ্যে মেদিনীপুরের উপর নিম্নচাপ তৈরি হতে শুরু করেছে। এর ফলে জুলাই মাসের শেষের দিকে দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে বৃষ্টির ঘাটতি প্রায় ৪৫ শতাংশ কমে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
যদিও হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস এল নিনো-র প্রভাব সম্পূর্ণ কেটে না যাওয়া পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমানে বৃষ্টি হওয়া সম্ভব নয়। এদিকে অনাবৃষ্টির কারণে চাষের ব্যাপক ক্ষতি দেখা দিয়েছে মুর্শিদাবাদ, বীরভূমে। বর্ধমানে ধানচাষের ক্ষেত্রেও অনাবৃষ্টির প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। তাই দুষ্টু বালকের খুনসুটি থেমে কবে বর্ষার মুখ দেখতে পাবে, দক্ষিণের জেলা তাই এখন আকাশের দিকে তাকিয়ে দিন গুনছে।