ওয়েব ডেস্ক: হিবাকুসা! হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন এটা জাপানি শব্দ, যার অর্থ বিষ্ফোরণে আক্রান্ত মানুষ। যন্ত্রণা আর চোখের জলই যাদের একমাত্র অবলম্বন। মার্কিন বর্বরতার নৃশংসতম ক্ষতচিহ্ন বহন করছেন এই ‘হিবাকুসারা। হিরোশিমা-নাগাসাকির বীভৎসতার সময় থেকে পরবর্তী বংশ পরম্পরায়। কারা এই ‘হিবাকুসা?’ সংজ্ঞা নির্ধারিত ‘দ্য অ্যাটমিক বোম্ব সারভাইভারস রিলিফ’ আইনে। যারা বোমা বিস্ফোরণস্থলের সামান্য কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে ছিলেন। পরমাণু বোমা বিস্ফোরণের দুই সপ্তাহের মধ্যে যারা বিস্ফোরণস্থলের দুই কিলোমিটারের মধ্যে ছিলেন। যারা বিস্ফোরণ নিঃসৃত তেজস্ক্রিয়তায় আক্রান্ত।
এ তিন অবস্থার মধ্যে থাকা গর্ভবতী মহিলারা। জাপানে এরাই আইনমতে হিবাকুসা। এদের বেশ কয়েকজন আবার ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কোরিয়াতে। সরকারি কিছু অর্থ সাহায্য পেয়ে থাকেন এই হিবাকুসারা। আর প্রতিবছর দগদগে ক্ষতের সেই দিন তাদের স্মরণ করতে আসে ৬ আগস্ট।
রাষ্ট্রনায়কদের ক্ষমতার আকাঙ্খা কতটা নগ্ন রূপ নিতে পারে জাপানের হিরোসিমা তার উদাহরণ হয়ে আছে বিশ্বের কাছে। ১৯৪৫ সালে আজকের দিনে জাপানের এই শহর দেখেছিল পারমানবিক অস্ত্র কতটা ক্ষতিকারক হতে পারে।
জাপানের হিরোসিমার আকাশে মার্কিন বোমারু বিমান ‘এনোলা গে’ পরমানু বোমা বর্ষন করে। ৬০ কিলোগ্রাম ওজনের ইউরেনিয়াম ২৩৫ সমৃদ্ধ সেই বোমার নাম ছিল ‘লিটল বয়’। উদিত সূর্যের দেশের ভোরের আকাশ সেদিন কুন্ডুলি পাকানো ছাতার মতো ধোঁয়ায় ঢেকে গেছিল।
সকাল সকাল জীবিকার খোঁজে ছুটে চলা মানুষগুলি তখনও জানতে পারেনি সভ্যতা ও বিজ্ঞানের যৌথ ষড়যন্ত্রে ক্ষমতালোভী মানুষেরা সেদিন শক্তি পরীক্ষার খেলায় মেতে উঠবে, কারণ বুঝে ওঠার আগেই শহরে ৮০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। তেজস্ক্রিয়তার প্রভাবে পরে ওই শহরেই মৃতের সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ পর্যন্ত ছাড়িয়ে যায়।এভাবে নিরপরাধ মানুষের জীবনে নেমে আসবে ষড়যন্ত্রের কোপ।
প্রতিবাদের বহ্নিশিখা ধরিয়ে আজও সভ্যদেশের মানুষ পা মেলায় হিরোসিমা দিবসে। প্রসঙ্গ হল, ঘটনার ৭৪ বছর পরেও কেন এই দিনটার কথা স্মরণ করে বিশ্ববাসী? করবে নাই বা কেন, সেই দিনের পর বেঁচে থাকা মানুষের শরীরে এখনও থেকে গেছে তেজস্ক্রিয়তার ক্ষত। এখনও সেই শহরেই জন্ম নেয় বিকলাঙ্গ শিশু, প্রভাবিত সেখানকার জলবায়ু। ১৯৪৯ সালের পর জাপানের হিরোসিমা শহরকে ঘোষণা করা হয়েছিল শান্তির শহর হিসাবে। যুদ্ধ বিরোধী প্রচার শুরু হয়েছিল বিশ্বজুড়ে, কিন্তু তা কি আদৌ টিকেছে?
নাহ, এরপরেও পরমানু শক্তিধর দেশগুলি পরমানু অস্ত্র তৈরির প্রতিযোগিতায় এগিয়ে চলেছে। বিধ্বংসী অস্ত্র তৈরি করতে থেমে নেই কোন দেশই। ৬ আগস্ট দিনটি নামেই স্থান নিয়ে আছে ইতিহাসের পাতায়। হিরোসিমার ভয়াবহতা নিয়ে বিশ্বজুড়ে পাঁচটি এমন ছবি আছে যা দেখে শিউরে উঠেছেন দর্শকরা। দ্য বিগিনিং অর দ্য এন্ড (১৯৪৭), ফ্যাঙ্কেস্টাইন কনকুয়ার্স দ্য ওয়ার্ল (১৯৬৯), ফ্যাট ম্যান অ্যান্ড লিটিল বয় (১৯৮৯), রাপসোডি ইন আগস্ট (১৯৯১), লিটিল বয় (২০১৫) এই ছবিগুলি এখনও পর্যন্ত বিশ্বের কাছে পারমানবিক বিষ্ফোরণের ভয়াবহ স্মৃতির বার্তা হিসাবে রয়ে গেছে।