ওয়েব ডেস্ক: “মৃত্যু যেদিন বলবে, ‘জাগো, প্রভাত হল তোমার রাতি’-
নিবিয়ে যাব আমার ঘরের চন্দ্র-সূর্য দুটো বাতি।
আমরা দোঁহে ঘেঁষাঘেঁষি
চিরকালের প্রতিবেশী,
বন্ধুভাবে কণ্ঠে সে মোর জড়ায়ে দেবে বাহুপাশ,
বিদায়কালে অদৃষ্টেরে করে যাব পরিহাস।”
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, “মৃত্যুতেই জীবনের সর্বোচ্চ পরিপূর্ণতা”। আর এই সত্যই বারবার উঠে এসেছে তার সৃষ্টি শৈলী ও কাব্যধারার ছন্দে।২২ শে শ্রাবণ মানে অঝোর বৃষ্টিস্নাত দিনটি মনে করায় বিচ্ছেদের কাহন। এই মৌসুমি মাসই কবিগুরুর প্রিয়তম ঋতু ছিল। বিরহের কাল বর্ষাকে নিয়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছিল অদ্ভুত অনুভুতি। তাই এই ঋতুকেই নিয়তি হয়েতো বেছে নিয়েছিল কবির অমৃতলোক যাত্রার সময় হিসাবে। অঝোর বৃষ্টি আর একরাশ বিরহের অশ্রুধারা মিলে মিশে গিয়েছিল এই দিনেই আজ থেকে ৭৯ বছর আগে।
যতটা সমারহে বাঙালি ২৫ বৈশাখ পালন করে ততটা জৌলুস থাকে না ২২ শে শ্রাবণ পালনে। এমন মহাজীবনের আবির্ভাব সব সময় ঘটে না। তাই কবির আপন তীর্থ শান্তিনিকেতন ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মহাপ্রয়াণের স্মৃতি রোমন্থন করে বাঙালি।
কবিগুরুর ৭৮ তম প্রয়াণ দিবসে সকাল থেকেই শান্তিনিকেতনে একাধিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে রবীন্দ্র স্মৃতিচারণের আয়োজন করেছেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকরা। দেশ-বিদেশের অসংখ্য রবীন্দ্র অনুরাগীর এই দিনটিতে গন্তব্য থাকে শান্তিনিকেতন।
শহর কলকাতা এমনকি জেলায়ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে স্মরণ করা হয় তাঁকে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ২২ শে শ্রাবণ বিদায় নিয়েছিলেন আমাদের মধ্যে থেকে কিন্তু সেই ২২ শে শ্রাবণ দিনটি ফিরে আসে বিরহ স্মৃতি বহন করে। বিষাদ সঙ্গীত মুর্ছনায় বোলপুরের আকাশ-বাতাস জুড়ে এই দিনটি বিশেষ অনুভুতির সৃষ্টি করে। শান্তিনিকেতনে এই দিনটি কবি তর্পনের দিন। বাঙালির আত্মবিকাশে এই দিন নতুন করে রবীন্দ্র ভাবনায় সমৃদ্ধ করে। ২২ শে শ্রাবণের সঙ্গে শান্তিনিকেতনের বৃক্ষরোপন উৎসবের যোগসূত্র আছে।
শান্তিনিকেতনে প্রথম বৃক্ষরোপন উৎসব সূচনা করেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৯৪০ সালের ৩ সেপ্টেম্বর শান্তিনিকেতনে বৃক্ষরোপণ ও বর্ষামঙ্গল অনুষ্ঠিত হয়েছে। ‘এসো এসো ও গো শ্যামছায়াঘন দিন’— এটাই ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত শেষ বর্ষা সঙ্গীত। এরপর ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট, বাংলার ২২ শে শ্রাবণ তারিখে ইহলোক ত্যাগ করেন কবি।
এর মাসখানেক সেই বছর বৃক্ষোরোপণ উৎসবে তত্বাবধানের দায়িত্বে ছিলেন কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ছাতিমতলার কাছে সেদিন কবিকন্যা মীরা দেবী বৃক্ষরোপন করেন। বৃক্ষরোপন যেন জীবনের নব-দিগন্ত উন্মোচন করে, সম্ভাবনার এ এক অন্যতম প্রকাশ। বার বার ফিরে আসে কবির প্রিয়ঋতু বর্ষা, বৃক্ষরোপন উৎসব, আর তারই মাঝে প্রতিটি রবীন্দ্রপ্রেমীর অন্তরের প্রকাশিত হয় মহাজীবনের জয়গাঁথা, রবীন্দ্রভাবনায় নতুন করে সমৃদ্ধ হয় চেতনা।