ওয়েব ডেস্ক: মুখ্যমন্ত্রীত্ব পাওয়ার পর থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর গাড়ির সামনে পাইলট কার, জ্যামার থাকা নিয়ে ঘোর আপত্তি জানিয়ে এসেছেন। দুর্গাপুজোর অনেক আগে থেকেই তিনি উদ্বোধন সেরে নেন যাতে কোথাও তাঁর উপস্থিতিকে ঘিরে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি না হয়। কিন্তু পুজোর ভিড়ে লালবাতি নিয়ে ঘুরে বেড়ায় এমন গাড়ির আরোহীদের জন্য অনেক সময়ই সমস্যা হয়। তাই পুজোর আগেই লালবাতি ব্যবহার, পুজো প্যান্ডেলে ভিআইপি পাস ইত্যাদি বিশেষ সুযোগ সুবিধা বন্ধ করার আর্জি জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
সোশ্যাল মিডিয়ার “দিদিকে বলো” কর্মসূচীর ফেসবুক পেজে ভিআইপি পাস বন্ধ করা নিয়ে প্রচারও চালিয়েছেন তিনি। পুজোর ভিড়ে সকলের সমানাধিকার, পুজোর প্যান্ডেলে প্রবেশের ক্ষেত্রে যাতে কোন বিশেষ নিয়ম না থাকে তাই পুজোর “ভিআইপি পাস” উঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে সেক্ষেত্রেও সূক্ষ চাল রয়েছে। বৃদ্ধ, অসুস্থ, মানসিক ভারসাম্যহীনদের কথা মাথায় রেখে পুজোর “পাস” থেকে শুধু “ভিআইপি” শব্দটাই উঠে যাচ্ছে।
তার বদলে যুক্ত হচ্ছে গেস্ট’, ‘মেম্বারশিপ’ অথবা ‘ক্লাব ইনভাইটি’-র মতো নতুন নতুন শব্দ। বিষয়টি নিয়ে প্রথম “ফোরম ফর দুর্গোৎসব” সদস্যরা মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হন। বিবেচনা করে মুখ্যমন্ত্রীও এই প্রস্তাবে শিলমোহর দেন। আজ, বৃহস্পতিবার কলকাতা পুলিশের কর্তাদের সঙ্গে সমন্বয় বৈঠকে ওই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেওয়া হবে। সংগঠনের সম্পাদক শাশ্বত বসু বলেন, ‘প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের যা নির্দেশ দেওয়া হবে, কলকাতার সব পুজো কমিটি তা মেনে চলবে।’ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কলকাতায় বারোয়ারি দুর্গাপুজোর মোট সংখ্যা ২২০০।
এর মধ্যে দুর্গাপুজো ফোরামের সদস্য মোট ৪০০টি পুজো কমিটি। সূত্রের খবর, ফোরামের অনুরোধে প্রবীণ ও প্রতিবন্ধী এবং শিশুদের জন্য মুখ্যমন্ত্রী ‘ক্লাব ইনভাইটি’ পাস চালু করার বিষয়ে তাঁর সম্মতি দিয়েছেন। ওই পাস ব্যবহার করতে পারবেন স্থানীয় বাসিন্দারা। মুখ্যমন্ত্রী এদিন জানিয়ে দেন, প্রবীন, প্রতিবন্ধী বা রোগী ও শিশুরা ছাড়া কেউ পাস ব্যবহার করতে পারবেন না। প্রসঙ্গত, গত শনিবারই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে বৈঠকে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস ও সুজিত বসুকে ভিআইপি পাস বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেন।
বেশিরভাগ পুজোর কমিটিগুলিই স্পনসরের মাধ্যমে পুজোর ভিআইপি পাস ছাপাতে দেয়। ইতিমধ্যে শহরের বিভিন্ন পুজো কমিটিগুলির হাতে চলে এসেছে ছাপানো পাস। কোথাও কোথাও চাঁদার বিলের সঙ্গে বিলিও হতে শুরু হয়েছে। কোন কোন পুজো কমিটি আবার পাস ছেপে আসার অপেক্ষায় রয়েছে। বাগুইআটির অর্জুনপুরে ‘আমরা সবাই’ ক্লাবের ভিআইপি পাস ছাপানো হয়েছিল রানু মণ্ডলের ছবি দিয়ে। এমন বিভিন্ন পুজো প্যান্ডেলের অভিনব ভিআইপি পাস মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর বাতিল হয়ে গিয়েছে।
সব পুজোর ক্ষেত্রেই অবশ্য সাধারণ ভাবে একটি নিয়ম মেনে চলা হয়। তা হল, ভিআইপি পাস পিছু চার জন করে ঢুকতে দেওয়ার ব্যবস্থা। জো আয়োজক সংস্থা সূত্রের খবর, গড়ে প্রতিটি পুজো কমিটি সর্বোচ্চ ২০০০ ভিআইপি পাস বিলি করে। সর্বনিম্ন এই সংখ্যাটা ৩০০ কিংবা ৫০০-তেও দাঁড়ায় অনেক ক্ষেত্রে। যা মূলত বিলি করা হয় সদস্য বা স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে। পুজো কমিটিগুলির প্রায় সবারই বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রীর কথা অনুসরণ করা হলেও হঠাৎ করে পাস তুলে দেওয়া সম্ভব নয়। তবে বিকল্প পথের অনুসন্ধান করা হচ্ছে।