Date : 2024-04-25

নিভৃতেই তাঁকে স্মরণ, বিদ্যাসাগরের তৈরি এই স্কুলের পথ ভুলেছে শহর….

কলকাতা: ইটের পাঁজরে নোনা ধরা গন্ধ নিয়ে আজও ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে প্রাচীন ইমারতটি। সিঁড়ি ভেঙে উপরে গেলেই চোখে পড়বে চক্, ডাস্টারের ধুলো মাখা ক্লাসরুম। সেই ব্লক বোর্ড আর কড়ি-বড়গায় মিশে রয়েছে মহা মণীষীদের ছোঁয়া। একদা এই স্কুলের মেধা ও উৎকর্ষ হারিয়ে দিয়েছিল প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্রদের। স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও কাণ্ডারী ছিলেন পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। বৈদেশিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মৌলালিতে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর স্থাপন করেছিলেন এই স্কুল। একটু একটু করে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশন স্কুলকে। স্বল্প আয়ুষ্কালের মধ্যে এই স্কুলে শিক্ষকতা করেন স্বামী বিবেকানন্দ। না তখনও অবশ্য তিনি গেরুয়াধারী সন্ন্যাসী নন, সংসার যাতনায় তখনও সকাল, সন্ধে খুদের চিন্তা করতে হতো তাঁকে।

পিতৃ বিয়োগের পর সংসারের দ্বায়িত্ব নিয়োজিত ছিল তার উপর। শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের জীবনীকার (শ্রীম) মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত মেধাবী নরেনের চাকুরীর জন্য কথা বলেন পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সঙ্গে। বয়সের ভার স্কুলের সর্বত্র চোখে পড়বে। ইংরাজী মাধ্যম শিক্ষার প্রসারের ভীড়ে হারিয়েছে জৌলুস, তবে ইতিহাস ও গড়িমা যেন আজও অম্লান।১৮৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্কুলে পড়েছেন ও পড়িয়েছেন ইতিহাস বিশ্রীত বহু মানুষ৷ ব্রিটিশদের চ্যালেঞ্জ করে মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশনের সাফল্য দেখে তাক লেগে গিয়েছিল সে কালের কলকাতার৷ হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকা উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে লিখেছিল, ‘এটি কলকাতা শহরের সবচেয়ে জনপ্রিয় বেসরকারি স্কুল৷’

পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ২০০ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশন স্কুলের বৌবাজার শাখায় বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, চৌরঙ্গী বিধানসভা কেন্দ্রের সাংসদ নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, স্কুলের বর্তমান পরিচালন কমিটির সভাপতি অবদেশ কুমার শর্মা ও প্রাক্তন সেক্রেটরি সাধন চ্যাটার্জী। নাচ, গান সহ একাধিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে স্কুলের পড়ুয়ারা স্মরণ করেন পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে।

সমস্ত অনুষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম আকর্ষণ ছিল গীতিনাট্য আলেখ্য “বিদ্যাসাগর”। স্কুলে একটি শরীরচর্চা কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন বিধায়ক নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়।বর্তমানে এখানে পড়ুয়া সংখ্যা অন্যান্য স্কুলের তুলনায় বেশ কম। বাংলা, ইংরাজী, ইতিহাস বিজ্ঞান মিলিয়ে মাত্র ৭ জন শিক্ষক। জ্বরাগ্রস্থ স্কুল ভবনের সংস্কারেও হাত দিয়েছে রাজ্য সরকার। পরিকাঠামো বা উন্নয়নে অনেকটাই পিছিয়ে থাকলেও স্কুলের ঐতিহ্য আর গরিমায় রয়ে গেছে বাংলার নবজাগরণের একজন পথিকৃতের ছায়া।