“একবেণী জপাকর্ণপুরা নগ্না খরাস্থিতা।
লম্বোটি কর্ণিকাকর্ণা তৈলাভ্যক্তশরীরিণী।
বামপদোল্লসল্লোহলতা-কণ্টকভূষণা।
বর্ধনমূর্ধধ্বজা কৃষ্ণ কাল-রাত্রিভয়ঙ্করী।”
দেবী কালরাত্রী
শরৎ ও বসন্তকালে নবরাত্রী বিহিত দেবীর দুর্গার সপ্তমী তিথিতে যে রূপের পূজা হয়, তার নাম দেবী কালরাত্রী।
দেবী কালরাত্রী ভীষনা, ভয়াল তার বিস্তৃত মুখমন্ডল। সমস্থ কেশরাশি অবিন্নস্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্ব ব্রহ্মান্ডে। ব্যাঘ্রচর্ম পরিহিতা দেবী কালরাত্রী গর্ধবের পিঠে সওয়ার। তার বর্ণ নিশক কালো। যেন মহাশুন্যের ঘোর অন্ধকার নেমে এসেছে, বিস্ফারিত চোখ তার ঠিকরে এসেছে। তার চর্তুভুজে বাম হস্তে বজ্র, অন্য হস্তে উদ্দত খড়গ, দক্ষিণ হস্তে বরপ্রদায়ী মুদ্রা। কন্ঠে বজ্রমালা। দেবী ভয়ংকরী বেশ কু-গ্রহ দোষ থেকে শত্রু ভয় থেকে এবং সমুহ দুর্ঘটনার হাত থেকে ভক্তকে উদ্ধার করেন।
কাল্কা বা কালরাত্রি বলে এঁর মহিমা সকলেই খুব মানে। শরৎ ও বসন্তের সপ্তমী তিথিতে হাজার হাজার লোক সারা দিনরাত্রি এখানে এসে মাকে দর্শন প্রণাম প্রদক্ষিণ ও পূজা মানত করেন। মহাষ্টমী ও দীপান্বিতা অমাবস্যাতেও এখানে মায়ের বিশেষ পূজাদি হয়। আগে এখানে ঐ একদিন পশুবলিও হতো। এখন বলিদান বন্ধহয়ে গিয়েছে। তবে পূজা হয় দেবী কালিকার ধ্যান ও বীজমন্ত্রে তন্ত্রমতেই। পূজারীরা পূর্ণাভিষিক্ত আগে ছিলেন, এখন সে ভার ক্রমশ কমে আসছে।এই কালরাত্রি দেবীই তন্ত্রমতে আদিশক্তি। মহামায়া দেবী ভগবতী। সমস্ত বিশ্বব্রহ্মাণ্ড মহাপ্রলয়ে তাঁতেই লীন হয়ে যায়। প্রতি কল্পের শেষে সারা বিশ্বব্রহ্মাণ্ড কারণ সলিলে আপ্লুত হয়-‘জগত্যেকার্ণবীকৃতে’।
আদিপুরুষও তখন নিদ্রাভিভূত থাকেন, সেই নিদ্রার নাম যোগনিদ্রা। দেবী মহামায়ার প্রভাবেই তাঁর নিদ্রা। ইনিই স্থূল-সূক্ষ্ম কারণ বিভাগে মোহনিদ্রা-মোহরাত্রি-মহারাত্রি-যোগনিদ্রা বা কালরাত্রি। ঋগ্বেদে এই রাত্রির কথা বলা হয়েছে রাত্রি সূক্তে। পরমাত্মাই রাত্রিস্বরূপ। আর ব্রহ্মশক্তি দেবী যোগমায়া ঐ রাত্রিরই প্রকাশমূর্তি।