বীরভূম:- লালমাটির দেশ বীরভূমের ইতিহাস হয়তো অনেকেই জানেন। প্রাচীনকালে এই অঞ্চলে নাকি দুর্ধর্ষ ডাকাতদের আখড়া ছিল। স্বদেশীদেরও গোপন আস্তানা ছিল বীরভূম। নামের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে বীর শব্দটি। ঘনজঙ্গলে ঘেরা বীরভূম ছিল তন্ত্র সাধনার ভূমি। বহু তন্ত্র সাধক এখানে সিদ্ধিলাভ করেন। বীরভূমকে ঘিরে আছে পাঁচটি সতীপীঠ। তাই এই লালমাটির বুকে গড়ে উঠেছে শক্তির আরাধনা। বিশ্বাসীরা মনে করেন এই ভূমির প্রতিটি ধুলিকণায় আছে মায়ের আশির্বাদ। বীরভূমের পথে যাওয়ার সময় অনেকেই হয়তো আহমেদপুর স্টেশন পার করেছেন।
স্টেশনের ধারে এখন হয়তো আর আগের মতো ঘনজঙ্গল নেই, কিন্তু সেখানে আজও অধিষ্ঠিত আছেন মা মগনেশ্বরী। প্রায় ১৫০ বছর আগে সিদ্ধিলাভের টানে কলকাতা থেকে বীরভূমে আসেন মৃনালীন দেবী। ইতিহাস বলছে, আহমেদপুরের জঙ্গলে এসে তপস্যা করার সময় ময়ূরেশ্বরের ডাবুক গ্রামে তারাপীঠ সিদ্ধ বামাক্ষ্যাপার সঙ্গে দেখা হয় তাঁর। দুজনেই গুরু কৈলাশপতির কাছে দীক্ষা লাভ করেন। মৃণালিনী দেবীর সন্ন্যাস নাম হয় মগদানন্দ গিরি। ভক্তদের সাহায্যে আহমেদপুরের জঙ্গলেই মা মগনেশ্বরীকে স্থাপনা করেন তিনি। মন্দিরের পুরোহিত বলেন আজও মা তাঁকে স্বপ্নাদেশ দেন।
কথিত আছে তারাপীঠের বামদেব মহাশ্মশানে কুকুরদের সঙ্গে আহার করতে গিয়ে কামড়ে আহত হন। সেই সময় মগদানন্দ দেবী বামদেবকে সেবা করতে ছুটে আসেন আহমেদপুর থেকে। বছরে তিনবার এই মন্দিরে ধুমধাম করে পুজো হয়। মগদানন্দ গিরি-র জন্ম তিথি, কালীপুজা ও মন্দিরের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষ্যে বহু ভক্তের সমাগম হয়। প্রতিষ্ঠা দিবসে এই মন্দিরে হয় কুমারী পুজো।
কথিত আছে এই মন্দিরে এসেছিলেন মা সারদা দেবী। মগদানন্দ গিরি তাঁর সেবা করতেন। মা সারদার চুল বেঁধে দেওয়ার অভিজ্ঞতার কথা তিনি ভক্তদের বলে গিয়েছেন। মগদানন্দ দেবী ১৩৪ বছর বয়সে দেহত্যাগ করেন। কালিপুজোর দিনে এখনও প্রচলিত আছে ছাগ বলি ও ফল বলির প্রথা। মন্দিরের একটি কমিটি আছে, এখনও পর্যন্ত তারা মা মগনেশ্বরীর নিত্যপুজো ও বাৎসরিক পুজোর আয়োজন করেন। জঙ্গলের আড়ালে থাকা এই মন্দিরের মাহাত্ম্য লোকমুখে আঞ্চলিক ভাবে প্রচলিত থাকলেও তেমন পরিচয় নেই শহরের মানুষের কাছে।