বর্ধমান:- শ্রীচৈতন্য চরিতামৃতে মহাপ্রভুর অন্যতম পার্শ্বদ নরহরি দাসের কথা হয়েতো অনেকেরই শোনা। মহাপ্রভু নিলাচলের চলে যাওয়ার পর শ্রীখণ্ডের বড়ডাঙায় বসবাস করতে থাকেন তাঁর পার্শ্বদ নরহরি দাস। সাধন ভজন করতে করতে সেখানেই দেহ রাখেন চৈতন্য শিষ্য নরহরি দাস। সেই সময় থেকেই নরহরি দাসের তিরোধান দিবস উপলক্ষ্যে শ্রীখণ্ডের বড়ডাঙায় তাঁর সমাধিস্থল ঘিরে বিশাল মেলা বসে। শুক্রবার থেকে বড়ডাঙায় শুরু হয়েছে মেলা ও উৎসব। নরহরি দাস ও শ্রী চৈতন্যের অসংখ্য ভক্তের সমাধান হয় এই উৎসব ও মেলা প্রাঙ্গনে।
এখানেই শেষ নয়। উৎসবের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন শ্রী চৈতন্য, হরি নাম গান আছে আর আছে মিষ্টি। ল্যাংচা, লেডিকেনি, রসগোল্লা সবই পাওয়া যায় মেলায়। না, এ অবশ্য সাদা-মাটা দোকানের ময়রার হাতের পাক দেওয়া ল্যাংচা, লেডিকেনি বা রসগোল্লা নয়। মিষ্টির আকার দেখলে অবাক হবেন যে কেউ। দেখতে ল্যাংচার মতোই বাদামি রঙের লম্বাটে মিষ্টি, তবে পেল্লাই সাইজের। আকার আয়তনের সঙ্গে দামের ওজন কিছু কম নয়।
এই এক একটি মিষ্টি বিক্রি হয় ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়। শ্রীখণ্ডের বড়ডাঙার মেলায় এই মিষ্টিই প্রধান আকর্ষণ আগত দর্শনার্থীদের কাছে। প্রত্যেকেই মেলা ঘুরে দেখে ফেরার পথে কিনে নেন এই জাম্ব সাইজের রসগোল্লা, ল্যাংচা, লেডিকেনি। তবে ল্যাংচার মতো ভাজা হয়না এই মিষ্টি। রসগোল্লার তৈরির পদ্ধতিতে তৈরি হয় মিষ্টি গুলি। এক একটি ল্যাংচা লম্বায় প্রায় এক ফুট। অনেকে আবার এই মিষ্টিকে রসগোল্লা বলতেই অভ্যস্ত। বিভিন্ন আকারের মিষ্টিগুলি ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০ টাকা পর্যন্ত রয়েছে। এক একটি পেল্লাই রসগোল্লা তৈরি করতে প্রায় ১৭৫ গ্রাম ছানা প্রয়োজন হয়।
তবে ৫০০ টাকার মিষ্টি মেলায় কমই বিক্রি হয়। মেলার এক মিষ্টি বিক্রেতা বোধন হালদারের কথা, মেলায় সবচেয়ে বেশি ১০০ টাকা দামের মিষ্টি বিক্রি হয়। মাত্র কয়েকদিনে শ্রীখণ্ডের মেলায় যে পরিমানে মিষ্টি বিক্রি হয় সারা বছরে গোটা কাটোয়াতে এত মিষ্টি কেউ কেনেন না। তবে কেন এই মিষ্টি তৈরি হয় এই নিয়ে প্রশ্ন করায় ওই বিক্রেতা বলেন, মানুষকে আকর্ষণ করতেই এই পেল্লাই সাইজের মিষ্টি তৈরি করা হয়। মেলায় মোট ৪টে দোকান হয় মিষ্টির। আর সেই দোকানেই মাছির মতো ভিড় জমিয়ে মিষ্টি কেনেন মেলায় আগত দর্শনার্থীরা। প্রায় ৪ লক্ষ টাকার মিষ্টি বিক্রি হয় মেলায়। ঐতিহ্য আর মিষ্টির টানে এভাবেই শ্রীখণ্ডের মেলা মানুষের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।