Date : 2024-04-20

খেজুরের পেটিতে চরস পাচার, গন্ধটা সন্দেহজনক

ওয়েব ডেস্ক : সম্প্রতি একটি বাংলা সংবাদপত্রে খবর বেরিয়েছে, খেজুরের পেটিতে চরস পুরে পাচারের চক্র পশ্চিমবঙ্গে সক্রিয়। কিন্তু একটি ব্যাপারেই প্রশ্ন উঠছে। ওই চরস আসছে নেপাল থেকে। বিহারের রক্সৌল সীমান্ত হয়ে তা ভারতে ঢুকছে। তার পর খেজুরের পেটিতে ভরে তা নাকি পাচার করা হচ্ছে চিনের কুনমিংয়ে। প্রশ্ন হল, নেপাল থেকেই যদি চরস পাচার হবে, তাহলে চিনের কুনমিংয়ে পাঠানোর জন্য পাচারকারীরা এত মেহনত করবে কেন? তিব্বত চিনের দখলে। সেখানে ঢোকা নেপাল থেকে অনেক বেশি সহজ। সেদিকে না গিয়ে পাচারকারীরা চরস নিয়ে ঢুকল ভারতে। তার পর কান বেড় দিয়ে নাক ধরতে গেল? কোনও ধরনের বেওসাদারই তো নুকসান পছন্দ করে না! উত্তরাখণ্ড থেকে শিবালিক রেঞ্জ ধরে হিমাচল প্রদেশে ঢোকার পথে তমসা নদী পড়ে। এখন কী অবস্থা জানা নেই। তবে সেই খরস্রোতা তমসা নদীর ব্রিজ পেরিয়ে পূর্ব হিমাচলে ঢোকার পর ২০০৬-’০৭ সালেও পাহাড়ি রাস্তার ধারে অজস্র চরসের গাছ দেখা যেত। একটু এগলেই পড়ত ছোট্ট গঞ্জের মতো একটা জায়গা।

সেখানে গাড়ির জন্য বেআইনিভাবে কাটা তেল বিক্রি হত। আন্ডারওয়ার্ল্ডের বহু লোকের সেখানে আনাগোনা ছিল। তারা স্থানীয় মানুষ নয়। পকেটে তাদের থরে থরে নোট। পুলিশ-প্রশাসনের নামগন্ধও সেখানে নেই। ভারতেই এমন জায়গা থাকতে শেষ পর্যন্ত চরস আনতে হল নেপাল থেকে? আর তাও কি না চিনের কুনমিং না চুংকিং কোথায় পাঠানোর জন্য? এসব কি খাওয়ানো খবর? নেপালে বহুকাল ধরেই দাউদ ইব্রাহিমের গ্যাং নানা কাজে ব্যাপৃত। তারা ভদ্দরলোকের ছেলেপুলে। ফলে হরেক রকমের কাজ অন্তত নিপুণভাবে করতে সিদ্ধহস্ত। পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা বাহিনী ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স বা আইএসআই তাদের কুকুর-ছাগলের মতো খাটিয়ে ভারতকে প্রতিনিয়ত জ্বালাতন করে।

আইএসআইয়ের সঙ্গে বরাবরই চিনা গোয়েন্দা বাহিনী টেয়ু-র মাখো মাখো সম্পর্ক। চরস তিব্বত সীমান্ত দিয়ে পাঠাতে কোনও অসুবিধাই হত না। খেজুরের পেটিতে ভরে কলকাতা দিয়ে তা পাচার করার এত জটিলতা কেন? এ কি বনমালী নস্কর লেনের মেসবাড়িতে ঘনাদার গপ্পো না বিমল মিত্তিরের উপন্যাস? লাল চিনের প্রশ্রয়ে নেপালে মাওবাদীদের প্রচণ্ডতাও কম নয়। তারাও ভারত-বিরোধী। কট্টরপন্থী মুসলিম সন্ত্রাসবাদের মদতদাতাদের সঙ্গে তাদের খাতিরও গতকাল জমেনি। ‘চিনের চেয়ারম্যান আমাদের চেয়ারম্যান’ মাও সে-তুং বেঁচে থাকতেই সেই মেহফিল শুরু হয়েছিল।

১৯৭৯ সালে আফগানিস্তানে রুশ ফৌজ ঢোকার পর সেই সম্পর্ক আরও মধুর হয়। রাজা বীরেন্দ্র-রানি ঐশ্বর্যের হত্যাকারী তারাই। অশুভ আঁতাঁত কখনই শুভকাজে লাগে না। ফলে, চণ্ডু-চরস পাচারেও সেই সখ্যতা অবশ্যই ফলদায়ক। এই অবস্থায় হঠাৎ চরস পাচারের জন্য ইন্ডিয়া রুট এত জটিলভাবে অপরাধচক্র ব্যবহার করতে গেল কেন? দিনকয়েক আগেই ইন্দো-টিবেটান বর্ডার পুলিশের এক বাঙালি জওয়ানের গুলিতে তাঁর বেশ কিছু সহকর্মী নিহত হয়েছেন। এও কোনও মাদক সেবনের প্রতিক্রিয়া কি না, সরকারিভাবে তা জানা যায়নি।

তবে ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় আমেরিকার গোপন ল্যাবে এমন কেমিক্যাল আবিষ্কার করা হয়েছিল যা প্রয়োগ করলে ভিয়েতকং অর্থাৎ ভিয়েতনামি কমিউনিস্ট গেরিলারা সহযোদ্ধাকেই শত্রু ভাবতে আরম্ভ করে দেয় এবং পরস্পর পরস্পরের উপর গুলি চালায়। এই পরিস্থিতিতে এমন এক চরস পাচার চক্র এ রাজ্যে ধরা পড়ল, চিনের “স্পেশাল ইকোনমিক জোনে” মাদক পাচারের জন্য যাদের খেজুরের পেটির দরকার ছিল। ভারতেই চরস পাচার করলে কি তারা আরও বেশি নাফা করত না? এদেশে তো আঁতেল-মার্কা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা মেডিকেল-ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সংখ্যা এখন কম নয়। অত খেটে চিনের কুনমিংয়ে চরস পাচার করতে গিয়ে চরস পাচারকারীরা তো ফ্যাসাদে পড়ে গেল!