ওয়েব ডেস্ক : মাদকের কারবার বহুদিনই আন্তর্জাতিক পুলিশ গোষ্ঠী ইন্টারপোলের কপালে ভাঁজ ফেলে দিয়েছে। ফ্রান্সের লিয়ঁ-তে ইন্টারপোলের সদর দফতর এখন কার্যত কর্তাহীন। শেষ কর্তা হিসাবে কাজ করেছিলেন চিনের প্রতিনিধি। কিন্তু চিনের কমিউনিস্ট কর্তারাই তাঁকে দেশে ডেকে নিয়ে গিয়ে ঘুষের দায়ে ফাঁসিয়ে দিয়েছেন। তার পর থেকে তাঁর আর কোনও হদিশ নেই। তাঁর স্ত্রীও আর স্বামীর খোঁজখবর পাচ্ছেন না। নিরুপায় হয়ে তিনি ফ্রান্সের নাগরিকত্ব চেয়েছেন। সাম্প্রতিক মাদক চোরাচালানে পুলিশকর্তাদের সব চাইতে বেশি চিন্তায় ফেলেছে মেটামফেটামাইনের নতুন নতুন সংস্করণ। একমাত্র নিপুণ রসায়নবিদ ছাড়া আর কারও পক্ষেই এই ধরনের মাদক আবিষ্কারের ফরমুলা বানানো সম্ভব নয়। এই ধরনের রসায়নবিদরা চাইলে যেমন জাল ওষুধও তৈরি করা শিখিয়ে দিতে পারেন, ঠিক তেমনই মাদকের নতুন নতুন ফরমুলাও আবিষ্কার করতে পারেন।
আরও পড়ুন : ‘কাবুলিওয়ালা’র দেশে শিক্ষার সজীবতা! ১২কিমি পথ পারিয়ে ‘খোখী’কে স্কুলে নিয়ে যান মিঞা
আরও পড়ুন : পকসো আইনের প্রয়োগ কোথায়, প্রশ্ন আন্তর্জাতিক স্তরে
সম্প্রতি কলকাতার ওষুধের বহু দোকান ক্যানসারের অননুমোদিত ওষুধে ছেয়ে গিয়েছে। এগুলি চিনা ওষুধ। সিডেটিভ। বাংলাদেশ হয়ে এইসব ওষুধ ঢুকছে। যারা ক্যানসারের এই ওষুধ বানাতে পারে, তাদের পক্ষে মাদকের নতুন নতুন ফরমুলা বানানো অসম্ভব নয়। অ্যাফ্রোস্যাডিয়াক বানানোও জলভাত। ১৯৭৯ সালের ডিসেম্বর মাসে আফগানিস্তানে রুশ ফৌজ ঢোকার পর, আমেরিকার নেতৃত্বে ন্যাটো এবং দেং জিয়াও পিংয়ের চিন গাঁটছড়া বেঁধে আফগানিস্তানে ছায়াযুদ্ধ শুরু করে। সৌদি আরব সহ আরব শেখশাহির চ্যানেল মারফত পাকিস্তান আর মিলিটারি-নিয়ন্ত্রিত বাংলাদেশ সেই সময় জিহাদি বানানোর কারখানায় পরিণত হয়। তখন সেই যুদ্ধে আমেরিকা-ন্যাটোর সঙ্গে খোমেইনির ইরান এবং তাদের শত্রু ইজরায়েলও ছিল। একমাত্র ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তখন বলতেন, আফগানিস্তানে রুশ ফৌজ না-থাকলে পাকিস্তান আর চিন মিলে ওই দেশ গ্রাস করে নেবে। ঠিক যেমনভাবে তারা অধিকৃত কাশ্মীরকে ভাগ করে নিয়েছে। সেই সময় আমেরিকান ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি-র স্পেশালিস্টরা চিনাদের যেমন অত্যাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির তালিম দিয়েছিলেন, ঠিক তেমনই সিআইএ-র নারকোটিক বিভাগ গোপনে তাদের সুপার-ফাইন মাদক বানানোর প্রশিক্ষণও দিয়েছিল। এরই বিষফল প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে আন্তর্জাতিক স্তরে মাদক চোরাচালানের মাধ্যমে ফুটে বের হচ্ছে।
আরও পড়ুন : দিল্লিতে বাজারে ভয়াবহ অগ্নি কাণ্ডে মৃত ৪৩
মাদকের কারবারে এখনও লক্ষ লক্ষ কোটি ডলারের ফলন। এমনকী, ভিয়েতনামের মতো কড়া শাসনের দেশেও কয়েক বছর আগে রাজধানী হ্যানয়ের পুলিশকর্তা মোটা ঘুষ নেওয়ার দায়ে ফেঁসেছিলেন। ভিয়েতনামে মাদকের কারবার ছড়িয়ে দিতেই তাঁকে ঘুষ দেওয়া হয়েছিল। মাদক কারবারের এতটাই দাপট যে, কিছু দিন আগে মেক্সিকান ড্রাগ মাফিয়া এল-চাপো জেলে বসেই বুক বাজিয়ে বলে, শিশুদের সঙ্গে যৌন ক্রীড়াই তার শখ। অথচ, এখনও সেই এল চাপো-কে কোনও দেশের হর্তাকর্তা গুলি করে মারার সাহস পেলেন না। এসব ব্যাপারে আইন আইনের পথে চলুক, এই মতেই তাঁরা বিশ্বাসী। কেন? ১৯৯০-এর দশকে কলম্বিয়ার ড্রাগলর্ডদের বিরুদ্ধে সেদেশের সরকার যুদ্ধ ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু তার পর মেক্সিকো-র ড্রাগ মাফিয়াদের দাপট বাড়ল। এই একবিংশ শতকে মাদকের কারবার চালানো নিয়ে রাশিয়ান, জর্জিয়ান-আর্মেনিয়ান এবং পূর্ব ইউরোপের মাফিয়াদের সঙ্গে ইতালিয়ান মাফিয়াদের জোরদার লড়াই। মধ্য এশিয়ার কারবার আবার তাজিক, কাজাখ মাফিয়াদের হাতে। ফিলিপিন্সের প্রেসিডেন্ট দুতার্তে মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করায় আমেরিকান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা রেগে গিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন :দু’দিনের লড়াই শেষ অগ্নিদগ্ধ উন্নাও নির্যাতিতার, শুক্রবার দিল্লিতে মৃত্যু
তাঁর মতে, দুতার্তে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করে মানবাধিকার ভঙ্গ করেছেন। ফিলিপিন্স সেনাবাহিনীর অভিযানে ওই দ্বীপপুঞ্জের মাদক অপরাধীদের পোষা ঘাতক বাহিনী নিহত হয়েছিল। সব মিলিয়ে দুই হাজার। তাতেই আমেরিকান প্রশাসনের মনে হয়েছিল, ফিলিপিন্সে ‘মানবাধিকার’ ভঙ্গ হয়েছে। ১৯৮৯ সালে রুশ-বিরোধী আফগান যুদ্ধ থতম হওয়ার পর থেকে আমেরিকার মাটিতে যে কত মানুষ মাদকের ওভারডোজে মারা গিয়েছে সে কথা তখন হোয়াইট হাউস কিংবা ক্যাপিটল হিলের মনে পড়েনি। তার মানে মাদক কারবারিদের হয়ে কথা বলার জন্য খোদ আমেরিকাতেও এমন প্রেসার লবি আছে, যাদের চাপে আমেরিকার প্রথম নাগরিক পর্যন্ত মাদক-বিরোধী যুদ্ধের প্রতিবাদ জানাতে বাধ্য হন। আমেরিকান ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট এজেন্সি, এফবিআই, সেইসঙ্গে ইন্টারপোল পর্যন্ত যেখানে মাদক কারবারিদের দৌরাত্ম্যে নাজেহাল, সেখানে ভারতের মতো দেশে এদের কারবার বন্ধ করার ক্ষমতা কি পুলিশের আছে?