তৃণমূল ও বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ জানাতে রাজ্যে তৃতীয় বিকল্প হিসাবে নিজেদের তুলে ধরতে মরিয়া এক সময়ের দুই প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী বাম ও কংগ্রেস। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও জোট করে লড়েছিল দুই দল। সরকার গড়তে না পারলেও ৭৭টি আসনে জয়ী হয়েছিলেন জোটের প্রার্থীরা। কিন্তু তাল কাটে ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে। আসন সমঝোতায় ব্যর্থ হয় দুই শিবির। ফলে আলাদা লড়ে দু-দল। ভোটের বাক্সে মুখ পোড়ে দুই শিবিরেরই। কংগ্রেস দুটি আসনে জয়ী হয়ে মুখরক্ষা করলেও খাতাই খুলতে পারেনি বামেরা। উল্টোদিকে বিজেপির প্রবল উত্থান ফের টনক নড়ায় বাম-কংগ্রেস নেতাদের। একদিকে শাসক দল তৃণমূল, অন্যদিকে বিজেপি। প্রবল শক্তিধর দুই প্রতিপক্ষের সঙ্গে টক্কর দিতে হলে যে জোটই পথ সেটা সম্যক উপলব্ধি করেছেন দুই পক্ষের নেতারা। লোকসভা ভোট পরবর্তী পর্যায়ে সেই আন্তরিকতাও লক্ষ্য করা গিয়েছে কংগ্রেস ও বাম নেতাদের সার্বিক অবস্থানে। পরস্পরকে বুঝে, পরস্পরকে যোগ্য সম্মান ও মর্যাদা দিয়ে তারা আলোচনা চালিয়ে গিয়েছেন। সেই আলোচনায় অগ্রণী ভূমিকা নিতে দেখা গিয়েছে বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র, অধীর চৌধুরী, আব্দুল মান্নান, প্রদীপ ভট্টাচার্যের মতো নেতাদের। বিধানসভা ভোট বাম-কংগ্রেস দুই শিবিরের কাছেই কার্যত অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। রাজ্যে সাম্প্রতিক সময়ে কোনও ভোটেই আশানুরূপ ফল করতে পারেনি তারা। কিন্তু রাজ্য রাজনীতির বর্তমান যে আবহ, তাতে তাঁরা অনুভব করছেন তৃণমূল ও বিজেপির বিকল্প হিসাবে তাদেরই দেখতে চাইছেন জনগণের একাংশ। প্রচারের ঢক্কানিনাদের আড়ালে তাই নীরবেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন নেতারা। গত সপ্তাহে ক্রান্তি প্রেসে ৭৭টি আসনে সমঝোতা সেরে নিয়েছিলেন নেতারা।ঠিক হয়েছিল গতবারের জেতা ৪৪টি আসনে লড়বে কংগ্রেস। বামেরা লড়বে তাদের জেতা ৩৩টি আসনে। বাকি ২১৭টি আসন নিয়ে আলোচনা করতে বৃহস্পতবার বিধান ভবনে বৈঠকে বসেন শীর্ষ নেতারা। উপস্থিত ছিলেন বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র, অধীর চৌধুরী, নেপাল মাহাতো-সহ বেশ কয়েকজন। ২১৭টি আসনের মধ্যে এদিন ১১৬টি আসনেও বোঝাপড়া চূড়ান্ত করে নিয়েছেন নেতারা। এই ১১৬টি আসনের মধ্যে ৬৮টি বামেদের, কংগ্রেসের ৪৮টি। ফলে দুই পর্ব মিলিয়ে বামেদের আসন দাঁড়াল ১০১ ও কংগ্রেসের ৯২। সবমিলিয়ে ২৯৪টি আসনের মধ্যে ১৯৩টি আসনে সমঝোতা চূড়ান্ত হয়ে গেল। বাকি ১০১টি আসনের জন্য ফের বৈঠকে বসবেন নেতারা। আপাতত আলোচনার যে গতিপ্রকৃতি তাতে সেই রফাও মসৃণ হবে বলেই আশাবাদী বিমান বসু, অধীর চৌধুরীরা।