Date : 2024-04-20

জলগ্রাস ফিরিয়ে দিয়েছে ৭২ বছর আগের স্মৃতিকে

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য, ইনপুট এডিটর : বিপদ সুন্দরবন অঞ্চলের মানুষের পায়ে পায়ে ঘোরে। জলবায়ুর পরিবর্তনে সুন্দরবনের দ্বীপভুমিতে ডেকে আনে নদী সমুদ্রকে। যেমন এনেদিল পাঁচদিন আগে। তবে এবার তাণ্ডব ছিল পর্বতপ্রমান। জনপদের পর জনপদে মানুষ সব হারিয়ে নিঃস্ব। তাঁদের একমাত্র ভরসা সরকারি ত্রান। তবে প্রতিকুলতার ঢেউ ঠেলে ফের জীবনের স্রোতে ভাসতে জানেন সুন্দরবনের মানুষ। শুরু হয়েছে সেই লড়াই।

গোসাবার ছোট মোল্লাখালি, কুমিরমারি, আমতাল, রাঙ্গাবেলিয়া জল গিলেছে ঘোড়ামারা, মৌসুনী দ্বীপ, জি প্লট … তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর। ঘূর্ণিঝড় আর বৃষ্টি থেকে যাওয়ার পাঞ্ছদিন পরেও বুকের কাঁপন থামেনি কাদাবনের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের বাসিন্দাদের।ঝড় আর জলোচ্ছাসের পাশা খেলায় হারিয়ে গিয়েছে ঘর, উঠোন, পুকুর, জমি জিরেত সব। নিঃস্ব জনপদে শুধু ফেলে রেখে গিয়েছে জীবন। নদীর জলে সব দিয়ে মাথার ছাদ, পায়ের উঠোন অনেকবার বদল করেছেন সুন্দরবনের মানুষ। কিন্তু এবারের জলগ্রাস ফিরিয়ে দিয়েছে ৭২ বছর আগের স্মৃতিকে।

উনপঞ্চাশ সালে ঘর, তুলসিতলা, গাছ-গাছালি, গোলারধান বা জিয়ল মাছের পুকুর গিলে খেতে এগিয়ে এসেছিলে জল দানব। বাপ ঠাকুরদার কাছে শোনা গল্পের আদলে এবারেও এলোমেলো করে দিয়েছে জীবনটাই। গোলাভরা ধানের সম্পন্নতা আর দিন আনাদিন খাওয়ার বিপন্নতা হাত ধরাধরি করে বসে আছে বাঁধের ওপরে ত্রানের আশায়।

নদী ফুঁসে জল যেন আকাশ ছুঁয়ে টপকেছে বাঁধ। বৃষ্টি থামলে উঁচু জায়গা থেকে নেমে ভিটের কাছে শুধুই বিপন্ন বিস্ময়। কোথায় ঘর, কোথায় উঠোন কোথায় বা তুলসীমঞ্চ? যতদুর যেদিকে চোখ যায় শুধু জল। পুকুর, খাল, বিল ভাসানো জলে ভাসছে মরা মাছ। নোনা জলে পচতে শুরু করেছে গাছ, পাতা, আবর্জনা, দীর্ঘশ্বাস ভরা দ্বিপে ভেসে বেড়াচ্ছে দুর্গন্ধ, তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পানীয় জলের আকাল।

ঘর ভেসেছে, সঞ্চয় ভেসেছে , তবুও তো জীবন জাগে। তাই শুরু হয়েছে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই। সুন্দরবনের জীবন – মৃত্যুর পাশা খেলা চলে অবিরাম কখনো তার তীব্রতা বাড়ে কখনও সহনীয় থাকে। তবে এবার সেই খেলায় প্রায় সবাই নিঃস্ব। আর্ত প্রতিবেশীকে এসো আমার ঘরে এসো বলার মতো এখন কেউ নেই।