নাজিয়া রহমান, রিপোর্টার : প্রিয় নায়ক টলিউডের দেব ও জিত। বড় হয়ে তাঁদের মত নায়ক হতে চাই 13 বছরের সায়ক।আর নায়ক হতে গেলে শরীর ফিট রাখতে হয় সেটাও জানে এই কিশোর। অভিনয়ের প্রতি আকর্ষণ থেকে নিজের স্কুলের বেশকিছু নাটকে অংশগ্রহনও করেছে সে। স্বাভাবিক ছন্দে বেশ সুন্দরভাবে দিন কাটছিল সায়কের। হঠাৎই ৬ বছর বয়সে সায়ক একটি কঠিন বাস্তবের সম্মুখীন হয়। সে ক্রমশ অসুস্থ হয়ে পড়তে থাকে। শারীরিক পরীক্ষার পর ধরা পড়ে তার দুটি কিডনি খারাপ। ডাক্তাররা কিডনি প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দেন। সায়কের বাবা পেশায় এক বেসরকারি হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষী। সায়কের এই অসুস্থতার কথা শুনে আকাশ ভেঙে পড়ে চট্টোপাধ্যায় পরিবারে। ছোট্ট সায়কের কিডনি প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় তার পরিবার। কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালের সহায়তায় কিডনি প্রতিস্থাপন সফল হয়। ধীরে ধীরে সুস্থ হতে শুরু করে সায়ক। জীবন আবার স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে শুরু করে। ভবিষ্যতে নায়ক হবার স্বপ্ন নিয়ে বড় হতে থাকে ছোট্ট সায়ক। তবে এখানেই শেষ নয় তার জীবনের দুর্যোগ।
2019 সাল থেকে ফের অসুস্থ হতে শুরু করে সায়ক। পরিবারের বক্তব্য, তার জ্বর ছাড়ছিল না। পনেরো দিন ধরে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয় সায়ককে তবুও জ্বর ভালো হয় না তার। জ্বর ছাড়ে আবার জ্বর আসে। ছেলের এমন শারীরিক অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে যায় তার পরিবার। তার লিভারে ইনফেকশন আছে বলে সন্দেহ করেন ডাক্তারেরা। পরীক্ষায় তা ধরা পড়ে। ছেলেকে নিয়ে তড়িঘড়ি চেন্নাই চলে যান চট্টোপাধ্যায় দম্পতি। ডাক্তাররা লিভার প্রতিস্থাপন করার পরামর্শ দেন। চেন্নাইতে ফের শুরু হয় সায়কের নতুন লড়াই। মা-বাবার ব্লাড গ্রুপ ম্যাচ না করায় তাদের লিভার দেওয়া হয়নি সায়ককে। শেষে ক্যাডাভার অরগান ডোনারে নাম নথিভুক্ত করা হয় সায়কের। 2020র অগাস্ট থেকে আট মাস লিভারের জন্য অপেক্ষা করতে হয় সায়কের পরিবারকে। 2021 সালের এপ্রিল মাসে পাওয়া যায় লিভার। ব্রেন ডেটথ এক ব্যক্তির ব্লাডগ্রুপের সঙ্গে ম্যাচ করে সায়কের ব্লাডগ্রুপ। সাড়ে ন ঘন্টার দীর্ঘ অপারেশনর পর সায়কের লিভার প্রতিস্থাপন করা হয়। সফল হয় অপারেশন। কলকাতার এন কে পাল স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র সায়ক এখন পুরোপুরি সুস্থ। করোনা আবহে স্কুল না গেলেও অনলাইনে ক্লাস করা থেকে শুরু করে সবকিছুই চলছে স্বাভাবিক ছন্দে। তার শরীরে এখন আর কোনও সমস্যা নেই। সে ভালো আছে তার মুখের হাসিই তার প্রমান।