Date : 2024-03-28

স্বামীহারা পার্বতীর রেলের পয়েন্ট ওম্যান হয়ে ওঠার লড়াই

স্মৃতি বিশ্বাস : তখনও অন্ধকার কাটে না, তখনও জেলা থেকে শহরের ঘুম ভাঙে না। কিন্তু দুচোখে ঘুম না আসা পার্বতীর কর্মযুদ্ধ শুরু হয়ে যায় সেই ভোর-রাত থেকেই। পার্বতী ডোম। দক্ষিণ পূর্ব রেলের পুরুলিয়ার পয়েন্ট ওম্যান। অনেকেই ভাববেন ঘরের চৌকাঠ পেরিয়ে কাজ তো অনেক মেয়েই করে কিন্তু পার্বতীর কথাই বলছি কেন। বলছি তার কারণ মাঝবয়সি পার্বতীর কর্মজীবনের শুরুটা আর পাঁচটা মহিলার মতো নয়।

রেলের মেডিক্যাল বিভাগের কর্মী ছিলেন পার্বতীর স্বামী জগনু ডোম। ঘরে পার্বতী আর দুই সন্তান। মোটের ওপর সব ঠিকঠাক চললেও তাল কাটে স্বামীর দীর্ঘ অসুস্থতা ও মৃত্যুতে।তখন রোজগার করার কেউ নেই, বাড়িতে দুই সন্তান। সন্তানরা কী খাবে, কী পরবে চিন্তায় যেন স্বামী হারানোর শোকও প্রায় ভুলে গিয়েছিলেন পার্বতী। ভিক্ষে ও পরিচারিকার কাজ শুরু করলেও চরম আত্মসম্মান পার্বতীকে যেন কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল। কিছুদিন এভাবে চললেও সম্মানের সঙ্গে কিছু করার জেদ ও চেষ্টা পার্বতী ছাড়েন নি।

অবশেষে রেল থেকে এল সুযোগ। কিন্তু ডোম সমাজ থেকে বেরিয়ে পার্বতী কাজে যাচ্ছেন এটা যেন মহল্লা মেনে নিতে পারছিল না৤কিন্তু পার্বতী হাল ছাড়ার পাত্রী নন। প্রশিক্ষণ নিয়ে পার্বতী হয়ে উঠলেন পুরুলিয়া স্টেশনের কার্টন লেভেল ক্রসিং গেট ওম্যান। এই কাজ করতে পার্বতীর শুরুর দিকটা খুব ভয় করত, কিন্তু তখনই বাড়ির দায় দায়িত্ব ও সন্তানদের মানুষ করার কথা ভেবে পার্বতী নিজেকে সাহস যোগাতেন। আট ঘন্টার ডিউটিতে সময়ে কাজে যাওয়া,কর্তব্যে ভুল না করা ও অবিচল থাকার পুরস্কারও পেলেন পার্বতী। এরপর রেলের তরফে তাঁর পদোন্নতি করে তাঁকে গেট ওম্যান থেকে পয়েন্ট ওম্যান করা হয়।

শুধু তাই নয় রেলের তথ্যচিত্রেও পার্বতীর লড়াইয়ের কথা, তাঁর নিষ্টার কথা তুলে ধরা হয়েছে। এখন পার্বতী ট্রেনের শান্টিং থেকে শুরু করে ইঞ্জিন বদলান, সিগন্যালিং-এর কাজ প্রশিক্ষিত ও দক্ষ এক রেল কর্মীর মতো করে চলছেন অনায়াসে। পার্বতীর আর ভয় করে না। এমন পার্বতীদের যে ভয় করতে নেই।

ঘরকন্যার কাজ সেরে এখনও প্রতিদিন সময়মতো কাজে যান পার্বতী। তাঁর রোজগারে সংসার চলছে, মেয়েরা লেখাপড়া করে মানুষ হচ্ছে। মা দুর্গার পুজোয় পার্বতী তাঁর মেয়েদের নতুন জামা কিনে দেবেন। পার্বতী খুশি। কদিন পরেই তো দেবী দুর্গার আরাধনা করবে জগত্ সংসার। পুরুলিয়ার পয়েন্ট ওম্যান পার্বতী যেন দেবী পার্বতীরই বাস্তব রূপ।