Date : 2024-04-25

আর কোনদিন বিধানসভায় বেজে উঠবে না সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মোবাইল ফোন: অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়

ষষ্ঠী চট্টোপাধ্যায়, রিপোর্টার,:  বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশন চলাকালীন প্রয়াত হয়েছেন রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় ।সোমবার বিধানসভার অধিবেশনে শুরুতেই রাজ্য বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন ৫০ বছরের রাজনৈতিক জীবন শেষ করে চিরবিদায় নিয়েছেন রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। গত ২৫ শে অক্টোবর এসএসকেএম হাসপাতালে হূদরোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হনতিনি। ৪ঠা নভেম্বর চোখের জলে বিদায় নেন রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়।তাঁর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মোবাইল ফোন বন্ধ করতে পারতেন না।তাই অধিবেশ চলাকালীন মাঝে মধ্যেই সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মোবাইল ফোন বেজে উঠতো।ওনার এত বেশি আহত হয়েছি বলার নেই। বিধানসভায়  রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের উর্ধে গিয়ে সকলকে আপন করে মিশতেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়।

বিধানসভায় শোক বার্তায়

বিজেপি পরিষদীয় নেতা মনোজ টিজ্ঞা বলেন জন্ম নিলে মৃত্যু অনিবার্য।এটাই জগৎ সংসারের নিয়ম।পশ্চিম বঙ্গের তিন জনের জুটি ছিল। প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সি, সৌমেন মিত্র এবং সুব্রত মুখোপাধ্যায়। ৫ বছর ধরে ওনাকে সামনে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছিল।

চা বাগানের বহু সমস্যা সমাধান করেছেন তিনি।সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের প্রচেষ্টায় ১০০দিনের কাজের জন্য সারা দেশে১ নম্বরে জায়গা করেছে পশ্চিমবঙ্গ।

আই এস এফের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি বলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের দীর্ঘ ৭৫ বছরের অনেক লড়াই করে গিয়েছেন।তিনি ৭বারের বিধায়ক ছিলেন।তিনি যা কাজ করে গিয়েছেন তা জন্য রাজ্যের মানুষ সারা জীবন মনে রাখবেন।তিনি আমায়  উপদেশ দিয়েছেন সদা সর্বদা সৌজন্য বোধ রেখে এগিয়ে যাবে।সেভাবেই চলছি

বিধায়ক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন একজন ভালো বন্ধু কে হারিয়েছি।৬০এর দশকে ছাত্র রাজনীতিতে প্রিয়, সুব্রত নাম বার বারউঠে এসেছে।তাঁদের দেখেই অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম।দীর্ঘ দিনের লড়াই একসাথে করেছি।ভারাক্রান্ত হয়েপড়েন শোভনদেব।সব সময় জীবনের ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে কাজ করে গিয়েছে।কংগ্রেস সিপিএম কে হারাতে পারবে না।একমাত্র প্রিয়, সুব্রত সিপিএমকে হারাতে পারবে বলে আমার সবসময় মনে হতো।মোহন বাগানের একনিষ্ঠ সদস্য ছিল সুব্রত।অনেক পুরোনো দিনের ঘটনা উল্লেখ করেন।খেলাধুলা থেকে রাজনীতি একসাথে এত স্মৃতি রয়েছে যা শেষ হবে না।বর্ণময় চরিত্রের মানুষ সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ শংকর রায় থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলেছেন।সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেললেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়।

বিধায়ক অশোক দেব বলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায় দীর্ঘ দিনের বিধানসভার সদস্য।মানুষের পাশে সবসময় থাকতেন।অভিজ্ঞ রাজনীতিক ব্যক্তিত্ব।আমার শরীর নিয়ে খোঁজ নেওয়া থেকে সব রকমের আলোচনাই করতেন আমার সাথে।আমি তৃণমূল কংগ্রেসের সুব্রত তখন তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে যোগদানকরেন সুব্রত।  দীর্ঘদিন কথা ছিল না আমার সাথে।পরে বিষয়টি মিটে যায়।

বিধায়ক ফিরহাদ হাকিম বলেন আমি উত্তম কুমার কে দেখিনি কিন্তু সুব্রত মুখোপাধ্যায় কে দেখেছি।অনেক ছোট বেলা থেকেই সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে ছিলাম।বিধানসভায় যখন চিপ হুইপ ছিলেন তখন দেখতাম সব সময় তাঁর ঘরে ঠাসা ভিড় থাকতো।২০০০ সালে পুরসভায় নব নির্বাচিত  আমি,অরূপ বিশ্বাস।সেই বছরেই সুব্রতদা কলকাতা পৌরসভার মেয়র হলেন।ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলে যেতেন।সুব্রতদা নেই বিধানসভা জেল শূন্য হয়ে গেছে।সুব্রত দা আজ আর আমাদের মধ্যে নেই তবে তাঁর কাজের জন্য সারা জীবন মনে রাখবে রাজ্যের মানুষ।

বিজেপি বিধায়ক মিহির গোস্বামী বলেন কোথা থেকে শুরু করবো জানি না।বিধানসভায় এসে সুব্রতদাকে দেখতে পারছিনা ভাবতেই পারিনা।১৯৬৯,৭০ সাল থেকে দেখেছি  প্রিয়,সুব্রত একে অপরের হরিহর আত্মা ছিলেন।

কলকাতায় এলে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি যাবোনা ভাবতেই পারতাম না। উত্তর বঙ্গের মানুষ আমরা বার বার মনে হত আমরা বঞ্চিত।উত্তর বঙ্গের তখন পাঁচটা জেলা।কংগ্রেসের সরকার।সিদ্ধার্থ শঙ্করের সরকারে হলেও বঞ্চিত হচ্ছিলাম।সুব্রত দার অনুমতি নিয়েই আমরা সেদিন উত্তর বঙ্গ হরতাল করেছিলাম।বর্ণময় চরিত্রের মানুষছিলেন তিনি।বড় ভাইকে হারিয়ে ফেললাম।একজন অভিভাবকে হারালাম।

বিধায়ক চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য- সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুর একটা বড় শূন্য হয়ে গেল। কল্পনা করতে পারছিনা সুব্রত মুখোপাধ্যায় কে আর কোন দিনই দেখতে পারবো না।তবে জন্ম হলে মৃত্যু হবে। সুব্রতদা কাজের মধ্যে দিয়ে বেঁচে থাকবেন।সুব্রতদার বিধানসভা কেন্দ্রে একটি দুর্গাপূজার সঙ্গে যুক্ত থাকার সুবাদে বৌদি ছন্দবানি বৌদি এবং সুব্রত দা সবসময় আমাদের পাশে ছিলেন।

বিধায়ক মানস ভুঁইয়া বলেন ১৯৮৫ সালে প্রথম যখন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পড়তে এলাম।তখন নকশাল সময় ছাত্র পরিষদ তখন ছিলো না।

অশোক দেবের কথায় মহাজাতি সদনে গেলাম তখন একটি ছোট্ট ঘরে প্রিয়, সুবতদা পরামর্শে বিষকর্মা পুজোর দিন প্রথম মেডিকেল কলেজে  ছাত্র পরিষদ পতাকা উত্তোলন হলো।

সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের কত কথা বলবো বাবা মারা যাওয়ার খবর দিতে পারিনি।বৌদি এবং সুব্রত দা পৌঁছে গিয়েছিল।একজন লেখক লিখলেন ওপরে লাল ভেতরে সবুজ সারা বাংলায় ছড়িয়ে পড়েছে।আমায় বলেছিল এটা মেনে নিতে পারছি না।সংসদীয় রাজনীতিতে সুব্রতদাকে ছাড়া কোন আলোচনাই যেন আজ অপূর্ন।সংসদীয় রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে গেলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়।

বিধায়ক পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলতে হয় তোমার মৃত্যু আমাদের অনাথ করেছে। আমি কোনোদিনই ভাবেনি যে রাজনীতিতে আসবো।  স্কুল ছেড়ে কলেজে ভর্তি হয়েছি পাড়ার মোড়ে আড্ডা মারছি,এমন সময় শোভন দেব চট্টোপাধ্যায় ট্যাক্সি করে এলেন বললেন তুমি ছাত্র পরিষদ করবে। আমি তখন খুব বেশি কিছু জানি না।আশুতোষ কলেজই বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের উগ্রতা বেশ ভয়েই থাকতাম।সেখানে  বন্দেমাতরাম বলার অভিজ্ঞতা ছিলোনা কলেজের ছাত্র পরিষদ জিন্দাবাদ করবার মতো সাহস ছিল কিন্তু সাহস যুগিয়েছিল সুব্রত মুখোপাধ্যায়। বন্ধু চিন্ত মুখার্জী কে সামনে রেখে আমি প্রথম বলিষ্ঠ সুদর্শন চেহারার সুব্রত মুখার্জিকে দেখি একডালিয়া কাছে একটি  দোকানের উপরে। সুদর্শন চেহারার মানুষটিকে দেখেই ছাত্র পরিষদ করবোবলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি।।আজ সেই মানুষটি আর নেই।দীর্ঘ সময় ধরে বিধানসভায় আমার ডান দিকের চেয়ারটিতে বসতেন।চেয়ারের শূন্যস্থান হয় তো একদিন পূরণ হবে।তবে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের শূন্যস্থান আর কোনদিন কখনোই পূরণ হবে না।