Date : 2024-04-19

গলা পর্যন্ত জল পেরিয়ে স্কুলে পৌঁছন দিদিমনি

স্মৃতি বিশ্বাস : যে বয়স পার করলে বেশিরভাগ চাকুরিজীবী সাধারণত অবসরের কথা ভাবতে শুরু করেন, সেই বয়সেও নজির গড়ছেন বিনোদিনী। বিনোদিনী সামাল, বয়স 50 পেরিয়েছে। পেশায় চুক্তি ভিত্তিক শিক্ষিকা। ওড়িশার ঢেঙ্কানল জেলার ওদাপাডা গ্রামের রথিয়াপালা বিদ্যালয় তাঁর কর্মস্থল। তাঁর বাড়ি থেকে এই স্কুলে পৌঁছতে গেলে পেরতে হয় সাপুয়া নদী। রথিয়াপালা থেকে জড়িপালা যেতে এই নদীর উপর কংক্রিটের ব্রিজ তো দূরের কথা একটা সামান্য সাঁকো পর্যন্তও নেই। কিন্তু বিনোদিনী দেবী তো শিক্ষিকা। তারঁ স্কুলে রয়েছে 53জন পড়ুয়া। তিনি স্কুলে পৌঁছলে তবেই তো বাচ্চারা পড়াশোনা করবে।

তাই আর সাত পাঁচ না ভেবে নিজেই বের করে ফেলেন উপায়। কোমর,বুক সমান নদীর জল পেরিয়েই পৌঁছে যান স্কুলে। বছরের বেশিরভাগ সময়েই নদীতে এক গলা জল পেরিয়েও স্কুলে পৌঁছন বিনোদিনী।বর্ষার সময় নদী পেরনোর অবস্থাটা আরও ভয়ঙ্কর হয়। ব্যাগে রাখেন কিছু জামাকাপড়। স্কুলে পৌঁছেই চটপট ভিজে জামাকাপড় বদলে শুরু করে দেন বাচ্চাদের পড়ানো। এক দুদিন নয়, গত 13 বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রতিদিন নদীর জল পেরিয়েই বিনোদিনী দেবী স্কুলে পৌঁছন।

2008 সালে গণ শিক্ষক প্রকল্পে তাঁকে চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করা হয়। তখন তাঁর বেতন ছিল 1700টাকা। নদীপাড়ের বাসিন্দারা প্রতিদিন তাঁর এই কর্মনিষ্ঠা দেখে অবাক হন। তাঁরাই বিনোদিনী দেবীর এই ঝুঁকিপূর্ণ নদী পারাপারের ছবি ছড়িয়ে দেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। বিনোদিনী দেবীর এই কর্মনিষ্ঠা দেখে এখন তাঁকে কাজে স্থায়ীকরণের কথা ভাবছে সরকার।

তবে কে কী করবে তাঁর জানা নেই। তিনি তাঁর কর্তব্যের তাগিদে ও পড়ুয়াদের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকে এভাবেই আগামী দিনে কাজ করে যাবেন বলে জানিয়েছেন বিনোদিনী সামাল। কর্মই ধর্ম এই আপ্তবাক্য বিনোদিনী দেবীর জন্যই বোধহয় যথার্থ।