Date : 2024-04-19

তারাদের গল্প : বিপজ্জনক বারো,বিপজ্জনক আরও,ভাগ পঞ্চাশ-এর পরে আর কি কি পাব আমরা নচিকেতার থেকে ?

শ্রীতপা চক্রবর্তী ঠাকুর : তারাদের গল্পে আজ যার সাথে গল্প করলাম, তিনি একাধারে সুরের ফেরিওয়ালা অন্য দিকে স্বপ্নেরও।যার সুরে সুরে একদিকে যেমন জীবন্ত হয়ে উঠেছে পাগলা জগাই তেমনই অন্যদিকে অনির্বাণ, তিনি পথভোলা হলেও তাঁর ঠিকানা দেন কেয়ার অফ ফুটপাথ বলেই। তাঁর একচোখে রাজশ্রী, অন্য চোখে পৌলমী আর হৃদয়ে, নীলাঞ্জনা। তিনি আর কেউ নন, আমাদের অতি পরিচিত শিল্পী নচিকেতা চক্রবর্ত্তী। তাঁর সাথে গল্প করে আজ জেনে নিলাম তাঁর পছন্দ-অপছন্দ, ব্যক্তিগত জীবন, কর্মজীবন, স্মরণীয় মুহূর্ত, আফশোস,আগামীর পরিকল্পনা ও নিজস্ব ভাবনার কথা। মজা করে খেললাম র‍্যাপিড ফায়ার গেম। দেখে নিন কী জানালেন তিনি?

(পছন্দ-অপছন্দ)

আমরা জানি নচিকেতা চক্রবর্ত্তীর নিজস্ব রাজনৈতিক মতামত আছে এবং তা সর্বসমক্ষে জাহির করতেও তিনি দ্বিধা বোধ করেন না। তাই প্রথম প্রশ্ন করব রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের নিয়েই।

প্রশ্নঃ সুভাষ চক্রবর্ত্তী ও মমতা ব্যানার্জি-এই দুজনই আপনার পছন্দের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।দুজনের মধ্যে কি মিল আর কি অমিল খুঁজে পান ?

নচিকেতাঃ দুজনেই অদম্য সাহসী।দূরদর্শী।আর অমিল হল, একজন পুরুষ আর অন্যজন মহিলা।

প্রশ্নঃ গান লেখা-সুর করা না গান গাওয়া বেশি পছন্দের ? নচিকেতাকে কোন বিষয়ে কত নম্বর দেবেন ?

নচিকেতাঃ অবশ্যই গান গাইতে বেশি ভাল লাগে।গায়ক নচিকেতাকেই বেশি নম্বর দেব।

প্রশ্নঃ মেহেদি হাসানের গজল আপনার ভীষণ পছন্দ।সেই গানই বাংলায় গাওয়ার ইচ্ছা ছিল।তারপর হঠাৎ জীবনমুখী বাংলা গান কেন ?

নচিকেতাঃ সেই সময়টা যে গান ডিম্যান্ড করেছে,সেই গানই গেয়েছি।তখন পলিটিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ড অন্যরকম ছিল।জনসাধারণের যেরকম চাহিদা ছিল, সেই রকম গানই উপহার দিয়েছি।

প্রশ্নঃ নীলাঞ্জনা একটাই।রাজশ্রী একটাই।পৌলমী একটাই……….কিন্তু সবাই মিলে অনেক।নারীসঙ্গ কি ভীষণ পছন্দ নচিকেতার ?

নচিকেতাঃ মানুষের সঙ্গই পছন্দ।শুধু নারীসঙ্গ নয়।এসব কথা ফেমিনিস্টরা বলে।

(ব্যক্তিগত জীবন)

প্রশ্নঃ আপনার পছন্দের শব্দ “নো “।তাহলে নচিকেতা কি ব্যক্তিগত জীবনে নেগেটিভ
পার্সোনালিটি ?

নচিকেতাঃ ঠিক নেগেটিভ পার্সোনালিটি বলা যায় না, তবে নিরাশার মধ্যে থাকি।আমার গানে আশার কথা থাকলেও আমি নিরাশায় ঘেরা থাকি।

প্রশ্নঃ পাগলা জগাই, কেয়ার অফ ফুটপাথ, স্বপ্নের ফেরিওয়ালা,ভবঘুরে, পথভোলা- ব্যক্তিগত জীবনেও কি নচিকেতা এই রকমই ? নিয়ম ভাঙাই কি বৈশিষ্ট্য আপনার ?

নচিকেতাঃ বলতে পারেন।আমার গানগুলোই তো আমার ডায়েরি।আমার কথাই বলা আছে আমার গানে।

প্রশ্নঃ বাবা হিসাবে নয়, একজন শিল্পী হিসাবে বলুন- ধানসিঁড়ির মধ্যে সঙ্গীতশিল্পী হয়ে ওঠার কতটা সম্ভাবনা দেখতে পান ?

নচিকেতাঃ যথেষ্ট সম্ভাবনা দেখতে পাই।সমস্ত ধারার গানেই ও সাবলীল।

(কর্মজীবন)

প্রশ্নঃ বাঙলা আর বাঙালিকে ভালবেসেই কি মুম্বই যাওয়া হয়নি ? তাতে কি কেরিয়ার সীমাবদ্ধ হয়েছে বলে মনে হয় ?

নচিকেতাঃ না।সেরকম নয়।এটাই ডেসটিনি।আমি এখন অদৃষ্টবাদে বিশ্বাসী।যা ভাগ্যে ছিল তাই হয়েছে।তবে, কেরিয়ার সীমাবদ্ধ হয়েছে- একথা আমি মনে করি না-কারণ, হাততালির শব্দ সব জায়গাতেই একইরকম।

প্রশ্নঃ নাইন্টিজে বাংলাগানের ধারায় নবকল্লোল আনতে নচিকেতার যতটা অবদান ছিল, নাগরিক কবিয়াল কবীর সুমনের(ওরফে সুমন চট্টোপাধ্যায়)অবদান কি ততটাই ?

নচিকেতাঃ কোনও মন্তব্য করতে চাই না।

প্রশ্নঃ স্ট্রাগল কি নচিকেতাকে লড়াকু শিল্পী বানিয়েছে নাকি ভাগ্য ?

নচিকেতাঃ ভাগ্য “নচিকেতা” বানিয়েছে।ওই যে বললাম, আমি অদৃষ্টবাদে বিশ্বাসী।তবে হ্যাঁ, স্ট্রাগল লড়াকু বানিয়েছে।স্ট্রাগলটা উপরি বলা যেতে পারে।

(স্মরণীয় মুহূর্ত)

প্রশ্নঃ যেখানে দীর্ঘদিনের জন্য অনুষ্ঠানের ডাক আসেনি,সেখানে বহুবছর পর সাদরে আমন্ত্রণ।সেই সময়টা কতটা ভাললাগার ছিল ?

নচিকেতাঃ অবশ্যই ভাললাগার ছিল।এ আর নতুন করে বলার কি আছে ?

প্রশ্নঃ বিদেশে হেমন্ত, মান্না,শ্যামল মিত্র নয়,নচিকেতার গান শোনার ডাক পাওয়া-কতটা ভাল লেগেছিল ?

নচিকেতাঃ খুবই ভাল লেগেছিল। প্রথম যখন অনুষ্ঠান করতে যাই, তখন বিদেশের দর্শক-শ্রোতা নচিকেতার গান সেভাবে শোনেননি।আমিও অপেক্ষা করি পরবর্তী জেনারেশনের জন্য। তারপর 12 বছর পর যখন বিদেশে অনুষ্ঠান করতে যাই,তখন একটা নতুন জেনারেশন সেখানে, তারা নচিকেতার গান শোনার জন্যই নচিকেতাকে ডাকত।

প্রশ্নঃ “চা ও নচিকেতা” নামের যে চায়ের দোকানটি রয়েছে,তার মালিক গৌরব।গৌরব নেশাগ্রস্ত ছিল,তারপর তার জীবনের পরিবর্তন আপনার গানের মধ্যে দিয়েই।গৌরবের গৌরব নিয়ে কি আপনারও গৌরব হয় ?

নচিকেতাঃ বিষয়টি গৌরবের নয়, ভাললাগার। তবে শুধু গৌরব নয়, আরও অনেকেরই জীবন বদলেছে।আমার গানের মধ্যে দিয়েই।পাশে ছিলাম,পাশে আছি।

(আফশোস)

প্রশ্নঃ মাঠে-ঘাটে নেমে রাজনীতি করা ছেলেটার হঠাত্ জনপ্রিয় শিল্পী হয়ে ওঠা।অনির্বাণ আর তার বন্ধুর-এই দুই সত্ত্বাই আপনার মধ্যে ? আপশোস থেকেই কি এই গান ?

নচিকেতাঃ আগেই বললাম আমার গানগুলোই আমার ডায়েরি।অনির্বাণ আর তার বন্ধু-এই দুই সত্ত্বাই আমার মধ্যে।রাজনীতিটা ভালবেসেই করতাম। এখনকার মতো রাজনীতি নয়।আত্মবলিদানের রাজনীতি।পরিস্থিতির কারণে অন্য পথে হাঁটতে হয়েছে।ছোট-ছোট দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বড় দায়িত্ব ছাড়তে হয়েছে।

প্রশ্নঃ শিল্প সহজলভ্য হওয়াতেই কি মাহাত্ম্য হারাচ্ছে ? মূল্য দিয়ে গান কিনছে না শ্রোতারা,তাই কি মূল্যায়ণ হচ্ছে না ? এতে আফশোস হয় ?

নচিকেতাঃ এটা ঠিকই, মূল্য দিয়ে না কেনায় মূল্যায়ণও হচ্ছে না। তবে, আফশোস হয় না। এটা প্রযুক্তির নেতিবাচক প্রভাব বা নেগেটিভ এফেক্ট বলতে পারি।কিছু মানুষ ইচ্ছাকৃত এই পরিস্থিতি তৈরি করেছে।

প্রশ্নঃ করোনা পরিস্থিতিতে সঙ্গীতশিল্পী ও যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পীদের যে অবস্থা, তাতে কতটা খারাপ লাগে ? দোষটা কার- সরকারের নাকি উপরওয়ালার ?

নচিকেতাঃ আমার সাধ্য মতো প্রচুর শিল্পীদের পাশে দাঁড়িয়েছি। এখনও ওইসমস্ত শিল্পীদের পাশে থেকেই কাজ করছি।তবে, এই পরিস্থিতির জন্য সরকার বা উপরওয়ালা নয়, দোষী ফার্মাসিউটিক্যাল ব্যবসায়ীরা।

(আগামীর পরিকল্পনা)

প্রশ্নঃ বৃদ্ধাশ্রম-2 কি আমরা পাব ? সত্যিই কি বৃদ্ধাশ্রম কনসেপ্টটা খারাপ মনে করেন ?

নচিকেতাঃ আমার আগামীর কোনও পরিকল্পনা নেই।আমার শুধু অতীত আছে,আর বর্তমান আছে। তাই বৃদ্ধাশ্রম-2 এর বিষয়ে বলতে পারব না।আর বৃদ্ধাশ্রমে সময় ভাল কাটে না। যে সময় বানপ্রস্থ,সণ্ণ্যাস এসব ছিল-সেই সময়ের সাথে এখনকার পটভূমির অনেক পার্থক্য রয়েছে।

প্রশ্নঃ ছাই হতে শুধু বাকি, নাকি আরও কত ওড়ার বাকি…….আগুনপাখির ?

নচিকেতাঃ ছাই হতে শুধু বাকি। এখন মনে হয় শাঁখা-সিঁদূর নিয়ে যেতে পারলেই হয়।

প্রশ্নঃ বিপজ্জনক বারো,বিপজ্জনক আরও,ভাগ পঞ্চাশ-এর পরে আর কি কি পাব আমরা নচিকেতার থেকে ?

নচিকেতাঃ নতুন বই অবশ্যই পাবে।একই প্রকাশনী থেকে। এবারের বই, “বিপজ্জনক এবারও”

প্রশ্নঃ “আমার ছায়ায় শান্তি কুড়োলে, শান্তি কুড়োনো হবে না…………… কারণ আগুনের ছায়া পড়ে না”- সেই আগ্নেয়গিরি কি এখন সুপ্ত?

নচিকেতাঃ আগ্নেয়গিরি সুপ্ত নয়। ধিকি-ধিকি আগুন সবসময়ই জ্বলছে।সমুদ্রের নীচে যেমন সারাক্ষণ আগুন থাকে,ঠিক সেরকমই।

(নিজস্ব ভাবনা)

প্রশ্নঃ মানুষ যা গ্রহণ করবে, সেটাই থাকবে। তাহলে কি মানুষের গ্রহণ করার উপরেই শিল্পীর শিল্পের গুরুত্ব নির্ভর করে ?

নচিকেতাঃ তাইতো হয়ে আসছে। এ এক চিরকালীন দ্বন্দ্ব।নাহলে, এতদিনে একটা জাতীয় পুরস্কার পেলাম না ? এখন দিলেও আর নেব না। প্রত্যাখ্যান করব।

প্রশ্নঃ মানুষ কি আদৌ সচেতন ? তাহলে নচিকেতাকে কেন চিৎকার করে গান গাইতে হয়, কেন গায়ে লাগানোর জন্য গালাগালি দিতে হয় ?

নচিকেতাঃ একেবারেই সচেতন নয়। আর সচেতন হবেই বা কি করে ? সবসময় মানুষকে দিন আনা-দিন খাওয়ার চিন্তায় ব্যস্ত রাখা হয়েছে।পাশের মানুষের থেকে আলাদা করে দেওয়া হয়েছে।ফলে, সচেতন না হওয়াটাই স্বাভাবিক। আর নচিকেতাকে কেন গান করতে হয় চিৎকার করে ?……………কারণ আমি তো অন্ধের দেশে চশমা বিক্রি করি।

প্রশ্নঃ “আমি পথভোলা হতে চাই বারবার…… ঠিকানা তো মিলে যাবে একদিন”- ঠিকানাটা কি ?

নচিকেতাঃ ঠিকানা জানা নেই। বললাম যে, আমি অদৃষ্টবাদে বিশ্বাসী।

প্রশ্নঃ রাজনীতিবিদদের একবার এই দল, একবার ওই দল- কীভাবে দেখেন বিষয়টি ?

নচিকেতাঃ এই বিষয়ে প্রশ্ন না করাই ভাল।এখন রাজনীতি একটা কেরিয়ার। একজন রাজনীতিবিদ এখন ডাক্তারের চেয়ে বেশি রোজগার করে।ফলে, এবিষয়ে মন্তব্য না করাই ভাল।

প্রশ্নঃ প্রকাশ্যে অবৈধ প্রেম বা সিঙ্গল মাদার হওয়ার দৃষ্টান্ত তুলে ধরা-জনপ্রিয় হওয়ার চেষ্টা নাকি অপরিণত আচরণ ?

নচিকেতাঃ প্রেম ভীষণ ব্যক্তিগত।তবে, প্রকাশ্যে এনে বাড়াবাড়ি করাটা অপরিণত আচরণই বলব। তবে, যা হচ্ছে-তাতে আমার কিছু খারাপ লাগছে না।

প্রশ্নঃ ভূতের রাজা বর দিতে চাইলে(তবে একটাই বর)………..কী চাইবেন ?

নচিকেতাঃ পাখি হতে চাই পরের জন্মে।মানুষ হতে চাইনা। মানুষের জন্যই পৃথিবীটা একদিন বাসযোগ্য থাকবে না।

(র‍্যাপিড-ফায়ার)

প্রশ্নঃ করোনা পরিস্থিতিতেও কি বলতে পারবেন, “এই বেশ ভাল আছি”?

নচিকেতাঃ হ্যাঁ (তবে ব্যঙ্গার্থে…….তখনও ব্যঙ্গার্থে বলেছিলাম,আজও বলব)

প্রশ্নঃ দুর্বিনীত আচরণই কি নচিকেতার প্রতিবাদের ভাষা ?

নচিকেতাঃ হ্যাঁ (নচিকেতার মুখোশহীন মুখ)

প্রশ্নঃ গান গেয়ে কি দুনিয়া বদলানো যায় ?

নচিকেতাঃ না

প্রশ্নঃ কনভিকশনের অভাব আর কম্প্রোমাইজে মানুষ বিশ্বাসী হয়ে পড়ায় কি নতুন কোনও রেভলিউশন আসছে না ?

নচিকেতাঃ হ্যাঁ (তবে, এই পরিস্থিতি ম্যানমেড).

প্রশ্নঃ সফলতার চেয়ে কি সার্থকতা বেশি জরুরী ?

নচিকেতাঃ দুটোই জরুরী (সরি,হ্যাঁ বা না তে উত্তর দেওয়া সম্ভব হল না)

প্রশ্নঃ নচিকেতা কি জানে….সে কি চায় জীবনে ?

নচিকেতাঃ না

প্রশ্নঃ আপনি নয়, মুম্বই কি আপনাকে মিস করে ?

নচিকেতাঃ হ্যাঁ ( ভাল বলেছেন!……….সহাস্যে)

প্রশ্নঃ শিল্পী, সাংবাদিক বা সমাজের অন্যস্তরের মানুষদের কি বাক-স্বাধীনতা আছে বলে মনে করেন ?

নচিকেতাঃ না

প্রশ্নঃ আপনার টাকার আর প্রয়োজন নেই, আর আপনি পাওয়ারফুলও……সেই কারণেই কি সক্রিয় রাজনীতিতে আসেন না ?

নচিকেতাঃ হ্যাঁ একদম তাই

প্রশ্নঃ নচিকেতা কি ভবিষ্যত দেখতে পায় ?

নচিকেতাঃ না