Date : 2024-04-20

অসুস্থ সন্তানের প্রতি সুবিচার হয়নি,বেসরকারি হোমের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলেন পিতা

ষষ্ঠী চট্টোপাধ্যায়, সাংবাদিক:- বিশেষ ভাবে সক্ষম সন্তানের উপর অত্যাচার করা হয়েছে। বের করে দেওয়া হয়েছে আশ্রয়স্থল থেকে। বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ করেও সুরাহা হয়নি। অবশেষে অসুস্থ সন্তানের প্রতি সুবিচার আনতে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হলেন পিতা। বুধবার বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার নির্দেশ, ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে অবিলম্বে পদক্ষেপ করতে হবে রাজ্যকে। এই ঘটনায় এফআরআর দায়ের করার নির্দেশ কলকাতা হাই কোর্টের।

অটিজমে আক্রান্ত তেরো বছরের এক কিশোরকে খাঁচায় বন্দি করে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ এক বেসরকারি হোমের বিরুদ্ধে। ২০১৮ সালের এই ঘটনায় এখনও এফআইআর নেয়নি পুলিস। অবশেষে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন কিশোরের বাবা। বুধবার বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এজলাসে মামলাটি উঠলে বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে আদালত। ঘটনায় অবিলম্বে এফআইআর দায়েরের পাশাপাশি আগামী ১১ মে-র মধ্যে মামলার যাবতীয় নথি পেশের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি। অভিযোগ দুর্গাপুরের হ্যাপি হোম নামক ওই বেসরকারি হোমে এই ঘটনার পর অভিযোগ জানালেও পুলিস হোমের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এমনকি অভিযোগের প্রেক্ষিতে এফআইআর পর্যন্ত দায়ের করেনি দুর্গাপুর থানা। ওই অটিস্টিক কিশোর শারীরিক ভাবে অত্যাচারিত হওয়ার পরই হোমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও প্রতিকার চেয়ে জেলা মাস এডুকেশন, ডিসএবিলিটি কমিশন, মহকুমা শাসক ও দুর্গাপুর থানায় অভিযোগ জানান কিশোরের বাবা। অভিযোগের প্রক্ষিতে শুধুমাত্র ডিসএবিলিটি কমিশন হোমকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দেয়। এখনও পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থা তো দুরের কথা পুলিস এফআইআরই রুজু করেনি। ১১ তারিখ ঘটনার নথি জমা পড়লে এব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে আদালত।

বিশেষ ভাবে সক্ষম সন্তানের উপর অত্যাচার করা হয়েছে। বের করে দেওয়া হয়েছে আশ্রয়স্থল থেকে। বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ করেও সুরাহা হয়নি। অবশেষে অসুস্থ সন্তানের প্রতি সুবিচার আনতে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হলেন পিতা। বুধবার বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার নির্দেশ, ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে অবিলম্বে পদক্ষেপ করতে হবে রাজ্যকে। এই ঘটনায় এফআরআর দায়ের করার নির্দেশ দেয় উচ্চ আদালত।

পেশায় শিক্ষক অরূপকুমার দাস। ২০০৩ সালে তাঁর সন্তান ইন্দ্ররূপের জন্ম হয়। জন্ম থেকেই ইন্দ্র বিশেষ ভাবে সক্ষম। তার অটিস্টিকের সমস্যা রয়েছে। কথা বলতে পারেন না। অরূপকে চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন, এই ধরনের সমস্যা রয়েছে এমন অনেকের মধ্যে সন্তানকে রাখতে। সেই মতো ২০১১ সালে ‘দুর্গাপুর হ্যান্ডিক্যাফ হ্যাপি হোম’-এ সন্তানকে পাঠান তিনি। অরূপের কথায়, “প্রথম প্রথম ভালই ছিল ছেলে। ২০১৬ সালে ওই হোমে নতুন সম্পাদক হিসাবে আসেন পাপিয়া মুখোপাধ্যায়। তাঁর আমলে শিশুদের উপর অত্যাচারের বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে।”

তিনি দাবি, “২০১৮ সালের ২৩ মার্চ আমার ছেলেকে বিশেষ ভাবে অক্ষম অন্য এক জন কামড়ে দেয়। প্রথমে আমরা গুরুত্ব দিইনি। পরে গিয়ে দেখি গোটা শরীরে কামড়ানোর দাগ। অথচ হোম কোনও চিকিৎসা করেনি। আমরা জানতে পারি, ওই দুই শিশুকে একটি খাঁচায় রাখা হয়েছিল। তার ফলেই ওই অবস্থা হয়। কিন্তু খাঁচায় রাখা হয়েছিল কেন সেই উত্তর পাওয়া যায়নি।” এর পর তাঁর ছেলে আরও কয়েক বার আঘাত পেয়েছে বলে অভিযোগ করেন অরূপ। তাঁর বক্তব্য, “হোমের হেফাজতে কোনও শিশু থাকা অবস্থায় সেখানে কিছু ঘটলে তার দায় তো তাদেরই নেওয়া উচিত। আমরা বিষয়টি বলার পরও কোনও কাজ হয়নি।” অরূপ জানান, হোমের এই ধরনের আচরণ নিয়ে আমি চাইল্ড কমিশন, পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসক, রাজ্যের মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে চিঠি লিখি। কিন্তু কেউ সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেনি। অগত্যা উপায় না দেখে আদালতের দোরগোড়ায় এসেছি।

গত বছর হাই কোর্টে মামলা দায়ের করেন অরূপ। আদালতে তাঁর আবেদন, সন্তানের দেখভালের সঠিক দায়িত্ব পালন করেনি ওই হোমের সম্পাদক। তাঁর গাফিলতিতেই ওই হোম থেকে সন্তানকে বের করতে বাধ্য হয়েছেন। এই সব শিশুদের জন্য নতুন নতুন পরিবেশ একদম উপযুক্ত নয়। বুধবার ওই ঘটনায় আদালত এফআইআর-এর নির্দেশ দেয়।