Date : 2024-04-20

হারিয়ে যাওয়া আমিষ-নিরামিষ পদে নববর্ষ

সঞ্জনা লাহিড়ী, সাংবাদিক: বাংলা নববর্ষ মানেই হালখাতা মিষ্টির হাঁড়ির ভিড়ে জমিয়ে খাওয়া-দাওয়া। হোটেল রেঁস্তোরা থেকে গৃহস্থের হেঁসেল, সব জায়গাতেই থাকে বিশেষ লোভনীয় পদ। বাংলার বেশ কয়েকটি ঐতিহ্যবাহী হারিয়ে যাওয়া রান্না নিয়ে আলোচনা করব আজ।

পুঁটি মাছের শুঁটকি দিয়ে কচুর শাক: পূর্ব বাংলায় নববর্ষে পান্তা, ইলিশ, শুঁটকি খাওয়ার রেওয়াজ আছে। শুঁটকি ভর্তা থেকে ভুনা, নানান রকম শুঁটকির পদ নববর্ষে খেয়ে থাকে ওপার বাংলার মানুষেরা। তবে আজ শুঁটকির যে পদ নিয়ে আলোচনা করব তা খানিকটা ভিন্ন। পুঁটি মাছ ও শুঁটকি দিয়ে কচুর শাকের মেলবন্ধন। ডাঁটা সমেত কচুর শাক নিয়ে মাঝ বরাবর চিরে নিতে হবে। পুঁটি মাছ কেটে ধুয়ে পরিস্কার করে রাখতে হবে। কড়াইতে সর্ষের তেল দিয়ে, এর মধ্যে দিতে হবে পাঁচফোড়ন ও থেঁতো করা রসুনের কোয়া। রসুন হালকা বাদামী রঙের হয়ে এলে এর মধ্যে কচুর শাক ও কাঁচা লঙ্কা দিয়ে নাড়তে হবে। শাক থেকে জল বেরিয়ে গেলে জিরে বাটা দিয়ে নাড়তে হবে। এর পর দিতে হবে শুঁটকি মাছ ও পরিমাণ মতো লবণ। আঁচ কমিয়ে ঢাকা দিয়ে ১০মিনিট রাখলেই তৈরি পুঁটি মাছের শুঁটকি দিয়ে কচুর শাক।

বেলের বরফি: নববর্ষের আনন্দের সঙ্গে মিশে থাকে অস্বস্তিকর গরম। তাই বছরের প্রথম দিনের আননন্দ যাতে ফিকে না হয় তার জন্য শরীরকে সুস্থ রাখা জরুরী। গরমে সুস্থ থাকতে তাই রয়েছে এক ম্যাজিক রেসিপি। বেলের বরফি। কম উপকরণে নির্ঝঞ্ঝাট রান্নার তালিকায় অন্যতম জায়গা করে নিয়েছে এই পদ। কড়াইয়ে এক কাপ দুধ ভাল করে ফোটাতে হবে। দুধ ঘন হয়ে এলে দিতে হবে এক কাপ গুঁড়ো দুধ। এরপর এক কাপ বেলের ক্কাথ ও আধ কাপ চিনি দিয়ে নাড়তে হবে। এরপর দিতে হবে আধ কাপ বেসন। দিতে হবে আধ চা- চামচ এলাচ গুঁড়ো। বরফির মিশ্রণ আঠালো হয়ে এলে আঁচ থেকে নামিয়ে ঠান্ডা করতে হবে। একটু ঠান্ডা হয়ে এলে একটি ট্রে-তে ঘি ব্রাশ করে মিশ্রণটি ঢেলে দিতে হবে, সমান করে নিতে হবে চার দিক দিয়ে। এক ঘন্টার জন্য ফ্রিজে রেখে দিতে জমাট বাঁধার জন্য। জমাট হয়ে গেলে বরফির আকারে কেটে নিলেই তৈরি বেলের বরফি। এক সপ্তাহ পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যাবে বরফি গুলি।

রুই মাছের বাটি চচ্চড়ি: জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির রান্না যে কতটা জনপ্রিয় তা ঠাকুরবাড়ির ইতিহাস খুঁজলেই পাওয়া যায়। তবে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময়ে বাড়ির বউদের হেঁসেলে ঢোকার অনুমতি ছিল না। রান্না করতেন বামুনেরা। জ্ঞানদনন্দিনী দেবী নিজেই সে কথা লিখে গেছেন। একটা সময়ে জমিদারিতে আয় কমে গেছিল সেই সময় থেকেই দেবেন্দ্রনাথের নির্দেশে বউরা হেঁসেলে রান্না করা শুরু করে। রান্নার জনপ্রিয়তা প্রকাশ পায় ঠাকুরবাড়ির কন্যা প্রজ্ঞাসুন্দরী দেবী ও তনুজা দেবীর লেখা বিভিন্ন বই থেকে। আজ এরকমই এক রান্নার কথা বলব। ২৫০-৩০০ গ্রাম রুই মাছ কেটে ধুয়ে নিয়ে হলুদ ও লবণ দিয়ে মাখিয়ে রাখতে হবে।কড়াইতে সর্ষের তেল গরম করে ভালভাবে ভেজে নিতে হবে। কড়াইতে তেল দিয়ে, এর মধ্যে দিতে হবে পাঁচফোড়ন তেজপাতা। ফোড়নে দিতে হবে ভেজে নেওয়া মাছ, হলুদ আধ চা-চামচ, শুকনো লঙ্কা বাটা ২ চা-চামচ। অল্প নেড়ে, দিতে হবে আধ কাপ জল। এরপর দিতে হবে সর্ষে বাটা ১ চা-চামচ, লবণ স্বাদ মতো ও কাঁচা লঙ্কা ৩টি। ভালভাবে নেড়ে নিয়ে কড়াইয়ের মুখে ঢাকা দিয়ে রেখে দিতে হবে ১৫-২০ মিনিট। ফুটে এলে নামিয়ে ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করলে মন যে ভরে যাবে তা বলাই যায়। তবে পুরো রান্নাটাই যদি পিতলের কড়াইতে করা যায় তাহলে স্বাদ কয়েকগুন বেড়ে যায় বলেই জানা যায়।