Date : 2024-03-29

৫২ নং বাস রুট- শতবর্ষ পার করল। রামরাজাতলা থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত এই প্রাচীন বাসরুট টি আজও ইতিহাস বহন করে চলেছে।

শাহিনা ইয়াসমিন, রিপোর্টার :- ট্রাম, ট্রেন বা ভিনটেজ কার। বিভিন্ন যানবাহনের শতবর্ষের কথা শোনা যায়। তবে কখনও কি শুনেছেন কোনও বাসরুটের শতবর্ষ। কলকাতা-হাওড়ার এমনই এক বাস রুটের শতবর্ষ নিয়ে আরপ্লাস নিউজের বিশেষ প্রতিবেদন।
হাওড়া মানেই বহু ইতিহাস। সেই ইতিহাস ঘাটতে গিয়ে দেখা গেল ১৯২২ সালের একটি ঘটনা। পরাধীন ভারতের ব্রিটিশ কাউন্সিলে প্রস্তাব পাশ হয়েছিল একটি বাস রুটের। হাওড়া স্টেশন থেকে রামরাজাতলা। রুট নং ৫২। সেই বাসরুট এখন শতবর্ষে। ৫২ নং বাস রুটটির প্রথমে গন্তব্য ছিল রামরাজাতলা থেকে হাওড়া স্টেশন পর্যন্ত। দীর্ঘ বছর ধরে এই রুটেই চলছিল বাসটি। পরবর্তীকালে রুটটি জনপ্রিয়তা বেড়ে যাওয়ায় সম্প্রসারিত হয়ে রামরাজাতলা থেকে হাওড়া স্টেশন হয়ে ধর্মতলা পর্যন্ত বাসটির গন্তব্য। তারপর থেকে বাসের গায়ে লেখা থাকে রামরাজাতলা থেকে ধর্মতলা। প্রাচীন এই বাসরুট আজও ইতিহাস বহন করে চলেছে। ৫২ নং বাস রুট চালু হওয়ার পিছনে রয়েছে একটি কাহিনী।


৫২ নং বাস রুটের একটি ইতিহাস আছে। ১৭৫০-৫৫ সালে রামঠাকুর বা রামরাজা মন্দিরের প্রতিষ্ঠা হয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রাজা অযোধ্যারাম চৌধুরী। রামরাজা মন্দিরের নাম অনুযায়ী জায়গাটির নাম হয় রামরাজাতলা। সেই সময় রামঠাকুরের প্রাচীন মন্দিরে পূর্ণ্যার্থীদের
যাতায়াতের জন্য ৫২ নং বাস রুট চালু করা হয়। ৫২ নং বাস রুট চালু করেছিলেন স্বয়ং রাজা অযোধ্যারাম চৌধুরী। ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে ৫২ নং বাস রুটের প্রস্তাব পাশ করানো হয়। পরে স্বাধীন ভারতে গেজেটের মাধ্যমে পাশ হয় রুটটি। এই বাস প্রথম দিকে কয়লায় চলত, তারপর পেট্রল এবং বর্তমানে ডিজেলে চলছে।
রাজা অযোধ্যারাম চৌধুরীর ২৭ তম বংশধর হলেন ভোলানাথ চৌধুরী। ৬৯ বছর বয়সি ভোলানাথ বাবু বর্তমানে রামরাজা ঠাকুরের সেবায়েত। পাশাপাশি তিনি ৫২ নং ও ৫৮ নং বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক। রামরাজা ঠাকুরের পুজো ৩০০ বছর পুরনো। মূলত রাজা রামের পুজো হয় এখানে। কথিত আছে রামচন্দ্রের বনবাস থেকে ফিরে আসার জন্যই এই পুজো। হাওড়ার রামরাজাতলার রামঠাকুরের এই মন্দিরে আজও ধুমধামের সঙ্গে পুজো হয়ে থাকে। ভক্তদের সমাগম হয় বড়সড়। প্রথমে বাসস্ট্যান্ড ছিল রামরাজা মন্দিরের উল্টোদিকে। অর্থাত্ রাজা অযোধ্যারাম চৌধুরীর সম্পত্তির উপরেই। ২০১১ সালে বাসস্ট্যান্ডটির স্থান পরিবর্তন হয়।

বর্তমানে ৫২ নং বাস মালিক সমিতির দাবি, পুরনো স্থানেই বাসস্ট্যান্ডটিকে ফিরিয়ে আনা হোক। কারণ ছোট জায়গা, বাজার বসার জন্য বাস, স্ট্যান্ডে ঢোকা ও বেরনোর ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে বলে জানান ৫২ নং বাস রুটের সহ সম্পাদক রূপায়ি মান্না।
৫২ নং রুট টিকে হেরিটেজের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছেন ৫২ নং বাস মালিক সমিতি। এই ৫২ নং রুটে ২৯ টি বাস আছে। পিপিপি মডেলে বাসস্ট্যান্ড করার পরেও গাড়ি ঢোকানো ও বেরোনের সময় অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে বাস চালকদের। বাসস্ট্যান্ডের বেশিরভাগ অংশ প্রোমোটার বিক্রি করে দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ বাস মালিক সমিতির।