Date : 2024-04-25

অনাথ শিশুকে বিচার পাইয়ে দিতে এজলাস থেকে জেলা বিচারকে ফোন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের

ষষ্ঠী চট্টোপাধ্যায়, সাংবাদিক : নির্দেশ যথাযথ ভাবে পালন না করায় এজলাসে বসেই নিজের মোবাইল থেকে সটান পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা জজকেই ফোন করে বসলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। শুধু তাই নয় এক মাতৃহারা নাবালক নিম্ন আদালতে মামলার খরচ যোগাতে না পারছে না শুনে হাইকোর্টের একজন আইনজীবীকে ওই নাবালকের হয়ে নিখরচায় মামলায় সাহায্য করার নির্দেশ দিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।
ঘটনা হল, ওই নাবালকের মা মৌসুমী দে ছিলেন স্কুল শিক্ষিকা।

২০১০ সালে তিনি নিজের স্বামী পুষ্পেন্দু মাইতির হাতেই খুন হন বলে অভিযোগ। নাবালকের বয়স তখন এক। বাবা সন্তানের দায়িত্ব না নেওয়ায় তার ঠাঁই হয় মামাবাড়িতে দাদুর কাছে। তখন থেকে দাদুই ছিল নাবালকের আইনি অভিভাবক। কারন বাবা নাবালকের দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করে। অভিযোগ, মায়ের মৃত্যু হলেও তার কর্মকালীন কোন সুবিধা ই স্কুল শিক্ষা দপ্তর মিটিয়ে দেয় নি। নাবালকের বাবা যেহেতু ততদিনে অন্য করে ফেলেছে তাই মায়ের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা ওই নাবালকেরই। সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ায় এবার দাদুর মাধ্যমেকলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় ওই নাবালক। কিন্তু মামলা চলাকালীন দাদু শংকর দে-র মৃত্যু হয়।

আর্থিক অনটন তো ছিলই এবার অথৈ জলে পড়ে ওই নাবালক। এখন তার বয়স তেরো। ইতিমধ্যে মামলাটি বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে এলে নাবালকের আইনজীবী সারওয়ার জাহানের কাছ থেকে সমস্ত বৃত্তান্ত শুনে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দেন পশ্চিম মেদিনীপুর নিম্ন আদালতে নাবালকের অভিভাবক হওয়ার জন্য আবেদন জানাবেন তার দিদা। আদালত আবেদন পাওয়ামাত্রই দু’মাসের মধ্যে তার নিষ্পত্তি করবে।
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এই নির্দেশমতো গত ২৬ এপ্রিল নিম্ন আদালতে আইনি অভিভাবকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন জানান নাবালকের দিদা। দেখা যায় দুমাসে বিষয়টি নিষ্পত্তি তো দূরের কথা দু মাস পেরিয়ে ২৬ মামলার শুনানির দিন ধার্য করেছে নিম্ন আদালত।

এখানেই শেষ নয় আর্থিক নাবালক পশ্চিম মেদিনীপুরের নিম্ন আদালতে আইনজীবীদের কাছে সাহায্য চাইতে গেলে তারা তাকে মুখের উপর জানিয়ে দেয় ১০০ টাকায় মামলা হয়না। বৃহস্পতিবার বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসের মামলাটি উঠলে সমস্ত টা শোনার পর রীতিমত বিরক্তি প্রকাশ করেন বিচারপতি। বলেন, সত্যিই তো এদেশে ১০০ টাকায় মামলা হয়না লাখ টাকা দিলে তবে মামলা হয়।

এরপরই কেন নিম্ন আদালত তাঁর নির্দেশ পালন করেনি তা জানতে নিজেই নিজের মোবাইল ফোন থেকে পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রধান বিচারককে ফোন করেন। বলেন এক মাতৃহারা নাবালক তার বিষয়টি নিষ্পত্তি করার জন্যই নির্দেশ দেয়া হয়েছিল সম্পূর্ণটা মানবিকভাবে ও তো দেখতে হবে আপনাদের! এরপরই হাইকোর্টের আইনজীবী সঞ্জয় সাহা কে বিচারপতি নির্দেশ দেন তিনি যাতে ওই নাবালকের হয়ে মামলাটি করেন এবং নিখরচায় তাকে সবরকম সাহায্য করেন। নিম্ন আদালতের বিচারকেও বিচারপতি ফের নির্দেশ দেন, আবেদন পাওয়া মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে বিষয়টি শুনানি করে নিষ্পত্তি করতে হবে। ১৯ মে মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। সেদিন গোটা বিষয়টি দেখে নাবালকের মায়ের সমস্ত বকেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে আদালত।