Date : 2024-04-20

তীব্র গরমের পাশাপাশি যানজট, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শহরে বাড়তে থাকা দূষণ, ভবিষ্যতে আখেরে ক্ষতি আমাদেরই

শাহিনা ইয়াসমিন, সাংবাদিক:যানজটে বাড়ছে দূষণের মাত্রা। ফের হাঁপাচ্ছে কলকাতা। লকডাউনের জেরে অনেকটাই দূষণমুক্ত হয়েছিল শহর। কিন্তু লকডাউনের পরবর্তী সময়ে রাস্তায় যানবাহন যত বেড়েছে ততই বেড়েছে দূষণ। এবছর গ্রীষ্মের গরমও অন্য বছরের তুলনায় অপেক্ষাকৃত বেশি। এর পিছনে সামগ্রিকভাবে প্রাকৃতিক পরিশোধনকেই দেখছেন পরিবেশবিদরা।

তীব্র গরমের পাশাপাশি যানজট। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকা দূষণ। এই দুইয়ের চাপে নাকানিচোবানি খাচ্ছে কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গ। ২০২০-২০২১-এ লকডাউন পর্বের পরে কলকাতায় দূষণও বেড়েছে পাল্লা দিয়ে। পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে, শহরে যেখানে যতবেশি যানজট, সেখানেই দূষণের মাত্রা তত বেশি। সেইসঙ্গে তীব্র দহন। চলতি মরশুমে এপ্রিলই এখনও পর্যন্ত বছরের সেরা গরমের ইনিংস খেলেছে। পরপর তিনবছরে এপ্রিলের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৯-র পর আবহাওয়া ভাল ছিল। তা আবার উল্টোদিকে দৌড়চ্ছে৤দূষণের পরিমাণ বেড়েছে ছয়গুণেরও বেশি। কলকাতায় দূষণকে নিয়ন্ত্রণ করার মত ব্যবস্থা নেই।

দূষণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে জলাশয়ের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ৤বড় বড় শহরে যদি প্রচুর জলাশয় থাকে। তাহলে দূষিত পদার্থ থিতিয়ে পড়ে, কিন্তু সেই ব্যবস্থা নেই। জলাভূমি প্রায় শেষ হয়ে গেছে। সবুজ উদ্ভিদ তুলনামূলক কম। সবুজ উদ্ভিদ থাকলে প্রচুর পরিমাণে জলীয়বাষ্প তৈরি করতে পারে। তার ফলে জলীয় বাষ্পে অনেক সময় দূষিত পদার্থ থিতিয়ে নিচে পড়ে যায়। কিন্তু কলকাতাতে সেই সম্ভাবনা নেই। যানবাহন প্রচুর পরিমাণে কার্বন ডাইঅক্সাইড ও কার্বন মনোক্সাইড নিষ্কাশিত করে এবং তার সঙ্গে ধুলো ওড়ে৤ফলে যানবাহন যত বেশি চলবে ধুলো ওড়ার প্রবণতাটাও বেড়ে যায়। সবটা মিলেই দূষণ বাড়ার কারণ। লকডাউনে প্রকৃতি নিজের ক্ষত সারিয়ে নিচ্ছিল। বাড়ির মধ্যে জীবন কার্যত বন্দি হওয়ার কারণে রাস্তায় যানবাহন দেখা যায়নি। তার ফলে দূষণও কম হয়েছে। কার্বন প্রায় জিরো হয়ে গিয়েছিল। তার প্রভাব স্বরূপ স্বস্তির বাতাবরণ পেয়েছিল দেশবাসী। স্বাভাবিক ছন্দে জীবনযাপন হওয়ার পর দেখা গেছে দূষণ ফের বাড়ছে। তার কারণ স্বরূপ দেখা গেছে কালবৈশাখী দেরিতে এসেছে। পরিবেশবিদরা জানাচ্ছেন, কোনও একটা ভূমিভাগের উপরের বায়ুর চাপ বলয়গুলো জলীয় বাষ্পের যাতায়াতের পদ্ধতিকে নিয়ন্ত্রণ করে।

ভারত হল মৌসুমী জলবায়ুর দেশ তাই ভারতে জলবায়ু নিয়ন্ত্রিত হয় মৌসুমী বায়ুর দ্বারা। কিন্তু ঘটনাক্রমে বায়ুর চাপ বলয়গুলো নিয়ন্ত্রিত হয় ভূখন্ডের মধ্যে অবস্থিত কোনও মরু অঞ্চলের দ্বারা। মরুভূমি যত তপ্ত হবে তত বেশি সেখানে শক্তিশালী নিম্নচাপ তৈরি করবে। তার ফলে বৃষ্টিপাত, কালবৈশাখী ঘটে। কিন্তু ১৯৮৩ সাল থেকে রাজস্থানের থর মরুভূমিতে। পরিকল্পনামাফিক বৃক্ষরোপণের দ্বারা সবুজ করে দেওয়া হয়। যার ফলে থর মরুভূমির নিম্নচাপের প্রভাবটা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তার ফলে যে নিম্নচাপ হওয়ার কথা উত্তর-পশ্চিম ভারতে, সেই নিম্নচাপ কখনও মধ্য ভারতে, কখনও উত্তর ভারতে, কখনও আবার উত্তর-পূর্ব ভারতে কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। এর ফলে বায়ু প্রভাবের স্বাভাবিক ছন্দ ভেঙে গেছে । তার ফলেই কালবৈশাখী আসতে বিলম্বিত হচ্ছে। প্রকৃতিকে বাঁচালেই মানুষ বাঁচবে। কিন্তু কোথাও নিজেদের অজান্তে বা জেনেশুনে আমরাই ক্ষতি করে ফেলছি প্রকৃতির। এখন যদি জনগণ, প্রশাসন জেগে না ওঠে, তাহলে ভবিষ্যতে আখেরে ক্ষতি হবে আমাদেরই।