Date : 2024-03-28

রবীন্দ্রনাথের কৃষি ভাবনা, কৃষির মাধ্যমে পল্লীর পুনর্গঠন করে গিয়েছেন কবিগুরু

শাহিনা ইয়াসমিন, সাংবাদিক:-কৃষিকাজের মাধ্যমে পল্লীর পুনর্গঠন। আধুনিক কৃষিকাজের মাধ্যমে কৃষকদের দৈনন্দিন জীবনের মানোন্নয়ন। কখনও শিলাইদহ, কখনও পতিসর কিংবা শ্রীনিকেতন। শত ব্যস্ততার মধ্যেও কৃষিকাজে বিশেষ আগ্রহ দেখিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।


রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃজনশীলতা নিয়ে আজও চর্চার শেষ নেই। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন বিষয়ে রবীন্দ্রনাথের আগ্রহ ও শখ নিয়ে গবেষকরা নতুন নতুন তথ্যের সন্ধান করে চলেছেন। কৃষিকাজেও বিশেষ আগ্রহ ছিল তাঁর। গ্রামীণ কর্মসংস্থানে কৃষিকাজ ও প্রাণীপালনে জোর দিতেন তিনি। তাঁর সেই আগ্রহ ও ভালোবাসারই ফসল বোলপুরের শ্রীনিকেতন। কৃষক ও গৃহপালিত পশুর মঙ্গলসাধনে তিনি যা করেছেন তার সন্ধান পাওয়া যায় শ্রীনিকেতনে। এখানে কৃষিবিজ্ঞান ও প্রাণী বিজ্ঞান পড়ানো হয়। শুধু পড়াশোনা নয়, হাতেকলমে চর্চাও হয় এখানে। বিজলী পত্রিকার সম্পাদক মৃণালকান্তি বসুকে এক চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন, আমার মৃত্যুর পর যদি কেউ জিজ্ঞাসা করেন, আমি দেশের জন্য কী করেছি তা হলে পরলোক থেকে আমার উত্তর হবে শ্রীনিকেতন। যে দেশে মানুষ দু-মুঠো অন্নের জন্য কাঙাল, সেখানে তাঁর কর্তব্য কী? তারা যাতে দু-মুঠো খেতে পায়- তাঁর জন্য আমার আয়োজন শ্রীনিকেতন। রবীন্দ্রনাথের নাম উচ্চারিত হলেই একজন শহুরে মানুষ যে ভাবে মেতে ওঠেন, সেভাবে গ্রাম বাংলার একজন কৃষক মেতে ওঠেন না। কারণ আজও গ্রাম বাংলার কৃষক তাঁর সম্পর্কে ততটা জানেন না। রবীন্দ্রনাথ যে বীরভূমের শ্রীনিকেতনে এগ্রিকালচার, ডেয়ারি, পোল্ট্রি, ফিসারি, পটারি, কটেজ শিল্পের মাধ্যমে গ্রামোন্নয়নের কাজে নিজের জীবনের একটা বড় অংশ ও সময় দিয়ে গেছেন তা তাঁরা জানেন না।


প্রথমে প্রাণী চিকিত্সা বিজ্ঞানের ছাত্র রূপে ও পরে ব্যক্তি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের টানে তাঁকে নিয়েও গবেষণা করেছেন উত্তর কলকাতার সমীর শীল। কৃষিকাজেও বিশেষ উত্সাহ ছিল রবীন্দ্রনাথের। ১৯০৫-০৬ সালে আমেরিকা থেকে সবুজ গো-খাদ্যের বীজ আনিয়ে শিলাইদহে প্রথম বাঙালি হিসেবে উন্নত গো-খাদ্য বা সবুজ ঘাস চাষ করেন এই কৃষক রবীন্দ্রনাথ। কবিগুরুর প্রচেষ্টা ও উদ্যোগে দুধের জন্য ডেয়ারি বসানো হয়। এছা়ড়া উন্নত প্রজাতির গাভি, বলদ ও মুরগি বিদেশ থেকে আনিয়েছিলেন তিনি। ১৯২২ সালে ডেয়ারি স্থাপিত হয় শ্রীনিকেতনে। হাল টানার জন্য কঙ্করেজ প্রজাতির বলদ ও দুধের জন্য রেড সিন্ধ্রি প্রজাতির গাভি আনা হয়। এরপর শ্রীনিকেতনে পোল্ট্রিও স্থাপিত হয়। ১৯২৪ সালে ডিমের জন্য লেগ হর্ন, রোড আইল্যান্ড রেড এবং ব্ল্যাক মিনর্কা প্রজাতির মুরগি আনা হয়৤ উনবিংশ শতকে শিক্ষিত বাঙালির পড়াশোনা মানেই বিদেশে গিয়ে ব্যারিস্টারি বা ডাক্তারি পড়া। কিন্তু সেই আমলে রবীন্দ্রনাথ তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র ও কনিষ্ঠ জামাতাকে পাঠান কৃষিবিদ্যা পড়াতে। ১৯৪১ সালে তাঁর মৃত্যুর আগে পর্যন্ত মানব সমাজের উন্নতির কথা ভেবেই গিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। বাংলার কৃষক তাই আজ সগর্বে বলুক- রবীন্দ্রনাথ- উনিতো আমাদেরই লোক।