Date : 2024-03-28

৯৯ এ, বিধান সরণি, রবীন্দ্র স্মৃতিধন্য মন্মথ কেবিন,হারিয়ে যেতে বসেছে সেই কেবিন

শাহিনা ইয়াসমিন, সাংবাদিক: নাম মন্মথ কেবিন। ঠিকানা ৯৯ এ বিধান সরণি। এই বাড়ির মধ্যেই ছিল মন্মথ কেবিন ও কুমিল্লা ব্যাঙ্ক। ব্যাঙ্কে কাজের প্রয়োজনে আসতেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সেইসময় তিনিও বেশ কয়েকবার গিয়েছিলেন মন্মথ কেবিনে। ঐতিহাসিক সেই মন্মথ কেবিনই এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। ৯৯ এ, বিধান সরণি। উত্তর কলকাতার এই ঠিকানায় ছিল মন্মথ কেবিন। বর্তমানে যার টিকিও দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। বেআইনি ভাবে দখল করে সেখানে এখন তৈরি হচ্ছে বাড়ি। প্রায় ১২০ বছরের এই ঐতিহ্যমন্ডিত বাড়ির মধ্যেই ছিল মন্মথ কেবিন। যার মালিক ছিলেন মন্মথ নাথ নন্দী। ১৯২০ সালে নিজের নামে মন্মথ কেবিন চালু করেছিলেন তিনি। প্রথমদিকে খোলার চালের বাড়ি ছিল। পরে তিরিশের দশকে দোতলা বাড়ি তৈরি করেন। সেই বাড়ির দোতলায় ছিল কুমিল্লা ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক। বহু বিশিষ্ট ব্যক্তির সেই ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট ছিল।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও কুমিল্লা ব্যাঙ্কের অন্যতম আমানতকারী ছিলেন। ইতিহাস বলছে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কুমিল্লা ব্যাঙ্কে আসতেন। ব্যাঙ্কের কাজের ফাঁকে যেতেন মন্মথ কেবিনে। কুমিল্লা ব্যাঙ্কের ঠিক নিচেই ছিল মন্মথ কেবিন। সেই কেবিনে চায়ের পাশাপাশি পাওয়া যেত জলখাবারও। মন্মথ কেবিনে আসতেন বিধানচন্দ্র রায়, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, শিবদাস ভাদুড়ি৤আসতেন কবি, সাহিত্যিক, খেলোয়াড়, রাজনীতিবিদরা। সেই সময় মন্মথ কেবিন ছিল আড্ডা ও সংস্কৃতির পীঠস্থান ছিল। 1941 সালে মন্মথ নাথ নন্দী প্রয়াত হন। কুমিল্লা ব্যাঙ্ক বন্ধ হয়ে উঠে যায় ১৯৫৬ সালে। মন্মথের অবর্তমানে কেবিনের দায়িত্ব নেন তাঁর ছেলে আশুতোষ নন্দী। পরবর্তীকালে দায়িত্ব নেন আশুতোষের কনিষ্ঠ পুত্র অশোক কুমার নন্দী। করোনাকালের আগে পর্যন্ত স্বমহিমায় চলছিল মন্মথ কেবিন অশোক কুমার নন্দী মারা যাওয়ার পর, লোভী, দুর্নীতিপরায়ণ শক্তির অনৈতিক পদক্ষেপে মন্মথ কেবিন নিজের অস্তিত্ব হারাতে বসেছে।

মন্মথ কেবিন যে বাড়িতে ছিল, সেই বাড়ির একাংশের এখন দৈন্যদশা। সেখানে বর্তমানে বসবাস করছেন বাড়ির প্রয়াত অশোক কুমার নন্দীর স্ত্রী পৃথা নন্দী। পৃথাদেবীই বর্তমানে এই বাড়ির একমাত্র উত্তরাধিকারী। অগোছালো অবস্থা ঘরের ভিতরের। যেনতেন প্রকারেণ বসবাস করছেন পৃথাদেবী। যে বাড়ির একাংশে মন্মথ কেবিন ছিল, সেই বাড়িটি বেআইনিভাবে দখল করেছে একজন ভাড়াটিয়া। সেই ভাড়াটিয়া বাড়িটি ভেঙে নতুন করে তৈরি করছেন বলে অভিযোগ নন্দীর পরিবারের সদস্যদের। এই পুরো ঘটনাটির পিছনে মদত রয়েছে নামীগুণী ব্যক্তিরা এমনটাই জানালেন প্রয়াত অশোক কুমার নন্দীর স্ত্রী পৃথা নন্দী। একশো বছরের বেশি সময়ের ইতিহাসয হেরিটেজ তকমা পাওয়া মন্মথ কেবিন সহ পুরো বাড়ি ফিরে পাওয়ার লড়াই আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। পৃথা নন্দী ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা জানান যতদূর যাওয়া যায় তাঁরা যাবেন।
অর্থের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে ঐতিহ্য কি হেরে যাবে ? কলকাতার অন্যতম ঐতিহ্যমন্ডিত মন্মথ কেবিন যে বাড়িতে ছিল, রবীন্দ্রনাথের পায়ের ধুলো পড়েছিল যে বাড়িতে সেই বাড়ি কি হারিয়ে যাবে ? যদি সত্যিই তেমনটা হয়, তা দেশ তথা বাঙালি জাতির জন্যই তা হবে এক চরম আঘাত।