Date : 2024-04-24

নার্সদের অবদান, অসুস্থ রোগীদের প্রতি তাদের কর্তব্যের কথা তুলে ধরে বিশ্ব নার্স দিবস পালন আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের

নাজিয়া রহমান, সাংবাদিক:-১২মে বিশ্ব নার্স দিবস হিসেবে পালিত হয়।আধুনিক নার্সিংয়ের প্রতিষ্ঠাতা ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের জন্মদিনটিকেই ইন্টারন্যাশনাল নার্সিং ডে হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে।সেবিকাদের সম্মানে উৎসর্গ করা হয়েছে এই দিনটি। বৃহস্পতিবার সাড়ম্বরে এই দিনটি পালন করল আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের নার্সিং বিভাগের তরফ থেকে এদিন একটি পদযাত্রার আয়োজন করা হয়। পার্ক সার্কাসের আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে পদযাত্রা শুরু হয়। পদ্মপুকুর হয়ে ক্যাম্পাসে এসে সেই পদযাত্রা শেষ হয়। বিভিন্ন পোস্টারের মাধ্যমে নার্সদের অবদান, অসুস্থ রোগীদের প্রতি তাদের কর্তব্যের কথা তুলে ধরা হয়।


১৮২০ সালে ১২মে ইতালির এক অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল। যিনি আধুনিক নার্সিংয়ের প্রতিষ্ঠাতা। সমাজ সংস্কারক ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল স্বাস্থ্যক্ষেত্রে উন্নতির জন্য উৎসর্গ করেছিলেন নিজের জীবন।


১৭ বছর বয়সে ডার্বিশায়ার থেকে লন্ডনে আসেন ফ্লোরেন্স। সেই সময়ে লন্ডনের হাসপাতালগুলোর করুণ অবস্থা তাকে ব্যথিত করে। সেই সময় সেবিকার কাজে কেউ যোগ দিত না। তেমন সম্মানও ছিল না এই কাজে। তাই এই কাজ করা থেকে বিরত থাকত মেয়েরা। কিন্তু ফ্লোরেন্স মনে করতেন তাঁর জন্ম সেবিকা হওয়ার জন্যই। তাই এই কাজ করার জেদ ও আগ্রহ জাগে তার মনে। প্রথমে তাঁর বাবা মা এই কাজ করতে তাঁকে বাধা দেন। কিন্তু ফ্লোরেন্স তাঁর সংকল্পে অনড় থাকেন। তাঁর জেদের কাছে হার মানেন তাঁর বাবা মা। এই কাজে লিপ্ত হতে ফ্লোরেন্সকে অনুমতি দেন তাঁরা। ফ্লোরেন্স তাঁদের অনুমতি নিয়ে ১৮৫১ সালে নার্সের প্রশিক্ষণ নিতে জার্মানিতে উড়ে যান তিনি। সেখানে নার্স প্রশিক্ষণের জন্য তহবিল সংগ্রহের কাজ শুরু করেন তিনি। সংগ্রহ করা অর্থ দিয়ে হাসপাতালে নার্সিংকে সম্পূর্ণ পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ১৮৬০ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘নাইটিঙ্গেল ট্রেনিং স্কুল’। যার পরবর্তী নাম ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল স্কুল অব নার্সিং’ হয়। ডা. এলিজাবেথ ব্ল্যাকওয়েলের সঙ্গে যৌথভাবে ১৮৬৭ সালে নিউইয়র্কে চালু করেন ‘উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজ’।

ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল ক্রিমিয়ার যুদ্ধের সময় অন্যতম ব্যক্তিত্ব হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। এই যুদ্ধেই নার্সিং ইতিহাসে বৈপ্লবিক উন্নয়ন ও পরিবর্তন ঘটেছিল। অপর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা ও সৈন্যদের খারাপ অবস্থা দেখে, ৩৮ জন সেবিকাসহ সৈন্যদের সেবা করার জন্য এগিয়ে আসেন ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল। দু’দেশের আহত মুমূর্ষু সৈন্যদেরই দিনরাত ধরে প্রাণ ঢেলে সেবা করেন তিনি। গভীর রাতে হাসপাতালের করিডোরে রোগীদের প্রয়োজন দেখতে হাতে মোমবাতি নিয়ে তিনি হেঁটে বেড়াতেন। তাঁর এই মমতাময়ী রূপের জন্য এখনও মানুষ স্মরণে রেখেছেন লেডি উইথ দ্যা ল্যাম্প-কে। আর তাই সেই মহীয়সীর জন্মদিনকে বেছে নেওয়া হয়েছে বিশ্ব নার্স দিবস হিসেবে।এই দিবসটি ১৯৭৪ সালে ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল ফর নার্সেস ঘোষণা করে। আধুনিকতম স্বাস্থ্য পরিষেবা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, রোগীদের চাহিদা সম্পর্কে ওয়ার্কশপ ও সেমিনারের আয়োজন ইত্যাদির মাধ্যমে পালন করা হয় দিনটি। প্রতিটি দেশ নিজের নিজের মত করে পালন করে এই দিনটি।

আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ নার্সিং বিভাগ। বিভিন্ন জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে মেয়েরা দক্ষ সেবিকা হওয়ার আশায় এখানে পড়তে আসেন। তাদের মধ্যে অনেকেই নানা প্রতিকূলতাকে জয় করে নার্সিং প্রশিক্ষণ নেন। বৃহস্পতিবার আলিয়ার ছাত্রীরা নার্সিং ডে তে এক আলোচনা সভা ও পদযাত্রার মাধ্যমে ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলকে শ্রদ্ধা জানায়।