Date : 2024-03-28

রাত পোহালেই জামাইষষ্ঠী

পৌষালি সেনগুপ্ত,নিউজ ডেস্ক:- কথায় বলে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বন। সারা বছরই কিছু না কিছু অনুষ্ঠান চলতেই থাকে বাঙালির ঘরে। গ্রীষ্মকালে বাঙালির ঘরে ঘরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের পাশাপাশি অন্যতম জামাইষষ্ঠী। এই দিনটিকে কেন্দ্র করে বাঙালি শ্বশুর শাশুড়ির মধ্যে উন্মাদনা থাকে অন্যরকম। আদরের জামাইকে শ্রেষ্ঠ জিনিষ দিয়ে, খাইয়ে তাঁরা জামাইকে খুশী করে। লক্ষ্য একটাই। তাঁদের আদরের মেয়ে যেন যত্নে থাকে। এই উতসবের পিছনেও রয়েছে প্রাচীন এক ইতিহাস। এক সময়ে সংস্কার ছিল যে ভারত তথা দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে মেয়ের বিয়ের পর তার বাবা বা মা-মেয়ের বাড়িতে তত দিন পর্যন্ত যেতে পারবেন না, যত দিন না মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা হন বা সন্তানের জন্ম দেন।জামাইষষ্ঠী মূলত লোকায়ত প্রথা। ষষ্ঠীদেবীর পার্বণ থেকেই এই প্রথার উদ্ভব। প্রতি বছর জ্যৈষ্ঠ মাসের ষষ্ঠী তিথিতে প্রথম প্রহরে ষষ্ঠীদেবীর পুজোর আয়োজন করা হত। ষষ্ঠীদেবী মাতৃত্বের প্রতীক। তাঁর বাহন বিড়াল। তাই মেয়ের মুখ দেখতে এবং মেয়ের দ্রুত সন্তান লাভের কামনায় মেয়ে জামাই আদরের পরিকল্পনা করা হলে জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লা তিথিতে পালিত হয়ে আসছে জামাইষষ্ঠী উৎসব।জামাইষষ্ঠীর দিন জামাইয়ের হাতে হলুদ মাখানো সুতো বেঁধে দেওয়া হয় মা ষষ্ঠীর আর্শীবাদ রূপে। এরপর দীর্ঘায়ু কামনায় তেল-হলুদের ফোঁটা কপালে দিয়ে তালপাতার পাখা দিয়ে বাতাস করা হয়। ধান-দূর্বা দিয়ে আশীর্বাদ করা হয়। সঙ্গে একটি থালায় সাজিয়ে দেওয়া হয় পাঁচটি বিভিন্ন রকমের গোটা ফল। এ তো গেল পুজোর রীতিনীতি। জামাইষষ্ঠীর আসল চমক হল জামাইয়ের জন্য শাশুড়ি মায়ের নিজের হাতে রান্না করা পঞ্চব্যাঞ্জন। বিভিন্ন ধরনের মাছ, মাংস, মিষ্টির এলাহি আয়োজন। এখন অবশ্য উপহার দেওয়া নেওয়ারও একটা পর্ব থাকে। নিয়মকানুন, রীতিনীতি, খাওয়াদাওয়া, উপহার আদানপ্রদানের ভিড়ে এই উৎসবে মিশে থাকে সারা বছর ব্যস্ততার কারণে মেয়ে জামাইকে কাছে না পাওয়া মায়ের আবেগও। জামাইষষ্ঠী মানেই সাদা ফিনফিনে মালকোচা মারা ধুতি পরে রসগোল্লার হাঁড়ি হাতে জামাই বাবাজি। এই ছবির বদল হয়েছে অনেকটাই। এই জেট যুগে সেই ছবির বদল হয়েছে অনেকটাই। শ্বশুর শাশুড়িরা এই ব্যস্ততম যুগে আপ্যায়ণ করে খাওয়ানোর সুযোগ তেমন পান না। তবুও চেষ্টা করেন নিজেদের ভালোটুকু দিয়ে আদরের জামাইকে আপ্যায়ণ করার।