Date : 2024-03-28

গিরিশ ঘোষের পাড়ায় রামকৃষ্ণ। খিদে মেটাতে ভিক্ষাবৃত্তি নয়, খেটে খেয়ে বাঁচার ওপর বিশ্বাসী রামকৃষ্ণ বিশ্বাস

শাহিনা ইয়াসমিন, সাংবাদিকঃ জীবন মানে সুখ দুঃখের ওঠানামা। যেখানে অনেক ঝড় ঝাপটা। তার মধ্যে নিজেকে টিকিয়ে রাখাই হল জীবনের আসল লড়াই৤ সেই লড়াইয়ে প্রতি মূহুর্তে পরীক্ষা দিয়ে চলেছেন রামকৃষ্ণ বিশ্বাস।
বার্ধক্যের চাপে ন্যুব্জ নন তিনি। সময় ও কাজের চাপই তাঁকে ন্যুব্জ করে দিয়েছে। দেখে মনে হয় সত্তরোর্ধ্ব। চোখে মুখে বয়সের ছাপ স্পষ্ট। কিন্তু বয়স মাত্র ৫৮ বছর। নাম রামকৃষ্ণ বিশ্বাস। গিরিশপার্কের মোড়ে ব্যস্ত রাস্তায় তাঁকে রোজই দেখতে পাবেন। সকাল ১১ টা থেকে সন্ধে ৬ পর্যন্ত। সিগন্যালের কাছে দাঁড়িয়ে থাকেন। সিগন্যালের লালবাতিতে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িগুলোকে লাল কাপড় দিয়ে মুছতে থাকেন তিনি। পারিশ্রমিকও পান। যে যতটুকু দেয়, তিনি তাতেই সন্তুষ্ট। আগে অন্য কাজ করতেন। গত তিনবছর ধরে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত। গিরিশপার্কের কাছে ভাড়া বাড়িতে বাস রামকৃষ্ণবাবুর। বাবা, মা, স্ত্রী কেউ নেই তাঁর।

বারো বছরের ছেলেকে নিয়েই তাঁর সংসার। ছেলে দেব বিশ্বাসের হাতেই সারাদিনের পারিশ্রমিক তুলে দেন তিনি। পরিবারের অন্যান্য সদস্য থাকা সত্ত্বেও কারোর কাছে হাত পাততে নারাজ রামকৃষ্ণবাবু। পেটের খিদে মেটাতে খেটে খেয়ে বাঁচার উপর বিশ্বাসী তিনি।
দুবার টাইফয়েডের ফলে রামকৃষ্ণবাবুর শারীরিক অবস্থা ঠিক নেই। চোখে ঠিক করে দেখতে পান না। হাত কাপে তাঁর। শারীরিক অবস্থা খারাপ থাকা সত্ত্বেও ছেলের জন্য এবং বেঁচে থাকার তাগিদে তাঁর লড়াই চলছে। রামকৃষ্ণ বিশ্বাস খুবই ভালো ও সত মানুষ। এমনটাই জানান রামকৃষ্ণবাবুর বন্ধু শঙ্কর দাস।
রাস্তাঘাটে সচারচর আমরা দেখতে পাই ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবন কাটান অনেকে। কিন্তু রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের মতে ভিক্ষাবৃত্তি নয়, রোজগার করে জীবন কাটানোই উচিত সকলের। শারীরিক ক্ষমতা না থাকা সত্ত্বেও কীভাবে কাজ করে যেতে হয়, তার জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ রামকৃষ্ণ বিশ্বাস।