Date : 2024-04-19

প্রয়াত তরুণ মজুমদারের দেহদান, ফুল মালা ছাড়া শ্রদ্ধাজ্ঞাপন শিল্পীদের, তারপর এসএসকেএমে দেহদান

মাম্পি রায়, সাংবাদিক : প্রায় 20দিনের লড়াইয়ের পরও শেষরক্ষা হল না। 91বছর বয়সে প্রয়াত হলেন পরিচালক তরুণ মজুমদার। বরাবর বামপন্থী মনোভাবাপন্ন এই পরিচালক মরনোত্তর দেহদানের ইচ্ছেপ্রকাশ করেছিলেন। ফুলমালা দিয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের বিষয়টিও তাঁর পছন্দ ছিল না। শিল্পীর শেষ ইচ্ছাকে সম্মান দিয়েই এনটিওয়ান স্টুডিওতে শেষ শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করলেন শিল্পীরা। তারপর চিকিৎসা বিজ্ঞানের স্বার্থে এসএসকেএমে দান করা হয় তরুণ মজুমদারের দেহটি।

প্রায় 20দিনের লড়াইয়ের অবসান। 91বছরে প্রয়াত পরিচালক তরুণ মজুমদার। কেমিস্ট্রির ছাত্র হলেও, তীব্র আকর্ষণ ছিল ফিল্ম মেকিংয়ে। সেই ইচ্ছে থেকেই যাত্রিক নামক একটি দল গঠন করে চলচ্চিত্র পরিচালনার কাজ শুরু। তারপর একের পর এক ভিন্ন স্বাদের ছবি উপহার দিয়েছেন তরুণ মজুমদার। কাঁচের স্বর্গ, দাদার কীর্তি, ফুলেশ্বরী, আলো সহ একাধিক ছবি দাগ কেটেছে সিনেপ্রেমীদের মনে। তাঁর প্রয়াণের সঙ্গেই একটা গোটা যুগের অবসান হল। শোকের ছায়া নেমে আসে চলচ্চিত্র জগতে। শোকপ্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শোকবার্তায় তিনি জানান –
বিশিষ্ট চিত্রপরিচালক তরুণ মজুমদারের প্রয়াণে গভীরভাবে শোকাহত। ভিন্নধারার রুচিসম্মত সামাজিক চলচ্চিত্র নির্মাণে উজ্জ্বল নিদর্শন রেখেছেন এই বিশিষ্ট পরিচালক। তাঁর ছবিতে রবীন্দ্র সঙ্গীতের প্রয়োগ দর্শককে আবিষ্ট করে রাখে। পদ্মশ্রী, জাতীয় পুরস্কার, বিএফজেএ, ফিল্মফেয়ার ।ওয়ার্ডে সম্মানিত হয়েছেন তিনি। তরুণ মজুমদারের প্রয়াণ চলচ্চিত্র জগতের এক অপূরণীয় ক্ষতি। শিল্পীর পরিবার-পরিজন ও অনুরাগীদের সমবেদনা জানাই।
দীর্ঘদিন ধরে কিডনি ও ফুসফুসের অসুখে ভুগছিলেন তরুণ মজুমদার। একাধিক বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি।
14জুন গুরুতর অসুস্থ হয়ে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি হন। নিউমোনিয়া ধরা পড়ে। কাজ করছিল না কিডনিও। জল জমেছিল ফুসফুসে। এখানেই শেষ নয়, ওঠানামা করছিল ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা। বাধ্য হয়ে শিল্পীকে ভেন্টিলেশনে দেন চিকিৎসকরা। লাগানো হয় রাইলস টিউব। জুনের শেষে ভেন্টিলেশন থেকে বের করে আনা হয় তাঁকে। খুলে দেওয়া হয় রাইলস টিউবও। শনিবার থেকে অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। সম্পূর্ণ ভেন্টিলেশনে রাখা হয় শিল্পীকে। রবিবার মধ্যরাত থেকে অবস্থা আরও খারাপ হতে শুরু করে। সোমবার সকাল থেকে কমতে শুরু করে পালস রেট। অক্সিজেন দেওয়ার চেষ্টা হলেও, তা নিতে পারেননি শিল্পী। সোমবার বেলা 11.17 মিনিটে মৃত্যু হয় তাঁর। চিকিৎসকরা জানান, কার্ডিও পালমোনারি ফেলিওর-এর কারণে মৃত্যু হয় পরিচালক তরুণ মজুমদারের।
বরাবর বামপন্থী মনোভাবাপন্ন পরিচালক তরুণ মজুমদার মরণোত্তর দেহদানের ইচ্ছেপ্রকাশ করেছিলেন। সেইমতো সোমবার দুপুর 2টো নাগাদ তরুণ মজুমদারের চোখ থেকে কর্নিয়া সংগ্রহ করেন চিকিৎসকরা। 2টো 42 নাগাদ এসএসকেএম থেকে শিল্পীর দেহ বের করে আনা হয়। তারপর এনটিওয়ান স্টুডিওতে প্রায় আধঘণ্টা শায়িত রাখা হয় তাঁর নশ্বর দেহ। ফুল মালা দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনেও আপত্তি ছিল তাঁর। তাই এনটিওয়ান স্টুডিওতে ফুল মালা ছাড়াই তাঁকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন কলাকুশলীরা। তারপর ফের এসএসকেএমে ফিরে নিয়ে যাওয়া হয় তরুণ মজুমদারের দেহ। চিকিৎসকরা। গবেষণার মতো বৃহত্তর স্বার্থে এসএসকেএমের । অ্যানাটমি বিভাগে সংরক্ষিত হবে প্রয়াত পরিচালকের দেহটি।