Date : 2024-04-25

বুকে গীতবিতান-গায়ে জড়ানো লাল পতাকা, ভালোবাসার বাড়ি ছেড়ে আলোর দেশে তরুণ মজুমদার

সায়ন্তিকা ব্যানার্জি, সাংবাদিকঃ আজীবন ভরসা ছিল বামপন্থায়। আর বামপন্থীরা নাস্তিক বরাবরই। আর সেই বাম পন্থা নিয়েই চলে গেলেন তরুন মজুমদার। বুকে রইল গীতবিতান গায়ে জড়ানো লাল পতাকা, নিথর তরুণ মজুমদার-এই ছবি যেন আজীবন গেঁথে গেল সবার মনে।

সোমবার সবার সব চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়ে না ফেরার দেশে চিত্র পরিচালক তরুণ মজুমদার। দীর্ঘ লড়াই শেষে মৃত্যুর কাছে হার মানলেন তিনি। কোনদিনই খুব উচ্চমানের জীবন যাপন করেনননি তাই শেষ যাত্রায়ও কোন আড়ম্বর থাক তা বলেছিলেন। তাই শেষ যাত্রায় তার সঙ্গী হল লাল পতাকা আর গীতবিতান। আর অগণিত মানুষের চোখের জল।
সত্যজিৎ-ঋত্বিক-মৃণাল-তপন সিনহা ছিল না বাঙালির। ছিলেন তরুণ মজুমদাররাও। যার ছবি দেখতে ভিড় জমাত সব বয়সিরাই। কেননা, সকলের জন্যই কিছু না কিছু থাকত সেই ছবিগুলিতে। সবথেকে বড় কথা, অন্ধকার হলে নায়কের ‘লার্জার দ্যান লাইফ বীরগাথা’র আবেদন ছাড়াও স্রেফ চেনা জীবনের গল্পকেও যে রূপকথা করে তোলা যায়, সেটাই তরুণ মজুমদারের ইউএসপি।

তিনি মৃত্যুর আগে শেষ ইচ্ছে জানিয়েছিলেন দেহদানের। সেই মতই এসএসকেএমেই তার দেহ দেওয়া হল পরিবারের তরফ থেকে। এদিন যখন এসএসকেএম থেকে বার করা হয় তার দেহ, দেখা যায় তার বুকের ওপর আছে গীতবিতান আর রয়েছে একটি লাল পতাকা।

আজীবন বামপন্থী ছিলেন তিনি। দলবদলের জমানায়ও দলের প্রতি ভালো বাসা অটুট ছিল তার। বামেই আস্থা ছিল তার। এদিন তার প্রয়াণের খবর পাওয়ার পর এসএসকেএম হাসপাতালে এসে উপস্থিত হন শতরুপ ঘোষ। ছিলেন কান্তি গাঙ্গুলি। তাদের চোখেমুখে স্বজন হারানোর যন্ত্রণা ছিল ভীষণ ভাবে।

গত ১৪ জুন থেকে শুরু হয়েছিল এক অসম যুদ্ধ। জীবনের শেষ লড়াইও জিতে ফিরুন তিনি এমন প্রার্থনা করছিলেন সবাই। চেষ্টা করছিলেন চিকিৎসকরাও। কিন্তু শনিবার থেকে ফের অবস্থার অবনতি হয় তার। ধরা পড়ে সেকেন্ডারি ইনফেকশন তারপর যমে মানুষে টানাটানি। রবিবার রাত থেকে অবস্থার আরও অবনতি। আর তারপর সোমবার সব শেষ!

বুকের মধ্যে গীতবিতান আর আজীবন ভরসা রাখা লাল পতাকা নিয়ে না ফেরার দেশে তরুন মজুমদার। তরুণ দেখিয়ে দিলেন সত্যিকারের রাজনীতি ভালোবাসলে আসলে সেই দলকে ছাড়া যায় না কিছুতেই। তাই তরুণও সেই ভালোবাসা নিয়েই ভালোবাসার বাড়ি ছেড়ে আলোর দেশে পাড়ি তরুণের।