Date : 2024-04-25

পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে পঞ্চায়েতের কাজের খতিয়ান। রাত পোহালেই রাজ্যে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল

সঞ্জু সুর, সাংবাদিক : কেন্দ্রীয় প্রকল্পের কাজের খতিয়ান পেতে রাজ্যে আসছে কেন্দ্রিয় প্রতিনিধিদল। মূলতঃ কেন্দ্রিয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের পক্ষ থেকেই এই প্রতিনিধিদলকে রাজ্যে পাঠানো হচ্ছে। সোমবার ২৫ জুলাই থেকে প্রায় এক মাস রাজ্যের ১৫ টি জেলায় একযোগে ঘুরে দেখবেন ৪৫ জনের এই প্রতিনিধি দল। যা একপ্রকার নজিরবিহীন বলেই মনে করছেন নবান্নের কর্তারা।

কেন্দ্রিয় প্রকল্পের নামকরণ নিয়ে শাসক বিরোধী চাপান উতর চলছে বেশকিছুদিন ধরেই। একদিকে বিরোধী দলনেতা যেমন প্রকাশ্যেই দাবি করেছেন কেন্দ্রিয় প্রকল্পের নাম বদল করা হলে সেই প্রকল্পের টাকা যাতে কেন্দ্র না দেয় তিনি তার ব্যবস্থা করবেন। উল্টোদিকে রাজ্যের বক্তব্য গুজরাটে গুজরাটি নাম হলে আপত্তি নেই, রাজস্থানে রাজস্থানী নাম হলে আপত্তি নেই, তাহলে বাংলায় বাংলা নাম হলে আপত্তি কেন !

এতদসত্ত্বেও সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গিয়েছে রাজ্যের বেশকিছু জেলায় “বাংলা সড়ক যোজনা”-র নাম পাল্টে সেখানে “প্রধানমন্ত্রী সড়ক যোজনা” বা “বাংলা আবাস যোজনা”-র নাম পাল্টে “প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ আবাস যোজনা” করা হয়েছে। যদিও এই বিষয়ে রাজ্য প্রশাসনের বক্তব্য ছিলো নবান্ন বা পঞ্চায়েত দফতর এমন কোনো নির্দেশ দেয় নি। এদিকে সম্প্রতি শাসকদলের ২১ জুলাই মঞ্চ থেকেও এই বিষয়ে তোপ দেগেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় ‌ তিনি বলেছিলেন, “গুজরাট, রাজস্থান, পাঞ্জাবের নাম থাকলে বাংলার নামে এত আপত্তি কেন? আপনারা যাই করুন না কেন, আমরা ঝুঁকবো না। আমাকে ইডি, সিবিআই দিয়ে ভয় দেখিও না, আমরা ভয় পাই না।” সেখানেই কেন্দ্রের প্রতি বঞ্চনার অভিযোগ হেনে তিনি বলেন, “একশো দিনের টাকা দিচ্ছে না। সব টাকা বন্ধ করে দিয়েছে। কেন ? বাংলা কে অর্থনৈতিক ভাবে ব্লকেড করে দিচ্ছে।”

মুখ্যমন্ত্রীর ঠিক আগেই বক্তব্য রাখতে উঠে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও সরাসরি কেন্দ্রকে আক্রমণ করে বলেন, “একশো দিনের টাকা কেন্দ্র বন্ধ করে দিয়েছে। বাংলা আবাস যোজনার টাকা বন্ধ করে দিয়েছে। এখন তো বিজেপির নেতা বলছে কেন্দ্রকে বলে বাংলার টাকা বন্ধ করে দিয়েছে। আমি তো এটাই এতদিন বলতে চেয়েছি। আপনারা নিশ্চিত থাকুন আমরা ভিখারির মতো কেন্দ্রের কাছে হাত পাতবো না। প্রধানমন্ত্রীর নামে নয়, আমরা জোর গলায় বলছি, প্রকল্প হবে বাংলার নামেই।”
রাজ্যের শাসক দলের প্রধান দুই নেতা ও নেত্রীর যখন এমন বক্তব্য ঠিক তখন এই কেন্দ্রিয় প্রতিনিধিদলের রাজ্যে আসা ও একটানা প্রায় একমাস রাজ্যের পনেরোটি জেলায় ভিজিট করা বিষয়টিতে অন্য মাত্রা যোগ করেছে। গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের থেকে পাঠানো এই পনেরোটি প্রতিনিধিদলের প্রতিটিতে ডিরেক্টর স্তরের একজন অফিসারের নেতৃত্বে আরো দুইজন আধিকারিক থাকবেন।

যে পনেরোটি জেলা তাঁরা ঘুরে দেখবেন সেগুলি হলো কালিম্পং, দুই দিনাজপুর, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, মূর্শিদাবাদ, বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, নদীয়া, দুই মেদিনীপুর ও দুই ২৪ পরগনা। সূত্রের খবর, গত ১৯ জুলাই দিল্লির কৃষি ভবন থেকে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক যে মেমোরান্ডাম পাঠিয়েছে তাতে পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে এই প্রতিনিধি দল মুলতঃ কি কারণে রাজ্যে আসছে। রাজ্যে মহাত্মা গান্ধী রেগা(REGA) প্রকল্পে একশো দিনের কাজ কেমন হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা(PMGSY), প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা-গ্রামীণ (PMAY-G)-র কাজের খতিয়ান নেবেন তাঁরা। প্রকল্পের উপভোক্তাদের অভিজ্ঞতা, প্রকল্পের সুবিধা পেতে কাউকে কোনো উৎকোচ দিতে হয়েছে কি না ইত্যাদি বিষয়গুলো খতিয়ে দেখবেন। প্রতিটি দল প্রতিটি জেলায় চারদিন(৪) ধরে অন্ততপক্ষে দুটি(২) ব্লকের চারটি(৪) গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা পরিদর্শন করবেন। ঘুরে দেখবেন অন্তত ছয়টি(৬) কাজের সাইট। কাজের খতিয়ান নেওয়ার পাশাপাশি তাঁরা ছবিও তুলে রাখবেন। কাজ শেষ হ‌ওয়ার দুই দিনের মধ্যে ছবি সহ সমস্ত রিপোর্ট গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদলের যে তালিকা পাঠানো হয়েছে সেই অনুযায়ী এই পঁয়তাল্লিশ জন আধিকারিক একসাথে রাজ্যে আসছেন না। প্রথম যে চারটি দল ২৫ জুলাই আসছেন তাঁরা ৩০ জুলাই পর্যন্ত রাজ্যে থাকবেন ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা, বাঁকুড়া, বীরভূম ও কালিম্পং জেলা পরিদর্শন করবেন। দ্বিতীয় চারটি দল রাজ্যে থাকবেন ১ আগষ্ট থেকে ৬ আগষ্ট পর্যন্ত। তাঁরা ঘুরবেন পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, উত্তর ২৪ পরগণা ও মুর্শিদাবাদ। ৭ আগষ্ট একটি দল শুধু আলিপুরদুয়ার পরিদর্শন করবেন। ৭ তারিখ থেকে ১২ আগষ্ট দুই দিনাজপুর ও নদীয়া ঘুরে দেখবেন আরো তিনটি দল। শেষ তিনটি দল রাজ্যে আসবেন ১৭ আগষ্ট। ২২ আগষ্ট পর্যন্ত তারা থাকবেন কোচবিহার, পুরুলিয়া ও ঝাড়গ্রাম জেলায়। ২০২৩ এ পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার আগে পঞ্চায়েতের উন্নয়নের সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত একশো দিনের কাজ হোক বা গ্রামীণ আবাস যোজনা, এইসব কাজের খতিয়ান নেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় দল পাঠানো যথেষ্ট ইঙ্গিতপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। এদিকে নবান্ন সূত্রে খবর, কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল যখন যে জেলায় থাকবে তখন সেই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁদের সঙ্গে যেন সামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যবহার করা হয়, সেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।