Date : 2024-04-23

প্রিয় শহরে চিরঘুমে ৫ বছরের সৌভিক সামন্ত।

শাহিনা ইয়াসমিন, সাংবাদিক:- ৫ বছরের সৌভিক আজও শিক্ষা দিয়ে চলেছে মেডিকেলের ছাত্রছাত্রীদের। সময় পেরিয়ে গেলেও বয়সটা তার ৫ বছরেই থমকে রয়েছে। সৌভিক এনআরএস মেডিকেল কলেজে সাড়ম্বরের সহিত আদরে ও যত্নে রয়েছে। কে এই সৌভিক ? তাঁকে নিয়ে আরপ্লাস নিউজে বিশেষ প্রতিবেদন।


এনআরএস মেডিকেল কলেজের অ্যানাটমি বিভাগে বাঁদিকের একটি ক্লাসরুম। সেখানে রয়েছে দুটি নরকঙ্কাল। একটি পূর্ণবয়স্কর আর একটি রয়েছে ছোট একটি শিশুর। পূর্ণবয়স্ক মানুষের কঙ্কালটি কাঁচের বাক্সে বন্দি নয়। কিন্তু শিশুদেহের কঙ্কালটি কাঁচের বাক্সে বন্দি। সেই বাক্সের ঠিক উপরেই চোখ মেললেই দেখা যাবে শিশুটির ছবি। ছবিটির দিকে তাকালেই মনে হবে শিশুটি আপনাদের দিকে যেন তাকিয়ে রয়েছে। কিছু বলতে চাইছে সে। শিশুটির দুটি চোখ তাঁর যন্ত্রণার ইতিহাস ব্যক্ত করছে। বাক্সবন্দি শিশুদেহের কঙ্কালের ঠিক পিছনেই রয়েছে একটি লেখা। লেখাটিতে রয়েছে হৃদয় বিগলতি কিছু কথা। শিশুদেহের এই কঙ্কালটি সৌভিক সামন্তের। আসানসোলের বাসিন্দা সে। সালটা ১৯৯৮, ২৯শে অক্টোবর পরিবারকে ছেড়ে চলে যায়। তখন তাঁর বয়স ছিল ৫ বছর। কাঁচের বাক্সের উপরেই সৌভিকের জন্মসাল ও মৃত্যু সাল লেখা রয়েছে। কি কারণে ছেড়ে চলে যেতে হল তাঁকে। সেই বিষয়টি জানালেন অ্যানাটমিক্যাল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া ওয়েস্ট বেঙ্গল চ্যাপ্টারের সভাপতি এবং অ্যানাটমি বিভাগের অধ্যাপক ডাক্তার অভিজিত্ ভক্ত। তিনি জানান অসুখ নিয়ে কলকাতায় আসে সৌভিক তার বাবার সঙ্গে। তারপর আর কলকাতা ছেড়ে যেতে হয়নি তাঁকে। এনআরএস মেডিকেল কলেজের অ্যানাটমি


বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা দিচ্ছে সৌভিক সামন্ত। বলা যেতেই পারে ২৪ বছর ধরে সৌভিক সামন্তের কঙ্কাল অ্যানাটমি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি নির্ণয় করার জন্য এনআরএস পড়ুয়াদের একমাত্র ভরসা। সাধারণ ভাবে পূর্ণবয়স্ক মানব কঙ্কাল পড়াশোনার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু কোনও বাচ্চার কঙ্কাল ব্যবহার করা হয়না। সেটি বই এবং মডেল থেকে পড়ানো হয়। কিন্তু এনআরএস এর ছাত্রছাত্রীরা পূর্ণবয়স্ক কঙ্কালের পাশাপাশি ৫ বছরের শিশু কঙ্কাল লাইভ দেখে পড়াশোনা করছে। অসুখ সারাতে এসে কলকাতা তাঁর প্রিয় জায়গা হয়ে উঠেছিল। সে চেয়েছিল কলকাতাতেই থেকে যাবে।

সেই স্বপ্নই পূরণ করল তাঁর বাবা। ছেলের মৃত্যুর পর সৌভিকের দেহদান করে দেন তিনি। তারপর থেকেই কলকাতাতে থেকে গেল সৌভিক। অঙ্গদান দিবসের পাশাপাশি সৌভিকের জন্ম ও মৃত্যুদিনেও তাঁকে স্মরণ করা হয়। সৌভিক এখন এনআরএস হাসপাতালের সম্পত্তি।