Date : 2024-04-25

সৎ মা তাঁকে আস্তাকুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল! মানবিক বিচারপতি তাঁকে দিল নতুন বাড়ির ঠিকানা

ষষ্ঠী চট্টোপাধ্যায়, সাংবাদিক : গল্প হলেও সত্যি। মা মারা যাওয়ার পর বাবা আবার বিয়ে করে।পরে বাবাও মারা যায়।বাবার মৃত্যুর পর বাবার চাকুরী পান সৎ মা। আগের পক্ষের একমাত্র ছেলে সমীর টিংকে বাড়ির পাশে একটি ত্রিপল টাঙিয়ে সেখানেই থাকতে দেয় সৎ মা।দাদু এবং নাতির বিষয়টি আদালত জানতে পারেন মামলার ভিত্তিতে।

ভালো পড়াশুনা করো আমরা সকলে করে তোমার সঙ্গে আছি।’ এক একাদশ শ্রেণীর পড়ুয়া আদিবাসী নাবালককে আদালতে ডেকে পরামর্শ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের। মামলার বয়ান অনুযায়ী দেবদুলাল দাস(নাম পরিবর্তিত)দশম শ্রেণীর নাবালকছাত্র আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল। তার অভিযোগ ছিল, তার বাবা একটি স্কুলে অসিক্ষক কর্মী ছিলেন। বাবার মৃত্যুর পর সেই চাকরি পান তার সৎ মা পিংকি রনি টিংগুয়া। চাকরি পাওয়ার সময় সর্ত ছিল মৃত স্বামীর পরিবারকে দেখভাল করতে হবে।

চাকরি পাওয়ার পরই বেলদা থানা এলাকায় তার বাপের বাড়ি চলে যায় পিংকি। মৃত স্বামীর পরিবারকে দেখা তো দূরের কথা তাদের কোনো খোঁজই নিত না পিংকি। বাড়ি ভেঙে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত পূর্ব মেদিনীপুরের ছতরী এলাকায় একটি বট গাছের তলায় একটি ত্রিপল টানিয়ে দাদু দয়ানন্দ টিংগুয়া কে নিয়ে বাস করতে শুরু করে সমীর। সেই অবস্থাতেই সে মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৮০% শতাংশের বেশি নম্বর নিয়ে পাস করে। কিন্তু দিন গুজরান করতে চূড়ান্ত সমস্যায় পড়ার কারণে শেষ পর্যন্ত হাই কোর্ট এর দ্বারস্থ হয়।

বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় সমস্ত বিষয় শুনে জেলা শাসক কে তাদের বাড়ি বানিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। সেইসঙ্গে জেলা শিশু কল্যাণ আধিকারিক কে সমীরের বিষয়টি দেখার নির্দেশের পাশাপাশি পিংকি কে প্রতিমাসে দেখভাল খরচ বাবদ সমীর কে ৭ হাজার টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেন।

বিশিষ্ট আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যের উদ্দেশ্য বিচারপতি পুর ঘটনার বিবরণ দেন।এবং বলেন এটা সঠিক হচ্ছে?বিকাশবাবু জানান সংবিধানের ২১নম্বর ধারা অনুযায়ী আদালত সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।আদালতের কাছে এটাই প্রত্যাশা করেন মানুষ। যেখানে সরকার ব্যর্থ, সেখানে আদালতকে এগিয়ে আসতে হবে।

বুধবার সমীরকে আদালতে ডেকে পাঠিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সমীর এদিন আদালতে জানায় এপ্রিল মাস থেকে সৎ মা তাকে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। শুধু তাই নয় পিংকি দ্বিতীয় বিয়ে করে পালিয়ে গিয়েছে। এরপরই ক্ষুব্ধ বিচারপতি পিংকির বেতন বন্ধের নির্দেশের পাশাপাশি তাকে ৩০ আগস্ট হাজিরার নির্দেশ দিয়েছেন। পূর্ব মেদিনীপুর এর পুলিশ সুপার কে হাজিরা নিশ্চিত করতে হবে। সেইসঙ্গে সমীর সাবালক না হওয়া পর্যন্ত এই মামলা নজরদারি করবে আদালত।