Date : 2024-04-24

শতাব্দী প্রাচীন শোনপাপড়ির দোকানের হালহকিকত

শাহিনা ইয়াসমিন, সাংবাদিক:-শোনপাপড়ি। নাম শুনলেই জিভে জল চলে আসে। বাঙালি তথা ভারতীয়দের একাংশের কাছেও এই মিষ্টি বেশ লোভনীয়। কলকাতার বুকেও বহু শোনপাপড়ির দোকান রয়েছে। তাদের মধ্যে অন্যতম নিউ শোনপাপড়ি শপ। একসময় বিদেশে পাড়ি দিয়েছে এই দোকানের শোনপাপড়ি। শতাব্দী প্রাচীন এই দোকানটি আজ স্রেফ টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। আমহার্স্ট স্ট্রিটের সেই দোকানের হাল-হকিকত জানতে পৌঁছে গেল আরপ্লাস নিউজ।


টাটকা…গরম শোনপাপড়ি তৈরির আদি ঠিকানা আমহার্স্ট স্ট্রিটে। আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার ঠিক উল্টোদিকের রাস্তা দিয়ে একটু এগোলেই রাস্তার বাঁ হাতে সবুজ কালচে রঙের দোকান। নাম নিউ শোনপাপড়ি শপ। দোকানের নামের শুরুতে নিউ কথাটি থাকলেও এই শোনপাপড়ির দোকানের বয়স ১০৩ বছর পুরনো। ছোট্ট টালির চালের ঘর। দোকানের ভিতরটা আলো আধাঁরি। ইতি উতি জিনিসপত্র ছড়ানো। অমলিন দোকানের ভিতরে মা কালির ছবি। তার পাশেই রয়েছে এই দোকানের স্রষ্টার ফ্রেমবন্দি দুটি ছবি। পান্নালাল পাল ও জহর লাল ঘোষ। দোকানের অন্দরমহলে পা রাখতেই মাটিতে রাখা বড় কাঠের বারকোশ।

এই বারকোশেই তৈরি হয় শোনপাপড়ি। রান্নাঘরে আগুনের আঁচে চলছে শোনপাপড়ি তৈরির বিভিন্ন প্রক্রিয়া। একদিকে চিনির পাঁক তৈরি হচ্ছে। অন্যদিকে শোনপাপড়ি তৈরির মূল উপকরণ বেসন ও ময়দা ভাজার কাজ। শোনপাপড়ি তৈরির গোটা প্রক্রিয়াটা কিন্তু হাতেই। বাপঠাকুরদার আমল থেকেই হাতে তৈরির প্রক্রিয়াই চলে আসছে। চিনির পাকে বেসন ও ময়দা ভাজার মিশ্রণ দিয়ে প্রথমে কাঠের হাতল দিয়ে পরে আলতো হাতে ধীরে ধীরে মেলাতে হবে। ফুলের রেণুর মতো ভাঙছে আবার গড়ছে। তৈরি হচ্ছে হাল্কা হলুদ রোয়া। রোয়াগুলি ছাড়িয়ে চারচৌকো কাঠের ব্লকে ফেলে ছুরি দিয়ে কেটে পিস পিস করে তুলে রাখা হচ্ছে টিনের বাক্সে। এইভাবেই চলে শোনপাপড়ি তৈরির কাজ। মাত্র চারজন কর্মী দিয়ে চলছে শোনপাপড়ি তৈরি। আগে ২২জন কর্মী কাজ করতেন। পা রাখা যেত না দোকানের ভিতরে। লকডাউনে কাজ কেড়েছে অনেকের। মার খেয়েছে শোনপাপড়ি ব্যবসা। বললেন দোকানের মালিক তপন ঘোষ। জিনিসের দাম বাড়ায় শোনপাপড়ির দামও বেড়েছে। দাম দাঁড়িয়েছে ২৮০ টাকা কিলো। বিদেশের মাটিতেও পা পড়েছে এই দোকানের শোনপাপড়ির। আমেরিকা, থাইল্যান্ড সহ বিভিন্ন জায়গায় গেছে এই শোনপাপড়ি, এমনটাই জানান তপনবাবু।ছোটবেলা থেকে এই দোকান থেকেই শোনপাপড়ি কিনছেন রঞ্জিত মল্লিক। গুণগতমান আজও একই। তাই এই স্বাদের টানে ছুটে আসা এখানে। জানান ক্রেতা রঞ্জিতবাবু। পাশাপাশি তিনি জানান বাঙালি হিসেবে তিনি গর্বিত নিউ শোনপাপড়ি শপ নিয়ে। ১৯ বছর বয়সে কলকাতায় পা রাখা হাওড়ার বাসিন্দা ও বর্তমান কর্ণধার তপন বাবুর। তারপর থেকেই কলকাতাতেই শোনপাপড়ির ব্যবসা করে চলেছেন তিনি। একদা গম গম করতে থাকা সেই দোকান এখন ধুঁকছে। কতদিন চালানো যাবে তা নিয়ে সংশয়ে কর্মচারীরাই।