Date : 2024-04-16

গরম জল পানের উপকারিতা ও সতর্কতা

সঞ্জনা লাহিড়ী, সাংবাদিক : শরীরের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে গরম জল। নিয়মিত গরম জল পানে শরীরের নানান রকম সমস্যা দূর হয়। গবেষণায় জানা গেছে, গরম জল পান করার ক্ষেত্রে ১৩০ ও ১৬০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রার মধ্যে থাকা সর্বোত্তম । এর বেশি তাপমাত্রায় পুড়ে যাওয়ার ভয় থাকে। গরম জল পানে রয়েছে এক গুচ্ছ উপকারিতা। আজ তাই নিয়েই আলোচনা করা যাক-
১. বন্ধ নাক খুলে যাবে: যদি আপনার সাইনাসের সমস্যা থাকে তাহলে গরম জল আপনার জন্য খুবই উপকারী। ধোঁয়া ওঠা এক কাপ গরম জল নাকের কাছে ধরে চায়ের মতো পান করুন। এতে যেটা হবে, আপনি যখন কাপে চুমুক দেবেন, গরম জলের স্টিম নাকে প্রবেশ করবে। এতে বন্ধ নাক খুলতে সাহায্য করবে। তাছাড়া গরম জল সাইনাসের কারণে সৃষ্ট মাথা ব্যথা কমাবে। গলা এবং নাকে আরাম দেবে।
সাইনাসের কারণে গলা এবং নাকে কফ জমে থাকতে পারে। গরম জল খেলে সেটা নরম হয়ে আসে। জায়গাটা গরম করে ব্যথা কমিয়ে আনবে।
২০০৮ সালের একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, ঠান্ডা লাগলে গরম জল বা তরল খাবার যেমন চা খুব দ্রুত ঠান্ডায় আরাম দেয়। যেমন গলা ব্যথা, নাক দিয়ে জল পড়া ইত্যাদি সমস্যার সমাধান করে।
২. হজম: গরম জল হজমে সাহায্য করে। গরম জল পান করলে সেটা পাকস্থলী এবং অন্ত্রের মধ্যে দিয়ে যায়। এতে শরীর ভালভাবে বর্জ্য অপসারণ করতে সক্ষম হয়। এছাড়াও বলা হয়, যে খাবারগুলো হজম করতে সময় লাগে বা একটু কষ্ট হয়, গরম জল পান করলে হজম সহজ হয়ে যায়।
তবে এই বিষয়ে আরও গবেষণা দরকার। ২০১৬ সালের একটি গবেষণা অনুসারে গরম জল অন্ত্রের নড়াচড়া এবং অস্ত্রোপচারের পরে গ্যাস নিষ্কাশনের ওপর অনুকূল প্রভাব ফেলতে পারে।
তবে আপনি যদি মনে করেন গরম জল হজমে সাহায্য করছে তাহলে খেতে পারেন। তবে সমস্যা হলে খাবেন না।
৩. কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতার উন্নতি: পরিমাণ মতো জল পান না করলে, শরীরের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। এর প্রভাব গিয়ে পড়তে পারে মেজাজ এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতার ওপর।
২০১৬ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে মেজাজ ঠিক রাখতে এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতায় গরম জল বেশ কার্যকর।
৪. কোষ্ঠকাঠিন্য উপশম করতে সাহায্য করে: ডিহাইড্রেশন বা দেহে জলশূন্যতা কোষ্ঠকাঠিন্যের একটি সাধারণ কারণ। অনেক ক্ষেত্রে, জল পান কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার এবং প্রতিরোধ করার একটি কার্যকর উপায়। নিয়মিত গরম জল পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
৫. শরীরে জলের মাত্রা ঠিক রাখা: ঠান্ডা জল দেহে জল শূন্যতা দূর করার জন্য সর্বোত্তম। তবে যে কোনও তাপমাত্রার জল পান আপনার শরীরে জলের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করবে। জল পানের পাশাপাশি ফল, সবজি এবং কিছু খাবারে জল থাকে। যাঁরা ভারী কাজ করেন বা গরম পরিবেশে কাজ করেন তাঁদের বেশি জলের প্রয়োজন হয়। এই ক্ষেত্রে সকালটা এক গ্লাস গরম জল দিয়ে শুরু করুন এবং দিনের শেষে আর এক কাপ গরম জল পান করুন। এতে শরীর সুস্থ থাকবে।
৬. মানসিক চাপ কমাতে: গরম জল শরীরের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা যেহেতু ঠিক রাখে, তাই মানসিক চাপও কমাতে সাহায্য করে। ২০১৪ সালের একটি গবেষণা অনুসারে, কম জল পান করার ফলে প্রশান্তি, তৃপ্তি এবং ইতিবাচক আবেগের অনুভূতি কমে যায়।
৭. রক্ত সঞ্চালন: শরীরে সুস্থ রক্ত ​​​​প্রবাহ, রক্তচাপ থেকে শুরু করে কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি পর্যন্ত সব কিছুকে প্রভাবিত করে গরম জল। হালকা গরম জলে স্নান করলে রক্ত ​​​​সঞ্চালন সারা শরীরে আরও ভালভাবে হয়। গরম জল পানেও এমন প্রভাব পড়ে বলে শোনা যায়। তবে খুব কম গবেষণায় আছে যে, এটি কার্যকর।
• সর্তকতা: অত্যধিক গরম জল পান করা আপনার খাদ্যনালীর টিস্যুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। জিহ্বা পুড়ে গেলে খাবারের স্বাদ নিতে অসুবিধা হতে পারে। যদিও গরম জল পান করার কোনও ক্ষতিকারক প্রভাব নেই তবুও সর্তক থাকুন।