Date : 2024-04-20

ধস্তা ধস্তি থেকে হাতাহাতি! বিচারপতি রাজা শেখর মান্থারএজলাস বয়কট নিতে তপ্ত রাজ্যের শীর্ষ আদালত।

ষষ্ঠী চট্টোপাধ্যায়, সাংবাদিক : সোমবার বিচারপতি রাজা শেখর মান্থার অপসারণ চাইলেন তৃণমূল পন্থী আইনজীবীরা।সকাল থেকেই১৩নম্বরের এজলাসের সামনে জমায়েত হয়েছিল বেশ কিছু আইনজীবী। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের পর এবার বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এজলাস বয়কটের দাবি তুলে বিক্ষোভ।এদিন বিচারপতি মান্থার এজলাসে গেট আটকে বিক্ষোভে শামিল হন আইনজীবীদের একাংশ। তিনি এজলাসে এসেও বিক্ষোভের জেরে চলে যান। যদিও পরে প্রধান বিচারপতি র নির্দেশ ফিরে এসেছিলেন বিচারপতি।

ঘরে বাইরে লেগেছে বিচারপতি রাজা শেখর মান্থার। তাতে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থারনামে পোস্টার। ছবি দিয়ে ইংরাজিতে লেখা – লজ্জা, বিচারব্যবস্থার নামে কলঙ্ক! কেউ আবার প্রশ্ন তুলেছেন – কোথায় আসল বিচার মিলবে? সেই পোস্টারের দেখতে পাওয়া যায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।পাশাপাশি পোস্টারের দেখা গিয়েছে ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদঅভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্যালিকা মানেকা গম্ভীরেরও।

হাইকোর্টে ঘটে যাওয়া ঘটনার বিরোধিতা করেন কংগ্রেসের লিগ্যাল সেলের কনভেনার আইনজীবী প্রতিপ চট্টোপাধ্যায় আইনজীবী সুমিত্রা নিয়োগী ভট্টাচার্য সহ অন্যান্য আইনজীবী রা। বামেদের সংগঠন ডেমোক্রেটিক ল সোসাইটি আইনজীবী সভ্যসাচী চট্টোপাধ্যায় শামীম আহমেদ তীব্র নিন্দার পাশাপাশি তৃণমূল কংগ্রেসের আইনজীবীদের করা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এই ধরনের ঘটনা পুনরাবৃত্তি ঘটলে আগামী দিনে ছেড়ে কথা বলা হবে না।

১৩ নম্বর কোর্ট বয়কট নিয়ে প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন কেন্দ্রের অ্যাসিস্ট্যান্ট সলিসিটর জেনারেল বিল্বদল ভট্টাচার্য। বর্ষীয়ান আইনজীবী তথা সিপিএম নেতা বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য প্রধান বিচারপতির এজলাসে গিয়ে বিষয়টি নিয়ে নিন্দাপ্রকাশ করেন। তাঁর আবেদন,বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিকে ডেকে প্রয়োজনে সুপ্রিম কোর্টে বিষয়টি তোলা হোক। এসব শুনে প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব বলেন, ”এটা উচিত নয়। সব তথ্য প্রমাণ নিয়ে আসুন। বারের সভাপতি ডেকে পাঠান। এই ঘটনা একেবারেই উচিত নয়। বিষয়টি আমরা দেখেছি।” এর ফলে বিচার প্রক্রিয়া থমকে যায় প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চেও।

প্রধান বিচারপতি বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেলকে ডেকে পাঠান। তাঁদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। বিচারপতির এজলাস কী ভাবে বয়কট করা যেতে পারে? সেই প্রশ্ন তোলেন তিনি। এজি প্রধান বিচারপতিকে জানান, ”আমি সবেমাত্র বিষয়টি জানতে পারলাম।” তাতে প্রধান বিচারপতি ভর্ৎসনার সুরে বলেন, ”কেন বুঝছে না? এসব বিষয় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গেলে সমস্যা তৈরি হবে। ছবি, ভিডিও সব রয়েছে। কেন সমস্যা ডেকে আনছেন?’ প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপে বয়কট তুলে নিলেও এজলাসে কিন্তু মামলার কোন রায় হয়নি। ৫০০ মামলা শুনানি হলেও কোন মামলারি নিষ্পত্তি হয় নিয়ে দিন।

হাইকোর্টে আইনজী মহলের একাংশের মত এইভাবে বিচারপতির কোর্ট বয়কট মানেই সাধারণ মানুষকে বিচার প্রক্রিয়া থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। করোনা অতিমারির পরে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরেছে বিচার ব্যবস্থা। এভাবে চলতে থাকলে আগামী দিনে সাধারণ মানুষের আস্থাকি আদৌ কি বিচার ব্যবস্থার ওপরে থাকবে প্রশ্ন তুললেন তারা।