সঞ্জু সুর, সাংবাদিক : বারবার আবেদন করার পরেও ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পাচ্ছেন না কৃষকরা। ফলে রবি চাষের মরসুম শুরুর মুখে আতান্তরে তারা। কৃষকদের এই সমস্যার কথা জানার পর তা মেটাতে উদ্যোগী রাজ্য সরকার। শুক্রবার কৃষি বিষয়ক এক বৈঠকে এই বিষয়টি সামনে এলে মুখ্যসচিব কৃষকদের এই সমস্যা মেটাতে প্রশাসনকে আরো উদ্যোগী হওয়ার নির্দেশ দেন। প্রয়োজনে ফেব্রুয়ারি মাসে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তিনি বৈঠক করবেন বলেও জানান।
কৃষি যন্ত্রপাতি কেনা থেকে শুরু করে উন্নতমানের বীজ, সার কেনা সহ বিভিন্ন পরিকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য ব্যাঙ্কে আবেদন করেও ঋণ পাচ্ছেন না অনেক কৃষক। ফলে ক্ষোভ বাড়ছে কৃষকদের মধ্যে। খরিফ মরসুম শেষে রবি শস্য চাষের মরসুম শুরুর মুখে। এমন অবস্থায় হাতে প্রর্যাপ্ত টাকা না থাকায় ও ব্যাঙ্কে ঋণের আবেদন আটকে থাকায় প্রভূত সমস্যা মুখে অনেক কৃষক। কৃষকদের এই সমস্যার ক্ষেত্রে সরাসরি রাজ্যের কোনো দায় না থাকলেও রাজ্য সরকার নিজ উদ্যোগে কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে চাইছে। সূত্রের খবর, শুক্রবার কৃষি আধিকারিক ও জেলাশাসকদের নিয়ে বৈঠকে মুখ্যসচিব জানিয়েছেন অবিলম্বে ব্যাঙ্কগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে এই সমস্যা মেটাতে হবে। কেন কৃষকদের ঋণের আবেদন গৃহীত হচ্ছে না, কেন আবেদন গৃহীত হওয়ার পরেও ঋণের অর্থ কৃষকদের অ্যাকাউন্টে ঢুকছে না, প্রয়োজনে জেলাশাসকদেরকে বিষয়টি দেখতে হবে।
জলপাইগুড়ি, নদীয়া, উত্তর ২৪ পরগনা, পুরুলিয়া, কোচবিহার, মুর্শিদাবাদ, উত্তর দিনাজপুর প্রভৃতি জেলায় কৃষকদের আবেদন রিজেক্ট হওয়ার সংখ্যা অনেক বেশি। সারা রাজ্যে যেখানে আবেদন গৃহীত না হওয়ার সংখ্যা ৩৪.৬ শতাংশ, তখন এই জেলাগুলোতে সেই সংখ্যা ৪০ শতাংশের বেশি। কেন এই জেলাগুলোতে আবেদন গৃহীত না হওয়ার সংখ্যা বেশি তা খতিয়ে দেখতে নির্দেশ মুখ্যসচিবের। প্রয়োজনে জেলাস্তরীয় যে মনিটরিং কমিটি আছে তাঁরা জেলার সব ব্যাঙ্ককে নিয়ে বৈঠক করে কেস টু কেস স্টাডি করুক। তারপর দরকারে উপভোক্তাকে সঙ্গে নিয়ে ব্যাঙ্কে গিয়ে সমস্যা সমাধান করতে হবে। সরকারি গাইডলাইন অনুযায়ী কৃষি ঋণের জন্য আবেদন করার ষাট দিনের মধ্যে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে সেই আবেদনে (ত্রুটিমুক্ত হলে) ছাড়পত্র দিতে হয়। কিন্তু প্রায় ৯৩ টা এমন কেস সামনে এসেছে যেখানে দেখা যাচ্ছে ত্রুটিমুক্ত আবেদনপত্র জমা দেওয়ার পরেও ষাট দিনের মধ্যে কৃষকরা টাকা পান নি। এই ধরনের যেসব কেস আছে সেগুলোকে দেখে নিয়ে ব্যাঙৃকের সঙ্গে কথা বলে জানুয়ারি মাসের মধ্যেই সেইসব কৃষকদের অ্যাকাউন্টে যাতে টাকা ঢোকে তার ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া ‘মাটির সৃষ্টি’ প্রকল্পের কাজে আরও বেশি গতি আনার নির্দেশ বৈঠকে দিয়েছেন মুখ্যসচিব। সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। এমনিতে আবাস যোজনা নিয়ে বেশ কিছুটা অস্বস্তিতে রয়েছে রাজ্য সরকার। তার সঙ্গে যদি কৃষকদের ক্ষোভ বাড়তে থাকে তাহলে তা রাজ্য সরকার ও রাজ্যের শাসকদলের কাছে আরও বেশি অস্বস্তিকর হবে তা বলাই যায়। আবাস যোজনার ক্ষোভ প্রশমনের কাজ তো চলছে, পাশাপাশি ব্যাঙ্ক ঋণ না পাওয়া নিয়ে সরকারের প্রতি যেন কৃষকদের ক্ষোভ না বাড়ে তার জন্যই নবান্নের এমন পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে।