Date : 2024-04-25

“রিমোট ভোটিং”-এ আপত্তি। কমিশনকে চিঠি দিয়ে জানালো তৃণমূল

সঞ্জু সুর, সাংবাদিক নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণ আর‌ও বেশি বাড়াতে “রিমোট ভোটিং” এর বিষয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন (Election Commission of India)। রিমোট ভোটিং নিয়ে দেশের সবকটি স্বীকৃত রাজনৈতিক দলের মত জানতে চাওয়া হয়েছিলো। এই বিষয়ে নিজেদের আপত্তির কথা জানিয়ে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। দলের পক্ষে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এই চিঠি দিয়েছেন।

নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণ আরও বেশি বাড়াতে একটি নতুন ভোটিং সিস্টেম চালু করতে চায় কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন (Election Commission of India)। ডিসেম্বর মাসে তাঁরা জানায় এই নতুন ভোটিং সিস্টেমের নাম ‘রিমোট ভোটিং সিস্টেম’। এই সিস্টেমের মাধ্যমে মাইগ্রেন্ট ভোটাররা (এক রাজ্যে ভোটার কর্মসূত্রে বা অন্য কারণে অন্য কোনো রাজ্যে রয়েছেন) নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। তার নির্বাচনী কেন্দ্রের ভোটের সময় অন্য রাজ্যে থেকেও তিনি যাতে ভোট দিতে পারেন, সেই কারণেই এই সিস্টেম চালু করতে চায় কমিশন। এই বিষয়ে বিভিন্ন স্বীকৃত রাজনৈতিক দলের মত জানতে চাওয়া হয়েছিলো‌। সেই মোতাবেক তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে দলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নির্বাচন কমিশনের সেক্রেটারিকে চিঠি দিয়ে নিজেদের আপত্তির কথা জানিয়েছেন। চিঠিতে অভিষেক ছয়টি প্রশ্নের উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন, ১) এক্ষেত্রে আদর্শ আচরণবিধি (Model Code of Conduct) কিভাবে পালন করা হবে।

অভিষেকের কথায়, এক রাজ্যে যখন নির্বাচন ঘোষণা করা হয় তখন সেখানে MCC লাগু হয়। কিন্তু কোনো মাইগ্রেন্ট ভোটার যদি এমন কোনো রাজ্যে থাকেন এবং সেখানে যদি MCC লাগু না করা থাকে তাহলে তো আদর্শ আচরণবিধির উদ্দেশ্য‌ই লঙ্ঘিত হবে।
দ্বিতীয় যে প্রশ্ন অভিষেক তুলেছেন তা হলো,
২) মাইগ্রেন্ট ভোটার যে রাজ্যে ভোট দেবেন সেখানকার শাসক দল (যদি তারা যেখানে ভোট হচ্ছে সেই রাজ্যের শাসক দলের বিরোধী পক্ষ হয়) সেই ভোটারকে ভয় দেখাতে পারে। সেই ভোটারের নিরাপত্তা কিভাবে সুরক্ষিত হবে ?
৩) ইভিএম (Electronic Voting Machine) এর নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা যাবে কিভাবে ? অভিষেকের কথায়, যে রাজ্যে ভোট ঘোষনা করা হয়েছে সেই রাজ্যের সব প্রশাসনিক ক্ষমতা চলে যায় নির্বাচন কমিশনের হাতে। কিন্তু মাইগ্রেন্ট ভোটার যে রাজ্যে ভোট দেবেন সেখানকার প্রশাসনিক ভার তো থাকবে সেই রাজ্য সরকারের হাতে। এক্ষেত্রে ইলেকশন কমিশনের ভূমিকা কি হবে ?
৪) এখনও আমাদের দেশে এমন অনেক জায়গা আছে যেখানে ইন্টারনেট পরিষেবা নেই। মোবাইল পরিষেবা নেই। সেখানে যদি কোনো মাইগ্রেন্ট ভোটার থাকে তাহলে সে তার নির্বাচনী কেন্দ্রের প্রার্থীদের সম্বন্ধে বিস্তারিত জানবেন কি করে। সেক্ষেত্রে সে তার পছন্দ অনুযায়ী ভোট দেবেন কি করে ? এই ধরনের মোট ছয়টি পদ্ধতিগত সমস্যার কথা তুলে ধরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর চিঠিতে লিখেছেন, ভোটারদের অংশগ্রহণ বাড়াতে কমিশনের আগ্রহকে তিনি সমর্থন করছেন। তবে ত্রুটিযুক্ত পদ্ধতি চাপিয়ে দেওয়া হলে ভবিষ্যতে তা বিফলে যাবে বলেই চিঠিতে উল্লেখ করেছেন অভিষেক। তৃণমূল কংগ্রেসের পাশাপাশি ইতিমধ্যেই কংগ্রেস, আপ সহ বেশকিছু রাজনৈতিক দল নিজেদের আপত্তির কথা কমিশনকে জানিয়েছে বলে খবর। যদিও ইলেকশন কমিশনের এক পদাধিকারির মতে এই ব্যবস্থা (Remote Voting System) লোকসভা নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলে অসুবিধা হবে না। কারণ হিসাবে তিনি বলেন, লোকসভা নির্বাচনে সারা দেশের জন্য‌ একসঙ্গে MCC লাগু হয়, সেখানে কোনো একটি বা দুটি রাজ্যের জন্য আলাদা আলাদা হয় না। আর অন্যান্য বিষয়গুলো নিয়েও কমিশন চিন্তাভাবনা করেছে। শুধুমাত্র নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করাই নয়, সেই সঙ্গে দেশের সর্বাধিক মানুষের অংশগ্রহণ‌ও নিশ্চিত করতে যা যা করার তা করবে কমিশন। তবে সব রাজনৈতিক দলের মত ও পরামর্শ নেওয়ার জন্য সময়সীমা ৩১ জানুয়ারি থেকে বাড়িয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি করার মধ্য দিয়ে কমিশন‌ও বিষয়টি নিয়ে আর‌ও বেশি ভাবনা চিন্তার পথেই হাঁটতে চাইছে বলে মত অনেকের।