Date : 2024-04-25

ধান খেতের ছয় ইঞ্চি জমা জলে ডুবে মৃত্যু! পুলিসি রিপোর্ট খারিজ করে সিআইডি তদন্তের নির্দেশ ।

ষষ্ঠী চট্টোপাধ্যায়, সাংবাদিক : ধান খেতের ছয় ইঞ্চি জমা জলে ডুবেই নাকি মৃত্যু! এক ব্যক্তির রহস্য মৃত্যুর ঘটনায় এমনই রিপোর্ট দিয়েছিল হুগলির খানাকুল থানা। অবশেষে সেই রিপোর্ট খারিজ করে ঘটনায় সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট।
মামলাকারী সউরিয়া বেগমের অভিযোগ ছিল, ২০২১ সালের ১৪ অক্টোবর তাঁর স্বামী হারুন অল রশিদকে ডেকে নিয়ে যায় মইদুল ইসলাম, শেখ সাবির আলি, শেখ সাবির , শেখ সাবির ও নুরেল ইসলাম নামে পাঁচ ব্যক্তি। সেদিন রাত্রে স্বামী আর বাড়ি ফেরেননি। পরদিন এলাকায় খোজ খবর করলেও স্বামীর কোনও খোঁজ না মেলায় খানাকুল থানায় নিঁখোজ ডায়েরি করেন সাউরিয়া। এরপর ১৬ তারিখ সকালে শেখ পিন্টু নামে এক ব্যক্তির ধানী জমিতে হারুনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। ঘটনায় অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে পুলিস। ময়না তদন্তের রিপোর্টে উদ্ধৃত করে পুলিস শেষমেশ এই সিদ্ধান্তে আসে যে দুর্ঘটনাবশত জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে হারুনের। উল্লেখ্য, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে উল্লেখ ছিল, জলে ডুবে যাওয়ার কারণে দেহে পুরোপুরি পচন ধরে গিয়েছিল। কিন্তু সউরিয়া বেগমের অভিযোগ, দেহ উদ্ধারের সময় তাতে একাধিক আঘাতের চিহ্ন ছিল। এবং তাঁর আরও অভিযোগ, ওই বছর আমফান ত্রানের অর্থ তছরুপ করেছিল মইদুল ইসলাম। সেই কথা জানতে পারেন তাঁর স্বামী। সেকারণে তাঁকে মেরে ফেলার হুমকি দিত মইদুল।
পুলিসি তদন্তে সন্তুষ্ট না হতে পেরে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন সাউরিয়া বেগম। বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এজলাসে মামলার শুনানিতে তাঁর আইনজীবী নিলাদ্রী শেখর ঘোষ ময়নাতদন্তের রিপোর্ট নিয়ে প্রশ্ন তুলে সওয়ালে বলেন, ময়না তদন্ত শেষ করতে অন্তত ৪ থেক পাঁচ ঘন্টা সময় লাগার কথা। এক্ষেত্রে মাত্র ১৫ মিনিটে গোটা প্রক্রিয়া শেষ করা হয়েছে। এছাড়াও মাথায় আঘাত থাকলে তাতে পচন ধরতে সময় ৩ থেকে ৪ দিন সময় লাগার কথা। আঘাত না থাকলে ৫ থেকে ৬ দিনে পচন ধরার কথা। এক্ষেত্রে মাথায় আঘাত না থাকলেও চিকিৎসকের মত অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টাতেই দেহ পচে গিয়েছে। পাশাপাশি ফরেন্সিক রিপোর্টেও কোনও কিছু উদ্ধার হয়নি। তাছাড়া যে জমিতে দেহ উদ্ধার হয়েছে সেখানে জলের উচ্চতা মাত্র ছয় ইঞ্চি। ফলে তদন্তে যথেষ্ট গাফিলতি রয়েছে বলে দাবী করেন নিলাদ্রীবাবু। তিনি আরও বলেন, আমফান ত্রানের অর্থ তছরুপের কথা জেনে ফেলার কারণেই আসলে হারুন রশিদকে খুন হতে হয়েছে। এই বক্তব্য শোনার পরই ঘটনায় সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দেন বিচারপতি মান্তা। বিচারপতির নির্দেশ, প্রয়োজনে দেহ কবর থেকে তুলে তদন্ত করবে সিআইডি। এছাড়াও তদন্তকারী পুলিস আধিকারিক ও যিনি ময়নাতদন্ত করেছিলেন, তাঁকে জেরা করে সিআইডিকে প্রাথমিক রিপোর্ট পেশ করতেও নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি।