সঞ্জু সুর, সাংবাদিক : সিভিক ভলান্টিয়াররা এবার সরাসরি পুলিশের কনস্টেবল পদে নিয়োগপত্র পেতে পারেন। পুলিশে নিয়োগের যোগ্যতামান পার করলে সরকারি চাকরি পেতে আর অসুবিধা হবে না রাজ্যের কয়েক হাজার সিভিক ভলান্টিয়ারদের। সোমবার নবান্নে এক বৈঠকে সিভিক ভলান্টিয়ারদের কনস্টেবল পদে নিয়োগের বিষয়ে নীতি তৈরির করার বিষয়টি দেখার জন্য স্বরাষ্ট্র দফতরকে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
পদোন্নতি ও অবসর, ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে অনেক সময়ই রাজ্য পুলিশের কনস্টেবল পদে শূণ্য পদ থেকে যায়। প্রথা মেনে সেই শূণ্য পদে নিয়োগও করা হয়। এবার সেই শূণ্য পদে নিয়োগের সময় সিভিক ভলান্টিয়ারদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। সোমবার নবান্নে এক বৈঠকে এই বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্ন সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে বলেছেন যেসব সিভিক ভলান্টিয়ার ভালো কাজ করছেন তাদের রাজ্য পুলিশের কনস্টেবল পদে চাকরি দেওয়া হোক। এই বিষয়ে স্বরাষ্ট্র দফতরকে নীতি তৈরির নির্দেশও তিনি দিয়েছেন বলে খবর। প্রথাগতভাবে পুলিশে নিয়োগের ক্ষেত্রে কয়েকটি যোগ্যতামান (Criteria) পার করতে হয়। শারীরিক যোগ্যতামান, লিখিত পরীক্ষা ও ইন্টারভিউ তে পাশ করার পরই কোনো প্রার্থী পুলিশে নিয়োগপত্র পেতে পারেন। সিভিক ভলান্টিয়ারদের ক্ষেত্রেও সেইসব যোগ্যতামান পার করলে তবেই তারা পুলিশের কনস্টেবল পদে নিয়োগপত্র পাবেন নাকি তারসঙ্গে অন্য কোনো যোগ্যতামান থাকবে, নাকি প্রথামাফিক পরীক্ষায় তাদের বসতে হবে না, এইসব নীতিগুলোই স্বরাষ্ট্র দফতর ঠিক করবে। তবে সবার আগে যেটা প্রয়োজন তা হলো সংশ্লিষ্ট সিভিক ভলান্টিয়ারের অতীত রেকর্ড দেখা হবে। তিনি যদি সিভিক ভলান্টিয়ার হিসাবে ভালো কাজ করে থাকেন এবং তার সংশ্লিষ্ট থানা ও জেলার পুলিশ সুপার যদি তার নাম সুপারিশ করে থাকে তাহলেই একমাত্র কনস্টেবল পদে নিয়োগে তার দাবি বিবেচিত হবে। এমনিতে সিভিক ভলান্টিয়ারদের কাজ নিয়ে অনেক সময়ই বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে দূর্ব্যবহার করা, নিজেদের হাতে আইন তুলে নেওয়া ইত্যাদি নানাবিধ অভিযোগ বারে বারেই উঠেছে সিভিক ভলান্টিয়ারদের ক্ষেত্রে। তবে রাজ্য পুলিশের শীর্ষ কর্তাদের অনেকেই মনে করেন এই অভিযোগের সারবত্তা থাকলেও তা সবার জন্য প্রযোজ্য নয়। সিভিক ভলান্টিয়াররা প্রচুর ভালো কাজও করেন এবং এদের সংখ্যাটাই বেশি। ফলে এদের সরাসরি কনস্টেবল পদে নিয়োগ করলে তাতে ভালো বই খারাপ হবে না। এদিকে নবান্নের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “আমার ধারণা পঞ্চায়েত ভোটের দিকে তাকিয়ে এটা একটা টোপ। সেই হিসাবে হঠাৎ তাঁর (মুখ্যমন্ত্রীর) মনে হয়েছে সিভিক ভলান্টিয়ারদের কনস্টেবল পদে উত্তীর্ণ করা হবে। আসলে সিভিক ভলান্টিয়ারদের তিনি পঞ্চায়েত ভোটে কাজে লাগাতে চান। আসলে পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের অবস্থা খুব একটা ভালো নয় এটা তিনি বুঝে গেছেন, তাই সিভিক ভলান্টিয়ারদের একটা টোপ দিয়ে তিনি কাজে লাগাতে চান।” প্রসঙ্গত এই মুহূর্তে রাজ্যে সিভিক ভলান্টিয়ারের সংখ্যা প্রায় কুড়ি হাজারের আশেপাশে। ট্রাফিক সামলানোর কাজ থেকে শুরু করে ছোটখাটো আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে তাদের ব্যবহার করা হয়। বেতন হিসাবে মাসের শেষে হাতে যা আসে তাতে সংসার চালানো সত্যিই যথেষ্ট কষ্টকর। কনস্টেবল পদে নিয়োগ পেলে তাদের বেতন একলাফে দ্বিগুণের বেশি হয়ে যাবে যা তাকে ও তার পরিবারকে কিছুটা স্বচ্ছলতার মুখ দেখাতে পারে বলেই মত অনেকের।