সঞ্জু সুর, সাংবাদিক ঃ অনুব্রত হীন বোলপুরের মাটিতে দাঁড়িয়ে তৃণমূল সুপ্রিমো জানিয়ে দিলেন এবার থেকে তিনি নিজেই বীরভূম জেলার দলীয় কাজ দেখবেন। ফিরহাদ হাকিম সহ জেলার নবগঠিত কোর কমিটি ও জেলার অন্য শীর্ষ নেতাদের সহযোগিতায় পঞ্চায়েত ভোটে ভালো ফল করার চ্যালেঞ্জও নিলেন তিনি।
২০২২ এর ১১ আগষ্ট কেন্দ্রীয় এজেন্সির হাতে গ্রেফতার হন বীরভূমের দোর্দন্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল। সেই থেকে তিনি জেল বন্দী। কবে ছাড়া পাবেন তা এখনও নিশ্চিত নয়। এই অবস্থায় দিন তিনেকের জন্য অনুব্রতর খাস তালুক বোলপুরে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর আগে যখনই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বোলপুরে এসেছেন বা বীরভূম জেলায় এসেছেন, তখন তাঁর সঙ্গে ছায়ার মতো সব সময় পাশে দেখা যেত কেষ্ট মন্ডলকে। এবার মুখ্যমন্ত্রীর এই জেলা সফরের কথা জানার পরেই সকলের ঔৎসুক্য ছিলো মুখ্যমন্ত্রী বোলপুরে এসে অনুব্রত মন্ডলকে নিয়ে কি বলেন। এমনিতে মুখ্যমন্ত্রীর আসার আগে তাঁকে স্বাগত জানাতে যত ব্যানার, ফেস্টুন টাঙানো হয়েছিলো তাতে কোথাও অনুব্রত মণ্ডলের ছবি ছিলো না।
তার উপর গত সোমবার দিদি নিজেই বৈঠক করে জেলার যে নতুন কোর কমিটি তৈরি করে দিয়েছেন সেই কমিটিতে ঠাঁই পেয়েছেন জেলায় অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে আদায়-কাঁচ কলায় সম্পর্ক থাকা নানুরের তৃণমূল নেতা কাজল শেখ। পাশাপাশি ঠাঁই পেয়েছেন কেষ্ট মন্ডলের সঙ্গে অম্ল মধুর সম্পর্ক থাকা তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়। নতুন এই কোর কমিটির গঠনই বলে দিচ্ছিল যে দল খুব ধীরে হলেও কেষ্ট মন্ডলের স্পর্শ কাটাতে চেষ্টা করছে। যদিও অনুব্রত মন্ডল গ্রেফতার হওয়ার পর কলকাতার এক সভায় তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, “ওকে বীরের মর্যাদা দিয়ে জেল থেকে ছাড়িয়ে আনুন।” যদিও তারপর বেশকিছুদিন কেটে গিয়েছে। কেন্দ্রীয় এজেন্সি খুব জোর চেষ্টা চালাচ্ছে অনুব্রত কে দিল্লি নিয়ে গিয়ে জেরা করতে। দলও বুঝতে পারছে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে অনুব্রত মণ্ডলের ছাড়া পাওয়ার সম্ভাবনা ক্রমশঃ কমছে। এদিকে নতুন করে কোর কমিটি গঠন করায় জেলায় অনুব্রত বিরোধীরা যথেষ্ট উৎফুল্ল হয়ে উঠেছিলো। উল্টোদিকে কেষ্ট অনুগামী শিবির কিছুটা ব্যাকফুটে চলে যায়। এমন অবস্থায় গোষ্ঠিদ্বন্দের কারণে নির্বাচনে যাতে খারাপ ফল না হয় তার জন্য দলনেত্রীকেই হাল ধরতে হল। বুধবার বোলপুরের ডাকবাংলো ময়দানের সভা থেকে সে কথাই বলে দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অনুব্রত মণ্ডলের নাম না করেই তিনি বলেন, “আমার দু’একজন নেতাকে জেলে পুরে রাখলেও, মনে রাখবেন ভোট দেন সাধারন মানুষ। ওকে তো এমনিতেই ইলেকশনের সময় ঘরের বাইরে বের হতে দিতেন না। এবার থেকে আমি নিজে বীরভূম টা দেখবো। কোর কমিটি আছে। আশীষ দা আছেন, জেলার অন্য সবাই আছে। ববি আমাকে সাহায্য করছে।” এরপরেই পঞ্চায়েত ভোটের কথা মাথায় রেখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমি চ্যালেঞ্জ নিলাম। বীরভূম আমি নিজে দেখবো। বারবার আসবো। এবার থেকে বীরভূম জেলায় যতদিন সে অ্যাবসেন্ট থাকবে, আমি নিজে দায়িত্ব নিয়ে দেখবো।” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বক্তব্যে একটা বিষয় পরিষ্কার যে কোর কমিটিতে কাজল শেখের অন্তর্ভূক্তির কারণে কেষ্ট শিবির যাতে মুছড়ে না পড়ে এবং দুদিক বজায় রেখেই পঞ্চায়েত ভোটে দল কাজ করে সেটা নিশ্চিত করা। অন্তত জেলা তৃণমূলের কয়েকজন নেতার তো তাই মত। তাঁদের বক্তব্য দিদি যখন নিজে দেখবেন বলেছেন, আর পাশাপাশি দুই শিবিরই যাতে ভোটে জোড়াফুলের হয়ে কাজ করে এখন থেকেই সেটা নিশ্চিত করতে চাইছেন।