Date : 2024-04-25

হলুদ ট্যাক্সি’ – কলকাতা পরিবহনের এক দীর্ঘ অধ্যায়।

শাহিনা ইয়াসমিন, সাংবাদিক :- চার চাকা তো ছিলই। এখন দুচাকার কাঁধে চড়ে গন্তব্যস্থলে পৌছাচ্ছেন মানুষ। বাইক ট্যাক্সি নামে প্রসিদ্ধ। অ্যাপ কাব্যের যুগে এক ক্লিকে পৌঁছানো যাচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। সেটা দু চাকাতে হোক বা চার চাকাতে। পরিস্থিতি পাল্টেছে। প্রযুক্তির সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে ধুঁকছে হলুদ ট্যাক্সি। সঙ্গে রয়েছে কত শত অভিযোগ। শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের ধুলো মেখে লড়াই করছে হলুদ ট্যাক্সি। কত সালে এই হলুদ ট্যাক্সি কলকাতার বুকে এসেছিল জানেন কি ? বই পড়ে ও ঘেঁটে যেটা জানা যাচ্ছে কলকাতার রাস্তায় প্রথম হলুদ ট্যাক্সি দেখা মেলে ১৯০৬ সালে। চৌরঙ্গী রোডে ছিল ফ্রেঞ্চ মোটরকার কোম্পানির অফিস। সেখান থেকে মিটারওয়ালা ওভারল্যান্ড গাড়ি যেত দমদম, ব্যারাকপুর, বজবজ। ভাড়া মাইল পিছু আট আনা। শহরের প্রথম বিখ্যাত ট্যাক্সি সংস্থা ‘ এ কোম্পানি ‘। তাদের ৮০ – ৯০ টি গাড়ি ছিল ‘এ’ নম্বরের।

শুরুর দিকে বাঙালিরাই ট্যাক্সি চালাতেন। কিন্তু তাদের উচ্ছৃঙ্খলা ক্রমে সীমাহীন হয়ে ওঠে। তার জেরেই শহর কলকাতায় শুরু হয় শিখ চালকদের আমদানি। ইরেজ আমলের শেষের দিকে ট্যাক্সি ভাড়া ছিল আট আনা। আর প্রত্যেক সিকি মাইল পিছু দু আনা করে। এক ঘন্টা অপেক্ষা করলে দিতে হতো ১ টাকা ১৪ আনা। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই ট্যাক্সি বাজার থেকে উধাও হয়ে যায়। আবির্ভাব ঘটে ব্রিটেনের সংস্থা মরিস মোটরস লিমিটেডের অক্সফোর্ড সিরিজ থ্রি মডেলের। পরে সেটা হিন্দুস্তান মোটরস স্বত্ব কিনে নেয়। উৎপাদন শুরু হয় হুগলির উত্তরপাড়ার (হিন্দ মোটর) কারখানা।

১৯৫৭ সালে বাজারে আসে অ্যাম্বাসাডর মার্ক ওয়ান। ক্যালকাটা ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশন সেটিকে ব্যবহারের জন্যে বেছে নেন। কলকাতার রাস্তায় হলুদ আর কালো ট্যাক্সি চালু হয় ১৯৬২ সালে। কালো ট্যাক্সি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উধাও হয়ে গেছে অনেক বছর আগে। ২০১৪ সালে হিন্দুস্তান মোটরস অ্যাম্বাসাডর উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। তবু বন্ধ হয়নি হলুদ ট্যাক্সি যাত্রা। কিন্তু আর কতদিন? ট্রাফিক আইন অনুযায়ী ১৫ বছর পর অর্থাৎ ২০২৯ সালে শেষ হবে শেষ লটের অ্যাম্বাসাডর গাড়ির মেয়াদ। ফলে যবনিকা পড়বে কলকাতা পরিবহনের এক দীর্ঘ অধ্যায়।