সঞ্জু সুর, সাংবাদিক ঃ ফরাক্কা ব্যারাজ অববাহিকায় গঙ্গার ভাঙ্গন ক্রমশঃ ভয়াবহ আকার ধারন করছে। এই ভাঙ্গন মোকাবিলায় কেন্দ্র নিঃশ্চুপ, এই অভিযোগ করে মুখ্যমন্ত্রী যখন ফের একবার একশো কোটি টাকা বরাদ্দ করলেন তখন এই জেলার জেলাশাসক হিসাবে কাজ করার পূর্বতন অভিজ্ঞতার নিরিখে এই সমস্যাকে জাতীয় সমস্যা হিসাবে চিহ্নিত করণের দাবি জানালেন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী।
বৃহস্পতিবার মালদহে প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠকেই গঙ্গার ভাঙ্গন নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মূলতঃ কেন্দ্রের উদাসীনতা নিয়েই আক্রমণ শানিয়েছিলেন তিনি। পাশাপাশি জানিয়েছিলেন আশু পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হচ্ছে। সেচ দফতরের মন্ত্রী পার্থ ভৌমিকের উপস্থিতিতে দফতরের সচিব প্রভাত মিশ্রকে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দেন, একটা দশ বছরের জন্য পরিকল্পনা করতে। মুখ্যসচিবকে মাথায় রেখে একটি কমিটিও গঠন করে দেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই ভাঙ্গন রোধে টাকা শুধু জলেই যাচ্ছে কিন্তু স্থায়ী সমাধান কিছু হচ্ছে না। মুখ্যমন্ত্রীর উপদেশ এমন একটা গাইডলাইন তৈরি করুন যাতে গঙ্গার পাড়ে অন্তত চার/পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে যাতে কেউ বসতবাড়ি না করে। কাউকে জোর করে উচ্ছেদ করা হবে না, কিন্তু মানুষকে বোঝাতে হবে জীবন আগে। যারা উঠে যাবেন তাদের জন্য সরকার অন্য জায়গায় জমির পাট্টা দিয়ে দেবে। শুক্রবারই মূর্শিদাবাদ জেলার সামশেরগঞ্জ বিধানসভার পাহাড়ঘাটি এলাকায় গিয়ে গঙ্গার ভাঙ্গন পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই এক অনুষ্ঠানে স্থানীয় এলাকার ৮৬ জনের হাতে পাট্টা তুলে দেন তিনি। বিভিন্ন সময়ে গঙ্গার ভাঙ্গনের ফলে এই মানুষগুলোর জমি বাড়ি তলিয়ে গিয়েছে।
এই অনুষ্ঠানেই রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী কিছুটা স্মৃতিচারণ করে বলেন, “একটা সময় আমি এই জেলার এডিএম ও পরে ডিএম হিসাবে কাজ করেছি। আমি জানি ফরাক্কা ব্যারাজ হওয়ার পর এই সামশেরগঞ্জ এলাকার ভাঙ্গন কতটা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।” একটা সময় রাজ্যের অর্থ সচিবের দায়িত্ব পালন করা হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী ভালো করেই জানেন রাজ্যের আর্থিক অবস্থা কেমন। সেই কারণেই তাঁর বক্তব্য, “রাজ্যের সীমিত অর্থে এই সমস্যা মেটানো সম্ভব নয়।” জেলাশাসক বা পরবর্তীকালে রাজ্যের মুখ্যসচিব হওয়ার পরেও এই সমস্যাকে জাতীয় সমস্যা হিসাবে দেখার জন্য কেন্দ্র সরকারকে যে বার বার জানানো হয়েছে সেকথাও জানান তিনি। এদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রের সরকারের দিকে তীব্র অভিযোগ হেনে বলেন, দেবেগৌড়া যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন সেই সময় যে জলচুক্তি হয় ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সেই চুক্তি অনুযায়ী রাজ্যকে ৭০০ কোটি টাকা দেওয়ার কথা। কিন্তু এতবছর কেটে গেলেও সেই টাকার কানাকড়ি এখনও এসে পৌঁছায়নি। পাশাপাশি এই এলাকার ভাঙ্গন রোধে সরকারের প্রয়াসের কথা বলতে গিয়ে তিনি জানান, সরকার বছরে হাজার কোটি টাকা খরচ করছে, কিন্তু আদপে তা জলেই ঢালা হচ্ছে। তিনি জানান এবার সরকার এই ভাঙ্গন রোধের স্থায়ী সমাধানের জন্য সচেষ্ট হচ্ছে। গতকাল মালদহে বলেছিলেন সামশেরগঞ্জ এলাকার দুটো ফেজের জন্য ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এদিন ভাঙ্গন এলাকা ঘুরে দেখার পর সেই টাকার পরিমান বাড়িয়ে দিয়ে একশো কোটি বরাদ্দের ঘোষনা করেন তিনি। সেই সঙ্গে আরও একবার স্থানীয় মানুষের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এখন থেকে কেউ আর গঙ্গার পাড়ে বাড়ি করবেন না, একটু দুরে দুরে বাড়ি করবেন।”