ষষ্ঠী চট্টোপাধ্যায়,সাংবাদিক : মামলার বয়ান অনুযায়ী মামলাকারী সরস্বতী আউলিয়া এবং সরোজিনী মন্ডলের পক্ষের আইনজীবী অভিষেক সিকদার ও সোহিনী দে আদালতে জানান উত্তর ২৪ পরগনার ক্যানিং মহকুমার গোসাবা ব্লকের রাধাকান্ত আউলিয়া ও শম্ভু মন্ডল দুজনেই বাঘের আক্রমণে মারা যান।১০ই অক্টোবর২০১৯ সালে সুন্দরবন কালিচর এলাকায় পঞ্চমুখানি -২ ফরেস্ট কম্পার্টমেন্ট জীবিকার প্রয়োজনে মাছ ধরতে গিয়ে বাঘের হানায় মৃত্যু হয় ২জনের।
শম্ভু মন্ডলী প্রথম বাঘের আক্রমণের শিকার হন। রাধাকান্ত আউলিয়া, তার বন্ধুকে বাঁচাতে গেলেও তিনিও প্রাণ হারান। শম্ভু মন্ডলের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয় এবং তার ময়নাতদন্ত করা হয়েছিল। কিন্তু রাধাকান্ত আউলিয়ার মৃতদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ঘটনার পরই বনদপ্তর, পুলিশ এবং পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে বিষয়টি জানানো হয় ।উভয় ব্যক্তিদের ডেথ সার্টিফিকেট এবং পুলিশি তদন্তের রিপোর্টে মৃত্যুর কারণ হিসেবে বাঘের আক্রমণ উল্লেখ করা ছিল।
২০২০ সালের ১লা জানুয়ারি থেকে উপরোক্ত ২ ব্যাঘ্র বিধবা বনদপ্তরের আধিকারিকদের কাছে একাধিকবার ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন করেছিলেন। তাদের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আইনের অধিকার থাকলেও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বনবিভাগ কর্তৃপক্ষ ক্ষতিপরণ দেয়নি।ফেব্রুয়ারি ২০২১ সালে একটি নোটিফিকেশন জারি হয় রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে।। সেখানে বলা হয়েছে যে বন্যপ্রাণীর আক্রমণে নিহতদের আইনি উত্তরাধিকারীরা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কিত প্রমাণ সাপেক্ষে ক্ষতিপূরণ হিসেবে পাঁচ লক্ষ টাকা পাবেন।
রাজ্যের এই বনদপ্তরের আইন এবং তাদের প্রচেষ্টা সত্বেও বনদপ্তরের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। তাই সরোজিনী মন্ডল এবং সরস্বতী আউলিয়া উভয়েই এই অঞ্চলের অন্যান্য ব্যাঘ্র বিধবাদের পশ্চিমবঙ্গের মহিলা কমিশনের দ্বারস্থ হন। যেখানে মৃত্যুর তিন বছর পর বনদপ্তর অবশেষে লিখিতভাবে তাদের ক্ষতিপূরণের দাবি প্রত্যাখ্যান করেন বলে জানায়। এই যুক্তি দেখিয়ে মৃত ব্যক্তিরা সুন্দরবন বনাঞ্চলে “নিষিদ্ধ এলাকায়” প্রবেশ করেছিল।
সরোজিনী মন্ডল ও সরস্বতী আউলিয়া উভয়ই কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যের এজলাসে মামলাকারীদের পক্ষে আইনজীবীরা জানান রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ২০২১ সালে যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল সেই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী বন্যপ্রাণীদের হাতে আক্রমণ বা মৃত্যুর ঘটনায় সংশ্লিষ্ট পরিবার আর্থিকভাবে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকারী। মামলার শুনানি শেষে সুন্দরবন টাইগার রিজার্ভ অন্তর্গত ফিল্ড ডিরেক্টর কে নির্দেশ দেন আগামী ১৪ দিনের মধ্যে মামলাকারীদের ক্ষতিপূরণের পুরো টাকা দিতে হবে।